চুয়াডাঙ্গা ১০:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নির্বাচন কমিশনকে যেসব পরামর্শ দিলেন সাংবাদিকরা

Padma Sangbad

অনলাইন ডেস্ক।।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রেখে পত্রিকা ও অনলাইন নিউজপোর্টালের সম্পাদক ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে আজ সোমবার সংলাপ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সাংবাদিকরা ইসির কাছে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নিজেদের নানা প্রত্যাশা ও উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন। দিয়েছেন নানা পরামর্শও।

আজ বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা উপস্থিত ছিলেন।

কালের কণ্ঠের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ ইসির উদ্দেশে বলেন, ‘প্রত্যাশা থাকবে আপনারা মেরুদণ্ড সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব হিসেবে জাতির কাছে পৌঁছাবেন। এটি দেশকে নতুন করে গড়ার একটি বিরল সুযোগ। যা হয়তো ৫০ বা ১০০ বছরে আসবে না। ’তিনি ইসির প্রস্তুতি ডু অর ডাই মনোভাব নিয়ে দৃঢ়তার পরিচয় দেওয়ার আহ্বান জানান।

নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে ইসির প্রতি কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেন তিনি। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, তরুণ এবং গণ্যমান্য শিক্ষকদের নিয়ে একটি নজরদারি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন হাসান হাফিজ। তার মতে, এটি নির্বাচন কমিশনের কাজ অনেকাংশে সহজ করবে এবং সবার মধ্যে দায়িত্ববোধ তৈরি হবে। এ ছাড়া তিনি সাইবার নজরদারি বাড়ানোর ওপর জোর দেন।

প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, জাতি ১৫ বছর পর একটি স্বচ্ছ ও আনন্দময় নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে, এবারের নির্বাচনে অর্থ ও পেশিশক্তির ব্যাপক প্রয়োগের আশঙ্কা রয়েছে। প্রশাসনের দুর্বলতা ও আন্ডারহ্যান্ডলিংয়ের মাধ্যমে প্রার্থী কেনা-বেচার মতো বিষয়গুলো নিয়ে ইসির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

ডিজিটাল স্পেসে অর্থ প্রয়োগের মাধ্যমে জনমত তৈরির বিষয়টি তুলে ধরে সাজ্জাদ শরিফ বলেন, সাবেক ক্ষমতাসীন দল একটি বিরাট ডিজিটাল বাহিনী গড়ে তুলেছিল এবং এবারের নির্বাচনে এর ব্যাপক ব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে।

হলফনামা ও নির্বাচনী ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ইসিকে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে এবং দু-একটি ক্ষেত্রে নজির স্থাপন করে নৈতিক শক্তির পরিচয় দিতে হবে।

আজকের পত্রিকার সম্পাদক কামরুল হাসান প্রার্থীর হলফনামা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা ওয়েবসাইটে আপলোড করার দাবি জানিয়ে বলেন, এতে ভোটাররা প্রার্থীর সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য দ্রুত জানতে পারবে। একই সঙ্গে তিনি নির্বাচন কমিশনকে কোনো ধরনের গোপন নির্দেশনা না দেওয়ার অনুরোধ করেন, যা স্বচ্ছ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিকে ক্ষুণ্ন করতে পারে।

ডেইলি স্টারের হেড অব নিউজ জিয়াউল হক ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের অবাধ প্রবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান। তিনি বলেন, সাংবাদিকরা যেন ভোটকেন্দ্রের ভেতরে কোনো ধরনের বাধা বা হয়রানির শিকার না হন এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।

বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ বলেন, ‘আমরা আশা করব, নির্বাচনের আগে যে অর্থের খেলা শুরু হয়-মনোনয়ন বাণিজ্য, ভোট কেনা, এমনকি কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করার মতো কর্মকাণ্ড-এসব কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। যারা এখন থেকেই ভাবছেন মনোনয়ন কিনবেন, ভোট কিনবেন, কিংবা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কিনে ফেলবেন, তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনকে তফসিলের পর থেকেই আইন প্রয়োগ করতে হবে। তাহলেই আমরা অন্তত একটি অর্থবহ সংসদ পাব।’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-এর সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু বলেন, ‘যে সরকার ক্ষমতায় রয়েছে, তাদের আগামী নির্বাচন করার ইচ্ছা নেই বা ক্ষমতায় আসার ইচ্ছা নেই। তাই অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কোনো বাধা নেই। এখন যারা নির্বাচনে অংশীজন, তারা কীভাবে অংশ নেবে তার ওপর আগামী নির্বাচন নির্ভর করবে।’

ঢাকা মেইলের নির্বাহী সম্পাদক হারুন জামিল বলেন, ‘বিগত তিনটা নির্বাচন ভোটার ছাড়া নির্বাচন হওয়ার কারণে নির্বাচনের ওপরে মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। এ আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারলে নির্বাচন কমিশন সফল হবে। আমাদের দেশে নির্বাচন ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো গত তিনটা নির্বাচন মানে ভোটার ছাড়া নির্বাচন হওয়ার কারণে নির্বাচনের উপরে মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশনের প্রথমেই উচিত আস্থাটা ফিরিয়ে আনা।’

আপডেট : ১২:২৬:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫

নির্বাচন কমিশনকে যেসব পরামর্শ দিলেন সাংবাদিকরা

আপডেট : ১২:২৬:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫

অনলাইন ডেস্ক।।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রেখে পত্রিকা ও অনলাইন নিউজপোর্টালের সম্পাদক ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে আজ সোমবার সংলাপ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সাংবাদিকরা ইসির কাছে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নিজেদের নানা প্রত্যাশা ও উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন। দিয়েছেন নানা পরামর্শও।

আজ বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা উপস্থিত ছিলেন।

কালের কণ্ঠের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ ইসির উদ্দেশে বলেন, ‘প্রত্যাশা থাকবে আপনারা মেরুদণ্ড সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব হিসেবে জাতির কাছে পৌঁছাবেন। এটি দেশকে নতুন করে গড়ার একটি বিরল সুযোগ। যা হয়তো ৫০ বা ১০০ বছরে আসবে না। ’তিনি ইসির প্রস্তুতি ডু অর ডাই মনোভাব নিয়ে দৃঢ়তার পরিচয় দেওয়ার আহ্বান জানান।

নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে ইসির প্রতি কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেন তিনি। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, তরুণ এবং গণ্যমান্য শিক্ষকদের নিয়ে একটি নজরদারি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন হাসান হাফিজ। তার মতে, এটি নির্বাচন কমিশনের কাজ অনেকাংশে সহজ করবে এবং সবার মধ্যে দায়িত্ববোধ তৈরি হবে। এ ছাড়া তিনি সাইবার নজরদারি বাড়ানোর ওপর জোর দেন।

প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, জাতি ১৫ বছর পর একটি স্বচ্ছ ও আনন্দময় নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে, এবারের নির্বাচনে অর্থ ও পেশিশক্তির ব্যাপক প্রয়োগের আশঙ্কা রয়েছে। প্রশাসনের দুর্বলতা ও আন্ডারহ্যান্ডলিংয়ের মাধ্যমে প্রার্থী কেনা-বেচার মতো বিষয়গুলো নিয়ে ইসির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

ডিজিটাল স্পেসে অর্থ প্রয়োগের মাধ্যমে জনমত তৈরির বিষয়টি তুলে ধরে সাজ্জাদ শরিফ বলেন, সাবেক ক্ষমতাসীন দল একটি বিরাট ডিজিটাল বাহিনী গড়ে তুলেছিল এবং এবারের নির্বাচনে এর ব্যাপক ব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে।

হলফনামা ও নির্বাচনী ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ইসিকে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে এবং দু-একটি ক্ষেত্রে নজির স্থাপন করে নৈতিক শক্তির পরিচয় দিতে হবে।

আজকের পত্রিকার সম্পাদক কামরুল হাসান প্রার্থীর হলফনামা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা ওয়েবসাইটে আপলোড করার দাবি জানিয়ে বলেন, এতে ভোটাররা প্রার্থীর সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য দ্রুত জানতে পারবে। একই সঙ্গে তিনি নির্বাচন কমিশনকে কোনো ধরনের গোপন নির্দেশনা না দেওয়ার অনুরোধ করেন, যা স্বচ্ছ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিকে ক্ষুণ্ন করতে পারে।

ডেইলি স্টারের হেড অব নিউজ জিয়াউল হক ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের অবাধ প্রবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানান। তিনি বলেন, সাংবাদিকরা যেন ভোটকেন্দ্রের ভেতরে কোনো ধরনের বাধা বা হয়রানির শিকার না হন এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।

বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ বলেন, ‘আমরা আশা করব, নির্বাচনের আগে যে অর্থের খেলা শুরু হয়-মনোনয়ন বাণিজ্য, ভোট কেনা, এমনকি কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করার মতো কর্মকাণ্ড-এসব কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। যারা এখন থেকেই ভাবছেন মনোনয়ন কিনবেন, ভোট কিনবেন, কিংবা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কিনে ফেলবেন, তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনকে তফসিলের পর থেকেই আইন প্রয়োগ করতে হবে। তাহলেই আমরা অন্তত একটি অর্থবহ সংসদ পাব।’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-এর সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু বলেন, ‘যে সরকার ক্ষমতায় রয়েছে, তাদের আগামী নির্বাচন করার ইচ্ছা নেই বা ক্ষমতায় আসার ইচ্ছা নেই। তাই অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কোনো বাধা নেই। এখন যারা নির্বাচনে অংশীজন, তারা কীভাবে অংশ নেবে তার ওপর আগামী নির্বাচন নির্ভর করবে।’

ঢাকা মেইলের নির্বাহী সম্পাদক হারুন জামিল বলেন, ‘বিগত তিনটা নির্বাচন ভোটার ছাড়া নির্বাচন হওয়ার কারণে নির্বাচনের ওপরে মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। এ আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারলে নির্বাচন কমিশন সফল হবে। আমাদের দেশে নির্বাচন ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো গত তিনটা নির্বাচন মানে ভোটার ছাড়া নির্বাচন হওয়ার কারণে নির্বাচনের উপরে মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশনের প্রথমেই উচিত আস্থাটা ফিরিয়ে আনা।’