April 20, 2024, 6:33 am

গৃহহীন ৭০ হাজার পরিবার পাচ্ছে স্বপ্নের আপনালয়

অনলাইন ডেস্ক।
ইতিহাসের অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা : এনামুল হক শামীম
‘পিতা মুজিবের মতো এ দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য সংগ্রাম করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিশ্বাসী, যা বলেন তাই করেন। তিনি বলেছেন, একজন মানুষও ভূমিহীন থাকবে না। মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে গৃহহীন পরিবারের মধ্যে জমিসহ ৯ লাখ বাড়ি প্রদান করছেন। এটি ইতিহাসের অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।’ দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য গৃহ প্রদান নীতিমালার প্রথম ধাপে ৬৯ হাজার ৯০৪ পরিবারের মাঝে জমিসহ বাড়ি হস্তান্তর বিষয়ে জানতে চাইলে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম এমপি। শুধু তিনি নন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে জমিসহ পাকাবাড়ি দেয়া প্রশংসা পেয়েছে সর্বমহলে।
সুবিশাল আকাশের নিচে নিজের একখণ্ড জমি আর মাথার উপরে একটু ছাউনি ভূমিহীন, গৃহহীনদের শত বছরের স্বপ্ন। সে স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ ২৩ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় ভিডিও কনফারেন্সে উদ্বোধনের মাধ্যমে সারা দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে প্রথম ধাপের বাড়ি হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘আশ্রয়ণের অধিকার শেখ হাসিনার উপহার’ স্লোগানে প্রথম পর্যায়ে ৬৬ হাজার ১৮৯টি পরিবারের প্রত্যেককে দুই শতক খাসজমি বন্দোবস্ত দেয়াসহ দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সেমিপাকা ঘরের চাবি তুলে দেয়া হবে। এ ছাড়াও ২১ জেলার ৩৬ উপজেলার ৪৪টি প্রকল্পে তিন হাজার ৭১৫টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। অর্থাৎ ৬৯ হাজার ৯০৪ ভূমিহীন, গৃহহীন পরিবার আজ আপন ঠিকানা পাচ্ছে। দ্বি-কক্ষের বাড়িতে দুটি বেডরুম, একটি টয়লেট ও একটি সংযোগ বারান্দা রয়েছে। যেখানে তারা গড়ে তুলবেন শান্তির নীড় আর কৃতজ্ঞ থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর প্রতি।
বাগেরহাট জেলার উপকূলীয় উপজেলা শরণখোলার বেলুকা বেগম। স্বামীহারা হয়ে পাঁচ সন্তান নিয়ে দুর্বিষহ জীবন। নেই ভিটেমাটি, নেই আবাদি কোনো জমি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বদৌলতে নতুন স্বপ্ন এখন বেলুকা বেগমের চোখে-মুখে। প্রথম ধাপে দেয়াল ঘেরা নিজ বাড়ি পাচ্ছেন তিনি। জানতে চাইলে আনন্দাশ্রু নয়নে বেলুকা বেগম বলেন, ‘সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে মানুষের দ্বারে দ্বারে কাজ করে জীবন চালাই। কখনো এখানে, কখনো সেখানে থাকি।’ পরের বাড়ি কাজ করে, পরের জায়গায় থেকে মেয়েদের বিয়ে দেন। ছেলেদেরও কাজে লাগিয়ে দেন। কিন্তু তাতে তো খাবার জোটে; ঠাঁই হয় না। এমন কষ্টের মাঝেই শোনেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘর করে দিচ্ছেন। ইউএনওর কাছে নিজের জীবনের গল্প বলতেই তাকে জায়গা বরাদ্দ দিয়ে ঘর করে দেয়া হয়। ‘এখন অন্তত মাথা গোঁজার ঠাঁই পাইছি।’ এ জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় সূত্র মতে, গত ১২ বছরে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তার দূরদর্শী নেতৃত্বেই গ্রামীণ অবকাঠামো, খাদ্য নিরাপত্তা, শান্তি চুক্তি, সমুদ্র বিজয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতি, নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক উন্নতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। দেশে চলমান এমন উন্নয়নের মাঝেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন, মুজিববর্ষে দেশে কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না। সরকার সব ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষকে ঘর তৈরি করে দেবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী (মুজিববর্ষেই) ওই প্রকল্পে বাস্তবায়ন করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে ছিলেন সরকারপ্রধান। এরপরই হতদরিদ্রদের জন্য দুর্যোগ-সহনীয় বাড়ি দেয়ার প্রকল্পটি মুজিববর্ষ উপলক্ষে কর্মসূচি হিসেবে ঘোষণা দেয়ার প্রস্তাবনা দেয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। প্রথমে তাদের লক্ষ্য ছিলো প্রতিটি গ্রামের একজন করে মোট ৬৮ হাজার ৩৮টি পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হবে। দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবটি বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ ও গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের কর্মকর্তাদের নিয়ে ৩ মার্চ একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করে। ‘ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য গৃহ প্রদান নীতিমালা-২০২০’ প্রণয়ন করা হয়। নীতিমালার নির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশে আট লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি বাড়ি দেয়া হবে। জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে বাংলাদেশের সকল গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী বর্তমানে দেশে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা দুই লাখ ৯৩ হাজার ৩৬১ এবং ‘যার জমি আছে কিন্তু ঘর নাই’ এমন পরিবারের সংখ্যা পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ২৬১।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, সারা দেশে প্রায় আট লাখ ৮৫ হাজারের বেশি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের মধ্যে ঢাকা বিভাগে এক লাখ ২৯ হাজার ১৯৭, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৬ হাজার তিনটি, চট্টগ্রাম বিভাগে এক লাখ ৬১ হাজার ২৯৭, রংপুর বিভাগে এক লাখ ৮৩ হাজার ৮৩৪, রাজশাহী বিভাগে ৯৬ হাজার ৫০৪, খুলনা বিভাগে এক লাখ ৪২ হাজার ৪১১, বরিশাল বিভাগে ৮০ হাজার ৫৮৪ এবং সিলেট বিভাগে ৫৫ হাজার ৬২২টি পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে জমি ও ঘর নেই এমন পরিবারের পাশাপাশি ১০ শতাংশ জমি আছে কিন্তু জরাজীর্ণ বাড়ি এমনও পরিবার রয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী (মুজিববর্ষ) উপলক্ষে তালিকায় থাকা ওই সব ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে ঘর করে দিচ্ছে সরকার। ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও ঘর দেয়ার ঘটনা বিশ্বে এটাই প্রথম। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে ২৪ হাজার ৫৩৮টি পরিবারের জন্য মোট বরাদ্দ ৪১৯ দশমিক ৬০ কোটি টাকা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৩৮ হাজার ৫৮৬টি ঘর বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৫৯ দশমিক ৮২ কোটি টাকা। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে গুচ্ছগ্রাম দ্বিতীয় পর্যায়ে সিভিআরপি প্রকল্পের আওতায় তিন হাজার ৬৫টি ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে। এ খাতে বরাদ্দ ৫২ দশমিক ৪১ কোটি টাকা। অতিরিক্ত পরিবহন বাবদ বরাদ্দ (প্রতিটি ঘরের জন্য চার হাজার টাকা) মোট ২৬ দশমিক ৪৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া সারা দেশের সব উপজেলায় জ্বালানি বাবদ বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১০ দশমিক ৪০ কোটি টাকা। মোট ৬৬ হাজার ১৮৯টি পরিবারের ঘরের জন্য বরাদ্দ ১১৬৮ দশমিক ৭১ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প একক গৃহ নির্মাণের সামগ্রিক কার্যক্রম সমন্বয় করছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির মাধ্যমে একক গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে। তথ্য মতে, দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে তিন হাজার ২২টি গৃহহীন ও উপকারভোগী পরিবারের মাঝে আনুষ্ঠানিকভাবে বাড়ির কাগজপত্র হস্তান্তর করা হবে। দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল আলম জানান, দিনাজপুর জেলায় মোট ১৩ হাজার ২১টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এসব গৃহের মধ্যে পাঁচ বা ততোধিক গৃহ যেসব স্থানে গুচ্ছ আকারে নির্মিত হচ্ছে, সেসব স্থানকে ‘জয় বাংলা ভিলেজ’ নামে নামকরণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মোট ১৭২টি ‘জয় বাংলা ভিলেজ’ গড়ে উঠছে।
শরীয়তপুর জেলায় ৬৯৯টি ভূমিহীন ও গৃহহীন অসহায় পরিবারের ঘর হস্তান্তর করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান। পিরোজপুর জেলায় এক হাজার ১৭৫টি গৃহ নির্মাণ করে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের মাঝে বিতরণ করা হবে। ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম জানান, ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের মাঝে গৃহ হস্তান্তরের জন্য প্রথম পর্যায়ে জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৭৯২টি গৃহনির্মাণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে এক হাজার ২১৭টি গৃহের জমি নির্বাচন ও নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে হবিগঞ্জ জেলার ৭৮৭টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পাচ্ছেন নতুন ঘর। সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলায় চার হাজার ১৭৮টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার মুজিববর্ষ উপলক্ষে পাচ্ছেন নতুন ঠিকানা। ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী জানান, জেলার ৪৭৪ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার ঘর পাচ্ছে। ইতোমধ্যে ২৩০টি ঘর বসবাসের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ঝালকাঠি সদর উপজেলায় ৬৫টি, নলছিটি উপজেলায় ৪০টি, রাজাপুর উপজেলায় ৭৫টি এবং কাঁঠালিয়া উপজেলায় ৫০টি পরিবার পাচ্ছে বসতঘর। সাতক্ষীরা জেলার ঘর পাচ্ছেন এক হাজার ১৪৯টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার। খুলনা জেলার ৯টি উপজেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পাঁচ হাজার ৮৮টি পরিবারকে পর্যায়ক্রমে গৃহ প্রদান করা হবে। প্রথম পর্যায়ে ৯২২টি পরিবারকে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট নবনির্মিত ঘরসহ জমি প্রদান করা হবে। নোয়াখালী জেলায় প্রথম পর্যায়ে ভূমিহীন ও গৃহহীন ১৫০টি গৃহহীন পরিবার পাচ্ছে সরকারি ঘর। ৯ উপজেলার ভূমিহীনদের জন্য বরাদ্ধকৃত ৮৫৫টি ঘরের অবশিষ্ট আরো ৭০৫টি ঘর ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীর আগেই গৃহহীনদের মাঝে হস্তান্তর করা হবে।
বগুড়া জেলায় ১২টি উপজেলায় এক হাজার ৭০২টি পরিবার এক হাজার ৪৫২টি ঘর পচ্ছে। ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের নিকট ঘর হস্তান্তর করা হবে। জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক জানান, বগুড়ার ১২টি উপজেলায় মোট এক হাজার ৪৫২টি গৃহের মধ্যে বগুড়া সদরে ২৫০টি শাজাহানপুরে ১৫টি শেরপুরে ২৬৩টি, ধুনটে ১০১টি, সারিয়াকান্দিতে ১০৭টি, সোনাতলায় ১২৫টি, গাবতলীতে ৪৫টি, শিবগঞ্জে ১৮০টি, আদমদিঘীতে ১০০টি, দুপচাঁচিয়ায় ১৩৩টি, কাহালুতে ৭৭টি, নন্দ্রীগামে ১৫৬টি গৃহ প্রদান করা হবে। রাজশাহী বিভাগের মধ্যে বগুড়ায় সর্বোচ্চ গৃহ পাবে বগুড়ার গৃহহীন মানুষ। নেত্রকোনা জেলার ১০টি উপজেলায় মোট ১০ হাজার ৩০টি পরিবারকে ঘর দেয়া হবে। কুমিল্লায় প্রথম পর্যায়ে ৩৫৯ জন ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ৩৫৯টি নবনির্মিত ঘর হস্তান্তর করা হবে। গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষে জেলায় মোট ২৮৫টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য গৃহ নির্মাণের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ২১০টি ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ৭৫টি গৃহ বরাদ্দ পাওয়া গেছে। প্রথম পর্যায়ে ২১০টি ঘরের মধ্যে গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ১০০টি, কালিয়াকৈর উপজেলায় ৯০টি ও শ্রীপুর উপজেলায় ২০টি গৃহ বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে কাপাসিয়ায় ৪২টি, কালিয়াকৈর উপজেলায় ৫৫টি ও শ্রীপুর উপজেলায় ২০টি গৃহ নির্মাণ সমাপ্ত হয়েছে। এসব গৃহ উপকারভোগীদের নামে কবুলিয়ত দলিল ও নামজারি সম্পন্ন করা হয়েছে। নাটোর জেলায় ৫৫৮টি সেমিপাকা গৃহ ভূমিহীন ও গৃহহীনদের নিকট নতুন ঘর হস্তান্তর করা হবে আজ। ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার ২০০ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য নির্মিত হচ্ছে আধাপাকা ঘর ‘স্বপ্ননীড়’। বাগেরহাট বাগেরহাট জেলা প্রশাসক আনম ফয়জুল হক জানান, জেলায় গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য ৪১৫টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। পঞ্চগড় জেলার ৪৩টি ইউনিয়নে এক হাজার ৫৭টি ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য তৈরি করা হয়েছে পাকা বাড়ি। সদর উপজেলায় ২০৮টি, দেবীগঞ্জ উপজেলায় ৫৮২টি, বোদা উপজেলায় ৫৫টি, তেঁতুলিয়া উপজেলায় ১৪২টি, আটোয়ারী উপজেলায় ৭০টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হবে।
কুড়িগ্রাম জেলায় দেড় হাজার ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষ জমিসহ নতুন ঘর পাচ্ছেন। জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, রাজীবপুরে ৩০০টি, কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর ও ভুরুঙ্গামারীতে ২০০টি করে পরিবার ছাড়াও রাজারহাটে ৭০টি, চিলমারীতে ১০০টি, নাগেশ্বরীতে ২৬৪টি, ফুলবাড়ীতে ১৬৫টি ও রৌমারীতে ৫০টি পরিবারসহ মোট এক হাজার ৫৪৯টি পরিবার এই সুবিধা পাচ্ছেন। এতে মোট ৪৯ দশমিক ৬৭ একর খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ৬৬৭ গৃহহীন পরিবার নতুন ঘর পাচ্ছে। জেলার পাঁচটি উপজেলায় বরাদ্দকৃত ৬৬৭টি ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৩৪৬টি পরিবারকে নতুন ঘর দেয়া হচ্ছে। শেরপুরে জেলায় এক হাজার ৩৩৩ জন ভূমি ও গৃহহীন পাচ্ছেন নতুন ঠিকানা। এক হাজার ৩৩৩টি ঘরের মধ্যে সদর উপজেলায় ৩০২টি, নালিতাবাড়ীতে ২২০টি, নকলায় ৩৩৫টি, শ্রীবরদীতে ২৬৭টি এবং ঝিনাইগাতীতে ২০৯টি পরিবার পাবেন সরকারি এই ঘর। ইতোমধ্যেই ২০৭টি ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। গোপালগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক কাজী শহিদুল ইসলাম জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৭৮৭টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার বসতবাড়ি পাচ্ছে। নীলফামারী জেলায় ৬৩৭টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার। মেহেরপুর জেলার ভূমিহীন ও গৃহহীন ২৮টি পরিবারকে জমিসহ ঘর দেয়া হবে বলে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান জানান। বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি জানান, বান্দরবান পার্বত্য জেলায় ছয় হাজার ৮৬৭ জন ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের তালিকা করা হয়েছে এবং প্রথম পর্যায়ে দুই হাজার ১৩৪টি বাড়ি তৈরির কাজ চলমান রয়েছে এবং প্রথমে তৈরিকৃত ৩৩৯টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও ঘর দেয়া হবে এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্যদের এই সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক মো. শরীফুল ইসলাম জানান, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় জেলার পাঁচটি উপজেলার ১৬০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার নতুন বাড়ি পাচ্ছে। বরাদ্দপ্রাপ্তদের মধ্যে জেলার সদর উপজেলায় ৪৬টি, পাঁচবিবি উপজেলায় ৪৫টি, আক্কেলপুর উপজেলায় ২১টি, কালাই উপজেলায় ৪০টি ও ক্ষেতলাল উপজেলায় আাাটটি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার রয়েছে। নড়াইল জেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য পাঁচ কোটি ৫৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩২৫টি বাড়ি নির্মিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১০৫টি বাড়ি নির্মাণের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। আরও ২২০টি বাড়ি ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নির্মাণ করা হবে বলে জানালেন নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কথা দিয়েছিলেন, এ দেশের কোনো মানুষ গৃহহীন থাকবে না। কেউ ঠিকানাহীন থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা অনুযায়ী মুজিববর্ষ উপলক্ষে সারা দেশে সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ৯ লাখ বাড়ি নির্মাণ করে গৃহহীন পরিবারের মধ্যে বরাদ্দ দেয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এরই অংশ হিসেবে প্রথম পর্যায়ে শনিবার প্রথম ধাপের ৬৯ হাজার ঘর হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী। এই কাজের মধ্যদিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা আরও একধাপ এগিয়ে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :