অনলাইন ডেস্ক। ।
দীর্ঘ পাঁচ দশক সামরিক শাসনের পর মিয়ানমারে দ্বিতীয়বার অনুষ্ঠিত হচ্ছে সাধারণ নির্বাচন। রোববার সকালে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ভোটগ্রহণ ছিল অনেকটা শান্তিপূর্ণ। ভোটারদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। ইয়াংগুনের পাশের শহরতলী ওক্কালাপাতে ছিল মাস্ক ও ফেস শিল্ড পরিহিত ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাসহ সংখ্যালঘুরা বাদ পড়ায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সেনাবাহিনী তাদের সমর্থিত দলকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সেনাবাহিনী প্রধান মিং অং হ্লাই ফলাফল যা-ই হোক মেনে নেয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন। এএফপি, মিয়ানমার টাইমস ও আলজাজিরা।
নির্বাচনে অং সান সু চির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসিসহ জাতীয় পর্যায়ে দুটি দল অংশ নিচ্ছে। তবে আঞ্চলিক পর্যায়ে অংশগ্রহণ করছে ৯২টি দল। যদিও সুচির প্রধান প্রতিপক্ষ দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি করোনার কারণে নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছিল।
ভোটরদের বক্তব্যের সূত্রে আলজাজিরা জানায়, নির্বাচনে এবারও অং সান সু চির দলের জয়লাভের সম্ভাবনা খুব বেশি।
এদিকে ভোটার হিসেবে ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষ ভোট দেয়ার সুযোগ পেলেও তা থেকে বঞ্চিত হতে চলেছেন রোহিঙ্গাসহ সংখ্যালঘুরা। যাদের সংখ্যা ২৬ লাখের অধিক। যে কারণে মিয়ানমারের নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না।
এ প্রসঙ্গে ‘ফরটিফাই রাইটস’-এর প্রধান মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ জন কিনলি জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের ভোটাধিকার দেয়া হচ্ছে না শুধু তা-ই নয়, রোহিঙ্গা রাজনৈতিক দলগুলোকেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেয়া হচ্ছে না। শুধু জাতিগত পরিচয়ের কারণে এসব সাহসী, বুদ্ধিদীপ্ত ও যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা হচ্ছে।
ধারণা করা হচ্ছে, ২০১৫ সালের মতো এবারও ক্ষমতায় আসতে চলেছে সু চির দল। যে দলের প্রধান সু চি শান্তিতে নোবেল জয় করেছেন। কিন্তু তিনি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার অভিযোগ ওঠে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচিত হন। এখন আর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সু চি গণতন্ত্রের আদর্শ বলে বিবেচিত হন না। তবে গত বছর হেগের আদালতে ‘রোহিঙ্গা গণহত্যা’র অভিযোগ প্রশ্নে মিয়ানমারের পক্ষে সাফাই গাওয়ার পর দেশের ভেতরে তার জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে। সেটাই তার এ নির্বাচনের সম্বল। আর রোহিঙ্গাদের নিপীড়িত হওয়ার বাস্তবতা বয়ে বেড়ানোর শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। এবারের নির্বাচনে ৫০ লাখ তরুণ প্রথমবার ভোট দেবেন। তবে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ভোটারকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেয়া হচ্ছে না নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কথা জানিয়ে।
ভোটাধিকারবঞ্চিত হওয়া এসব মানুষের মধ্যে অনেক রাখাইন বৌদ্ধও রয়েছেন, যারা ২০১৫ সালে ভোট দিতে পারলেও এবার পারছেন না। এর পাশাপাশি ভোটাধিকারবঞ্চিত ১১ লাখ রোহিঙ্গাও রয়েছেন, যারা দীর্ঘদিন ধরেই নাগরিকত্ব ও ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত।
এদিকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। নির্বাচনকে ‘মৌলিকভাবে ত্রুটিযুক্ত’ বলে উল্লেখ করেছে তারা। সংঘাতকবলিত এলাকাগুলোয় অনেক কমিউনিটির মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত, সংঘাতকে আরও বাড়িয়ে দেবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’।
Leave a Reply