May 2, 2024, 2:58 pm

রাফাহ’য় পরিকল্পিত হামলার বিরূদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর ইসরাইয়েলের প্রতি হুঁশিয়ারি

ইসরায়েল যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চল থেকে পালিয়ে আসা ১৩ লাখ ফিলিস্তিনিসহ ১৪ লক্ষাধিক জনঅধ্যুসিত নগরী সর্বদক্ষিণের রাফাহ’য় পরিকল্পিত স্থল অভিযানের জন্য ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক চাপের সম্মুখীন হচ্ছে। আঞ্চলিক দেশগুলি গত কয়েকদিন ধরেই, তেল আবিবকে রাফাহ’য় ইসরায়েলি বাহিনীর পরিকল্পিত স্থল অভিযানে সম্ভাব্য মানবিক বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে। খবর সিনহুয়া’র।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শুক্রবার বলেছেন, হামাসের বিরুদ্ধে সম্প্রসারিত হামলার আগে, তিনি সেনাবাহিনীকে জনাকীর্ণ রাফাহ থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে তার এই বক্তব্য আঞ্চলিক দেশগুলির মধ্যে এই মর্মে মারাত্মক শঙ্কার জন্ম দিয়েছে যে, রাফাহ’য় হামলার পরিকল্পনা অবরুদ্ধ ছিটমহলে গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইল-হামাস সংঘর্ষ শুরু’র পর থেকে ইতোমধ্যে অবনতি হওয়া মানবিক পরিস্থিতিকে আরও বিপর্যস্থ করে তুলবে। গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মিশরের পাশাপাশি, কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় নিয়োজিত কাতার কঠোর ভাষায় রাফাহ’য় ইসরায়েলি হামলার হুমকি’র নিন্দা করেছে। শনিবার কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে লক্ষ লক্ষ বাস্তুচ্যুত মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল রাফাহ’র মানবিক বিপর্যয়ের বিষয়ে সতর্ক করা হয়। ২০২০ সালে ইসরায়েলের সাথে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরকারি সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন উভয় দেশই গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সৌদি আরবও গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে পালিয়ে আসা লাখ লাখ বেসামরিক নাগরিকের “শেষ অবলম্বন” রাফাহ’কে ইসরায়েলের তান্ডব সৃষ্টির লক্ষ্যবস্তু করার “অত্যন্ত গুরুতর প্রতিক্রিয়া” সম্পর্কে হুঁশিয়ার করেছে। মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শউকরি জোরপূর্বক ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতির বিষয়টিকে দেশটির প্রত্যাখ্যান নিশ্চিত করেছেন। ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূমি থেকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়াকে ইসরায়েলের “ধারাবাহিক নীতি” বলে অভিহিত করে, এর বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে মিশর। জর্ডান যুদ্ধের অবসান ও বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে তাদের ভূখন্ডের অভ্যন্তরে বা বাইরে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতিকে সুস্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। আরব লীগের মহাসচিব আহমেদ আবুল-গীত কয়েক হাজার ফিলিস্তিনিকে বাস্তুচ্যুত করার ইসরায়েলের উদ্দেশ্যকে “আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুতর হুমকি” বলে সতর্ক করে দিয়েছেন।
এদিকে, গত রোববার নেতানিয়াহু এবিসি নিউজের সাথে এক টেলিভিশন সাক্ষাতকারে বলেন, বহির্বিশ্বের উদ্বেগ কমানোর এক আপাত পদক্ষেপ হিসেবে, বেসামরিক জনগণের জন্য নিরাপদ প্রস্থানের বিষয়ে একটি “বিশদ পরিকল্পনা” তৈরি করা হচ্ছে, যাতে তারা রাফাহ নগরী ছেড়ে যেতে পারে।
অন্যদিকে, হামাস পরিচালিত আল-আকসা টিভি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হামাস এর এক সিনিয়র নেতাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, হামাস রাফাহ’য় ইসরায়েলি স্থল অভিযানের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, এটি জিম্মি বিনিময় আলোচনাকে “উড়িয়ে দেবে”। একই দিনে, নেতানিয়াহু ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্ত করার চলমান প্রচেষ্টা ও ফিলিস্তিনি ছিটমহলে আরও সাহায্যের সুবিধার্থে ফোনে আলোচনা করেন। একজন ইসরায়েলি সরকারি কর্মকর্তা সিনহুয়াকে বলেন, কথোপকথনটি জিম্মিদের বিষয়েই কেন্দ্রীভূত ছিল। ওই জিম্মিদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন এখনও হামাসের গত বছর ৭ অক্টোরের হামলাকালে অপহৃত হয়ে গাজায় রয়েছে।
হোয়াইট হাউসের প্রকাশিত এক রিডআউটে বলা হয়, বাইডেন নেতানিয়াহুকে বলেছেন যে আশ্রয় নেওয়া প্রায় দশ লক্ষ লোকের সুরক্ষা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা ছাড়া, রাফাহ’য় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান চালানো উচিত নয়। বিবৃতি অনুসারে, বাইডেন “হামাসকে পরাজিত দেখার অভিন্ন লক্ষ্য” পুনরায় নিশ্চিত করেছেন। তবে, তিনি গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা বাড়ানোর জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জানান।
গাজা ভিত্তিক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রোববার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় ৭ অক্টোবর, ২০২৩ সাল থেকে ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনি মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৮ ঞাজার ১৭৬ জনে দাঁড়িয়েছে এবং আরও ৬৭ হাজার ৭৮৪ জন আহত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :