April 28, 2024, 2:25 am

উপবৃত্তির নামে প্রতারণার ফাঁদ

অনলাইন ডেস্ক।
করোনাকালে শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারের দেয়া উপবৃত্তির টাকা আর ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বরে দেয়া হবে না— এমনটা জানিয়ে কুমিল্লায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে একটি প্রতারক চক্র। পেতেছে প্রতারণার ফাঁদ। চক্রটি শিক্ষার্থীদের মুঠোফোনে ফোন করে শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ২৪ হাজার টাকা বিকাশ করার কথা বলছে।
শিক্ষার্থীরা জানায়, যেকোনো বিকাশ এজেন্ট থেকে ২৪ হাজার টাকা তাদের (চক্রকে) পাঠানোর পর চলতি মাসের শেষে সরকার শিক্ষাবোর্ডের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের উপবৃত্তি দেবে এমনটা জানায় চক্রটি।
যাকে যেদিন ফোন দেয়া হচ্ছে সেদিনই টাকা পাঠানোর শেষদিন বলছে, অন্যথায় উপবৃত্তির তালিকা থেকে নাম কাটা যাবে বলেও শিক্ষার্থীদের হুমকি দিচ্ছে চক্রটি। কেউ কেউ নিশ্চিত না হয়েই হয়তো এ ফাঁদে পা দিতে পারে এমনটা আশঙ্কা করছে সচেতন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছে, এখনো পর্যন্ত তারা এ চক্রের ফাঁদে পা দেয়নি।
তারা জানিয়েছে, আমরা নিশ্চিত না হয়ে টাকা পাঠাচ্ছি না। কিন্তু অন্য কেউ পাঠিয়েছে কী না তাও জানা যাচ্ছে না। তবে তারা তাদের সহপাঠীদের ফোন করে বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছে বলে জানায় একাধিক শিক্ষার্থী। কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. আব্দুস ছালাম আমার সংবাদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এ চক্র থেকে সাবধান থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
জানা গেছে, প্রতারক চক্রটি বিশেষ করে কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীদের টার্গেট করেছে। আমার সংবাদকে এ বিষয়ে জানিয়েছে সরকারি মহিলা কলেজেরই একাধিক শিক্ষার্থী।
তারা জানায়, গত সোমবার দুপুরে দুটি মোবাইল নম্বর থেকে একাধিকবার ফোন করে চক্রটি। ফোন রিসিভ করে পরিচয় জানতে চাইলে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড থেকে ফোন করেছে বলে জানায়।
কি বিষয়ে জানতে চাইলে, তারা (চক্রটি) উপবৃত্তির জন্য বিকাশের ব্যক্তিগত যে নম্বরটি কলেজে দেয়া আছে সেটিতে আর উপবৃত্তির টাকা দেয়া হচ্ছে না বলে জানায়। যে কারণে বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে লেনদেন করতে হবে।
যার প্রথম প্রক্রিয়াই হচ্ছে বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে ২৪ হাজার টাকা পাঠাতে হবে, সেটি বুঝে পেলেই শিক্ষাবোর্ড মাস শেষে সরকারের দেয়া মোটা অঙ্কের উপবৃত্তির টাকা সেই বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে পাঠাবে।
যিনি শিক্ষাবোর্ডের হয়ে ফোন করছিলেন তার পরিচয় জানতে চাইলে পদ-পদবি উল্লেখ না করেই তিনি শিক্ষাবোর্ডের ড. রফিকুল ইসলাম বলে পরিচয় দেন।
তিনি বলেন, আজকের (সোমবার) মধ্যেই ২৪ হাজার টাকা না পাঠালে উপবৃত্তির তালিকা থেকে নাম কাটা যাবে।
প্রতারক চক্রটি কলেজে ভর্তির সময়ে শিক্ষার্থীদের দেয়া ব্যক্তিগত তথ্য বিশেষ করে বাবার নাম, মায়ের নাম, গ্রামের নাম, কলেজে কোন বিষয়ে পড়াশোনা করছে এমন সকল তথ্য উল্লেখ করে কথা বলায় আশ্বস্ত হয়ে কেউ কেউ প্রতারণার এই ফাঁদে পা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে শিক্ষার্থীরা।
তারা বলছে, আগে কখনোই উপবৃত্তির প্রদানের পূর্বে আমাদের কাছ থেকে টাকা নেয়নি শিক্ষাবোর্ড কিংবা এ ধরনের কোনো ফোনও পাইনি। যে কারণে আমরা তাদের কথায় সাড়া দিচ্ছি না।
তবে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, কলেজে ভর্তির সময়ে দেয়া শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রাখা সত্ত্বেও প্রতারক চক্রের হাতে গেলো কীভাবে? একই প্রশ্নে কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. জামাল নাছেরের সঙ্গে কথা হয় আমার সংবাদের।
তিনি বলেন, প্রতারণার এ বিষয়ে কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষ উদ্বিগ্ন। শিক্ষার্থীদের প্রতারক চক্রের হাত থেকে রক্ষা করতে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না কলেজ কর্তৃপক্ষ।
অভিভাবক, প্রতিষ্ঠান যেই অভিযোগ করছে তাতে কাজ হচ্ছে না। র‌্যাবে অভিযোগ করলে তারা বলছে ডিএসবির কাছে যেতে। এভাবে র‌্যাব-থেকে পুলিশ, পুলিশ থেকে র‌্যাবে যেতে হচ্ছে, মূলত প্রতারণার বিষয়টি সমাধান হচ্ছে না।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য কীভাবে প্রতারক চক্র পাচ্ছে তাও জানতে পারছে না কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে প্রশাসন চাইলে প্রতারণার সঙ্গে জড়িতদের সবাইকেই চিহ্নিত করা সম্ভব।
অধ্যক্ষ জামাল নাছের বলেন, এর আগেও এ ধরনের প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষাবোর্ড এসব নিয়ে নোটিসও করেছে।
প্রতারণার বিষয়টি কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. আব্দুস ছালামকে অবগত করতে গত সোমবার সন্ধ্যায় আমার সংবাদ থেকে ফোন করা হয়।
পুরো ঘটনা শুনে তিনি বলেন, শিক্ষাবোর্ড কখনো উপবৃত্তি দেয় না। শুধু তাই নয়, কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে ড. রফিকুল ইসলাম নামে কোনো কর্মকর্তাই নেই। একটি প্রতারক চক্র চাকরি দেয়ার কথা বলেও টাকা আদায় করছে। বিষয়টি শিক্ষাবোর্ড অবগত হয়ে একটি জিডিও করেছে। র‌্যাব-পুলিশ প্রতারক চক্রের সন্ধানে কাজ করছে।
তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে কুমিল্লার সব শিক্ষার্থীকে এ চক্রের ব্যাপারে সাবধান থাকার জন্য বলেছেন তিনি। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে সবাইকে সচেতন করার কথাও বলেন তিনি।
কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানের বক্তব্য আর চলমান প্রতারণার বিষয়টি জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীরকে জানালে তিনি প্রতারণায় ব্যবহূত ফোন নম্বরগুলো চান আমার সংবাদের কাছে। সেগুলো পাঠানোও হয়েছে জেলা প্রশাসককে।
র‌্যাব অভিযোগ পেলেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না, পুলিশের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে অভিযোগকারী প্রতিষ্ঠানকে, একইভাবে পুলিশও। মোটকথা প্রশাসন এই প্রতারণা ঠেকাতে তৎপর নয় বলে আমার সংবাদের মাধ্যমে অবগত হয়েছেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :