July 27, 2024, 6:17 am

আগামীকাল মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস

আগামীকাল ৭ নভেম্বর। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এই দিনটিকে মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস হিসাবে পালন করে। ১৯৭৫ সালের এদিনে, সিপাহী বিপ্লবের নামে প্রথমে হত্যা করা হয় তিন খ্যাতনামা মুক্তিযোদ্ধাকে। কোন কোন রাজনৈতিক সংগঠন এ দিনটি সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান দিবস হিসাবেও পালন করে । বিশিষ্টজনেরা মনে করেন, সিপাহী বিপ্লবের নামে এদিন থেকে শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধা সেনা সদস্যদের হত্যা প্রক্রিয়া।
১৯৭৫ সালের এদিনে সিপাহী বিপ্লবের নামে প্রথমে হত্যা করা হয় তিন খ্যাতনামা মুক্তিযোদ্ধাকে। এরা হলেন- খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম, কে এন হুদা বীর উত্তম এবং এ টি এম হায়দার বীর বিক্রম। দশম বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদর দপ্তরে অবস্থানকালে সকালে তাদের একেবারে কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে দু’জন কোম্পানি কমান্ডার আসাদ এবং জলিল। এছাড়াও এ বিষয়ে ঐদিনের বর্ণনায় সাংবাদিক অ্যান্থনী ম্যাসকারেনহাস লিখেছেন, ‘উচ্ছৃঙ্খল সৈনিকেরা একজন মহিলা ডাক্তারসহ ১৩ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে। এমনকি একজন সেনা কর্মকর্তার স্ত্রীকেও এ সময় হত্যা করা হয়’। লেখক গবেষক গোলাম মুরশিদ তার “মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর” গ্রন্থে লিখেছেন, শাফায়াত জামিল বিদ্রোহের খবর পেয়েও থেকে গিয়েছিলেন বঙ্গভবনে। কিন্তু যখন উচ্ছৃংখল বিদ্রোহী সেনারা শ্লোগান দিতে দিতে বঙ্গভবনের কাছাকাছি পৌঁছে যায়, তখন তিনি সঙ্গীদের নিয়ে দেয়াল টপকে পালিয়ে যান। এতে তার পা ভেঙ্গে যায় এবং পরে ধরা পড়েন। তার জায়গা হয় সামরিক হাসপাতালে। তিনি বেঁচে যান।
এর আগে ৬ নভেম্বর ভোর রাতে গৃহবন্দি জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করতে যায় বঙ্গবন্ধুর খুনি ফারুকের ল্যান্সার বাহিনীর একটি দল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যায় যার বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল সেই ল্যান্সার মহিউদ্দিন ছিল এই দলের নেতৃত্বে। তারা জিয়াকে মুক্ত করে নিয়ে আসে কর্নেল রশিদের দুই নম্বর অ্যার্টিলারি রেজিমেন্টের দপ্তরে। গোলাম মুরশিদ আরো বলেন, ‘মুক্তি পেয়েই জিয়াউর রহমান সদ্য নিযুক্ত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাদত সায়েমের সঙ্গে কথা না বলেই বেতারে ভাষণ দিতে চলে যান। ’৭১-এর ২৭ মার্চের মতোই সংক্ষিপ্ত ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর অনুরোধে তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। একাত্তরের ২৭ মার্চ তিনি প্রথমে নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন। পরে শুধরে নিয়েছিলেন। এবারও তিনি নিজেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসাবে ঘোষণা করেন। পরে উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হয়েছিলেন।’ পরবর্তীতে একে একে গণভোট, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, স্থানীয় পরিষদ নির্বাচন এবং পার্লামেন্ট নির্বাচন দিয়ে জিয়াউর রহমান নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করলেও, তার আমলে ২০টির বেশি অভ্যুথান হয়েছিল বলে বিভিন্ন তথ্যে পাওয়া যায়। এক হিসাবে প্রায় প্রতি তিন মাসে একটি করে অভ্যুথানের চেষ্টা হয়েছিল জিয়ার শাসন আমলে। এ ব্যাপারে গোলাম মুরশিদ বলেন, “একবার ফারুক-রশিদ প্রমুখের শৃঙ্খলা ভঙ্গকে ক্ষমা করার পর, জিয়া সেনাবাহিনীকে শৃঙ্খলার মধ্যে ফিরিয়ে আনতে খুবই চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু একটার পর একটা অভ্যুত্থান সেনাবাহিনীতে হতেই থাকে। প্রতিটি অভ্যুথানের পর বহু সেনা সদস্যকে তিনি ফাঁসিতে ঝোলান। অনেককে বিনা বিচারেও পাইকারিভাবে হত্যা করে গণকবর দেয়া হয়েছিল। বিশেষ করে ’৭৭ সালের ২ অক্টোবর বিমান বাহিনীর অভ্যুথানের পর শত শত লোককে বিনা বিচারে অথবা সংক্ষিপ্ত বিচারে হত্যা করা হয়েছিল। ফলে এমন অবস্থা দাঁড়ায় যে, ঐ সময়ে বিমান বাহিনীতে মাত্র ১১ জন কর্মকর্তা অবশিষ্ট থাকেন। তাদের মধ্যে বিমান চালাতে পারতেন মাত্র তিনজন”। মার্কাস ফ্র্যান্ডা’র মতে- এই অভ্যুথানের কারণে আড়াই হাজার সেনা সদস্য নিহত হয়। সবশেষ ১৯৮১ সালের ৩০মে চট্রগ্রামে সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর, মেজর জেনারেল মঞ্জুরসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল এবং গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ আগামীকাল দেশব্যাপী সিপাহী জনতার অভ্যুত্থান দিবস নামে দিনটি পালন করবে। এ উপলক্ষে জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটি আগামীকাল বিকাল ৩টায় শহীদ কর্নেল তাহের মিলনায়তনে জাসদ নেতা শহীদ কর্নেল তাহের বীরউত্তমের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান এবং আলোচনাসভার আয়োজন করেছে। জাসদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ বলা হয়, অনুষ্ঠানে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপিসহ দলের কেন্দ্রীয় ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ গ্রহন করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :