কুমারখালীতে খোলা আকাশের নিচে তাঁতবোর্ডের ৩০ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ।
একটু ভাবুনতো আপনি বাজারে গেলেন ঘরের আসবাবপত্র কিনতে। সঠিক পরিকল্পনা তৈরি করে তালিকা অনুসারে কিনলেন আসবাবপত্র গুলো। ক্রয়কৃত আসবাবপত্র গুলো আবার গাড়ি ভাড়া করে বাড়িতে নিয়ে আসলেন। এসে দেখলেন আপনার ক্রয়কৃত আসবাবপত্র গুলো ঘরের কাজে আসছেনা। কোনটি আকারে ছোট বড়, কোনোটা আবার অপ্রয়োজনীয়। আবার কোনোটা পছন্দের কোম্পানির বাইরে। ফলে আসবাবপত্র গুলো খোলা আকাশের নিচে রেখে দিলেন। এখন ধীরে ধীরে তা নষ্টের দিকে।
অনেকটা গল্পের মত হলেও এমন ঘটনাই ঘটেছে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর তাঁতবোর্ডে। তাঁত শিল্পকে আধুনিকরণের লক্ষ্যে প্রোসেসিং, প্রিন্টিং ও ডায়িংয়ের জন্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড।
যন্ত্রপাতি গুলো ক্রয় এবং স্থাপনের দাঁয়িত্ব পাই খুলনা শিপইয়ার্ড। চুক্তি অনুয়ায়ী খুলনা শিপইয়ার্ড গেল বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কাজ শুরু করে চলতি বছরের জুনে শেষ করার কথা। ইতিমধ্যে খুলনা শিপইয়ার্ড প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ের ৪৬ টি যন্ত্রপাতি তাঁতবোর্ডের নিকট হস্তান্তর করেছে। কিন্তু যন্ত্রগুলো অবকাঠামোর সাথে সমন্বয় না হওয়া এবং উপযুক্ত অবকাঠামো না থাকা, পুরাতন যন্ত্রপাতি অপসারণ না হওয়ায় নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপন করা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
অপরদিকে যন্ত্রপাতি গুলো স্থাপন না হওয়ায় সংরক্ষণের অভাবে খোলা আকাশের নিচে পলিথিন ও কাঠের বক্স দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। দিনেদিনে যন্ত্রপাতি গুলো নষ্ট হচ্ছে। যেকোন সময় ঝড় বৃষ্টি হলে ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবণা দেখছেন খুলনা শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ।
বুধবার সকালে কুমারখালী তাঁতবোর্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খোলা আকাশের নীচে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি গুলো পলিথিন ও কাঠ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। রোদ, ঝর, বৃষ্টি, ধূলাবালি সব যন্ত্রপাতির উপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। আরো দেখা যায়, বাংলাদেশ তাঁতবোর্ডের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম যন্ত্রপাতি গুলো পরিদর্শনে এসেছেন।
এবিষয়ে খুলনা শিপইয়ার্ডের সিসিও সামির আহমেদ বলেন, গেল বছরের ফেব্রুয়ারিতে দাঁয়িত্ব পাই, চলতি বছরের জুনে শেষ হবার কথা। ইতিমধ্যে প্রায় ৩০ কোটি টাকা মূল্যের ৪৬ টি যন্ত্রপাতি তাঁতবোর্ডের নিকট হস্তান্তর করেছি। কিন্তু অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। তাঁতবোর্ড যন্ত্রপাতি গুলো খোলা আকাশের নিচে পলিথিন ও কাঠ দিয়ে ঢেকে রেখেছে। দিনেদিনে নষ্ট হচ্ছে। যেকোন সময় কাল বৈশাখীর ঝড় বৃষ্টি হলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খুলনা শিপইয়ার্ডের একজন কর্মকর্তা বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী তাঁতবোর্ড যন্ত্রের চাহিদা পাঠিয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী যন্ত্রপাতি হস্তান্তর করা হয়েছে। আর মাত্র একবছরের ব্যবধানে যন্ত্রপাতি গুলো অবকাঠামোর সাথে অমিল ধরা পড়ল।
এবিষয়ে কুমারখালী তাঁতবোর্ডের সহাকরি মহাব্যবস্থাপক মো. মেহেদী হাসান বলেন, অবকাঠামোর সাথে আধুনিক যন্ত্রপাতির নকশার মিল না থাকায় যন্ত্রপাতি স্থাপন সম্ভব হয়নি। এছাড়াও পুরাতন যন্ত্রপাতি এখনও অপসারণ করা হয়নি। আর ভবণ না থাকায় যন্ত্রপাতি গুলো খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়েছে। তবে সেগুলো পলিথিন ও কাঠ দিয়ে ঢাকা আছে।
জানা গেছে, কুমারখালী তাঁতবোর্ডের যন্ত্রপাতি হস্তান্তের পরেও নানান জটিলতায় তা স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। এসংক্রান্ত এক তদন্তে সরেজমিন বাংলাদেশ তাঁতবোর্ডের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম পরিদর্শনে আসেন।
বুধবার সকালে পরিদর্শনকালে সফর সঙ্গী ছিলেন পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়েরর জৈষ্ঠ্য সচিব মোছা. আছিয়া, খুলনা নৌ বাহিনীর সীপইয়ার্ডের ডিজিএম (নকশা ও পরিকল্পন দপ্তর) মো. তোহা আল তাসবির, বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন সহ প্রমূখ।
পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ তাঁতবোর্ডের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘ যন্ত্রপাতি স্থাপনে জটিলতা সংক্রান্ত এক তদন্তে আজ এখানে আসা। তদন্তে কিছু অবস্থা ও ত্রুটি পেয়েছি। কিন্তু এখন কিছু বলা যাচ্ছে। তদন্ত শেষে প্রতিবেদনের মাধ্যমে আপনাদের বিস্তারিত জানানো হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ তাঁতশিল্পকে এগিয়ে নিতে তাঁতবোর্ড কাজ করছে। আশা করছি খুব দ্রুত কুমারখালীতে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপনের মাধ্যমে তাঁতশিল্পের বিপ্লব ঘটবে।।
Leave a Reply