রাশিদা-য়ে আশরার,কবি ও সাহিত্য সম্পাদক দৈনিক পদ্মা সংবাদ।
আসসালামু আলাইকুম। মৃত্যু পথযাত্রী কোন ব্যক্তির নিকট জানতে ইচ্ছা করে তার কি এরকম মনে হচ্ছে খানিক বাদে যে পোশাকটি পরানো হবে তাতে কেন একটা পকেট থাকলো না- এমনকি মনে হয়?
এতদিন ধরে যে অর্থের পেছনে ছুটে বেড়িয়েছে, পাড়া-মহল্লা গ্রাম শহর, দাপিয়ে বেড়িয়েছে দামী গাড়ি অথবা হোন্ডা তাড়িয়ে অর্থবিত্ত ধন-সম্পদের পেছনে,
সবকিছু কি তার সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবে- আর কিভাবেই বা তা সম্ভব?
মৃত্যুর শেষ মুহূর্তটি কি সবকিছুই অন্যরকম মনে হবে?
ভীষণ কষ্ট হবে- মৃত্যু যন্ত্রণা সেকি গায়ের থেকে কাঁচা মাংস ছাড়ানোর মতো হবে? এক রেওয়াতে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) তিনি এমন ঘটনাই বর্ণনা করেছেন!
আরও পড়ুন।
👉সুনাগরিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতা!
যখন বিদায় বেলার প্রশ্ন তখন শুধু একটাই আফসোস থাকবে কেন এই পৃথিবীর মোহ মায়ায় পড়ে ভুলে গিয়েছিলাম পৃথিবীটা ক্ষণস্থায়ী! পৃথিবীর জীবন ক্ষণস্থায়ী, পরবর্তী জীবন অনন্তকালের… তাই সে জীবনের জন্য আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে তৃপ্তি লাভের জন্য আমাদের ফরজ সুন্নত বিধান মেনে চলা একমাত্র পাথেয় অন্তিম যাত্রায় এবং তারপর!অবশ্যই কিছু নিয়ম-কানুন জেনে ও মেনে চলা প্রয়োজন। কোরআন হাদিস, ফরজ সুন্নত মেনে চলার মাধ্যমেই অনন্তকালের জীবনের মুক্তি।
এই পৃথিবী থেকে কিছুই নেওয়া যাবে না যদিও এই কাফনের কাপড়ে এক পৃথিবী সমান দুটো পকেট থাকত তার পরেও। এখানে রূপক অর্থে বোঝানো হয়েছে যদিও বিষয়টি, মূলতঃ নিজের উত্তম কাজ,
নেক আমল, প্রার্থনা দোয়া ও ক্ষমা চেয়ে তওবা করে পাপ মুক্ত হওয়া ছাড়া কিছুই কাজে আসবে না মৃত্যুর পর। কারণ কে কত ধনী ছিল আর কে দরিদ্র ছিল তা সৃষ্টিকর্তা বিচার করবেন না। কারণ তিনি নিজেই তো কাউকে ধ্বনি কাউকে দরিদ্র করে এ পৃথিবীতে প্রেরণ করেছিলেন, কাউকে সুস্থ-অসুস্থ ও বিকলাঙ্গ, জন্মান্ধ করে শুধুমাত্র পরীক্ষা করার জন্যই, এই পৃথিবীটাই তো একটি পরীক্ষা ক্ষেত্র আর আমরা এখানে সবাই ছাত্র-ছাত্রী;আমরা নির্দ্বিধায় ভুলে যাই সে কথা!
নিজের সুখ ভোগ লোভ-লালসা মনের ইচ্ছা ও মোহ এর পিছনে ছুটে বেড়ায়।
আজ এই মুহূর্তে একবার ভেবে দেখুন,যে বিলাসবহুল চাকচিক্যময় যে বাড়িটি তে বসবাস করেছেন এতদিন, ভালো-মন্দ খেয়ে পরে আনন্দ- ফুর্তি মজা করে কেটেছে। ঝকঝকে বাথরুমে বাথটাবে শুয়ে অথবা ঝরনার নীচে ঠান্ডা জলে গোসল করেছেন- মৃত্যুর পর শেষ গোলটি সেখানে হবে কিনা? বরং শেষ গোসল করতে হবে অন্যের হাতে, কাঠ বিছানা তক্তা টার উপর অন্যের হাতে, যে বাড়িতে যেতে চলেছেন বাসের বেড়া খাট, নেই বালিশ- বিছানা- কম্বল, আলো বাতাস হীন অন্ধকার কবর ঘর, পোকামাকড়ের আস্তানা- তাদের সঙ্গেই বসবাস আমার আপনার পরম আত্মার! উপরন্তু কবরের আজাব থেকে কেউ রেহাই পাবে না, মাটি চাপ দিতে থাকবে অবিরত বুকের খাঁচা একটা থেকে আর এক দিকে ঢুকে যাবে হাড়গুলো, সাপ ছোবল দেবে অবিরত-তীব্র আগুনের আঁচ, ঝলসে যাবে সুন্দর শরীর…বে নামাজীর সাজা হবে বিষাক্ত সাপের ছোবল; মৃত্যু মানে সব শেষ হয়ে যাওয়া নয়, শুধু এক অবস্থানে থেকে অন্য অবস্থানে রূপান্তর মাত্র।
নিজের মনকে কখনো প্রশ্ন করেছেন কি যে দামি এসি গাড়িতে চড়ে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলেছেন…
সেই গাড়িতে চড়ে শেষ যাত্রা টি হবে কিনা? যে চোখ দিয়ে এই পৃথিবীটাকে রঙিন দেখেছেন সে চোখে অন্ধকার নামছে কেন ? স্বামী-স্ত্রী সন্তান, আত্মীয়- স্বজন, কেউ পাশে থাকবে না, ধন-সম্পদ অর্থ-বিত্ত প্রাচুর্য নাম ডাক সঙ্গে যাবে কিনা?
মোটকথা জীবনের যে কোনো মুহূর্তে ডাক এসে যেতে পারে, চলে যেতে হবে সব কাজ ফেলে তাই প্রত্যেকটি মানুষের অবশ্য করণীয় সব সময় তার জন্যে প্রস্তুত থাকা। অর্থাৎ জীবনের প্রত্যেকটি নামাজকে মনে করা প্রয়োজন শেষ নামাজ, প্রত্যেকটি রাতকে শেষ রাত আর প্রত্যেকটি দিনকে শেষ দিন।
প্রতিটি মন্দ কাজের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা এবং ভালো কাজের শুকরিয়া আদায় করা দরকার। সমুদ্রের সমস্ত জল কালি হলে ও সমস্ত গাছের পাতা যদি কাগজ হয়,
গাছগুলো যদি কলম হয় তারপরেও সৃষ্টিকর্তার অপরিসীম দয়া- মহানুভবতা ও গুনোগান বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না।
আসুন আমরা সৃষ্টিকর্তার নিকট ভালো মৃত্যু কামনা করি, আর যথাযথভাবে কোরআন এবং হাদিসের বিধি-বিধান মেনে চলার চেষ্টা করি।নিজের মনকে সংযত করি, গীবত- কবিরা বা বড়ো গুনাহ তা থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি। সবাই একসঙ্গে বলি হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে ইসলামের উপর মৃত্যু দাও, ভাল মৃত্যু দান করো এবং কালিমা তাইয়্যেবা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” ( সঃ) যেন হয় জীবনের শেষ বাক্য। আমীন সুম্মা আমীন।
২০২১
Leave a Reply