April 20, 2024, 2:23 pm

পৌর ভবন ঘিরে বিপুল সংখ্যক র‌্যাব-পুলিশ

অনলাইন ডেস্ক।
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাটে আলোচিত মেয়র আবদুল কাদের মির্জা পৌর কার্যালয়ে রাত থেকে অবস্থান করছে পুলিশ। অনেকটা কার্যালয়টি ঘিরে রেখেছে তারা। ফলে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে, যেকোনও সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন কাদের মির্জা!
আর পৌরসভা ভবন চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছে পুলিশ। আর ভবনের ভেতরে রাত কাটিয়েছেন মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। তাঁর সঙ্গে সেখানে অল্প কয়েকজন কর্মী আছেন।
এদিকে শুক্রবার (১২ মার্চ) সকালেও দেখা গেছে একই চিত্র। চতুর্দিক থেকে কার্যালয়টি ঘিরে রেখেছে পুলিশ। তবে ভেতরের কাউকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে এখনও কিছুই জানায়নি পুলিশ।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যার দিকে কাদের মির্জার স্ত্রী আক্তার জাহান বকুল স্বামীর কিছু জামা-কাপড়সহ একটি ব্যাগ নিয়ে সেখানে যান। সন্ধ্যার পর একজন আইনজীবীও কাদের মির্জার সঙ্গে দেখা করে পৌর ভবন থেকে বের হন।
এদিকে পুলিশের এমন অবস্থানে কাদের মির্জার অনুসারী নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক জেঁকে বসেছে। এ সময় কাদের মির্জার ছোট ভাই শাহাদাত হোসেনকে র‌্যাবের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু চত্বর, রূপালী চত্বর, উপজেলা হাসপাতাল গেট, কলেজগেট ও উত্তর বাজার এলাকায় পুলিশ-র‌্যাবের সতর্ক অবস্থান দেখা গেছে।
এর আগে কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের দু-পক্ষের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বৃহস্পতিবার অপরাধীদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। এর মধ্যে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বিকেল ৪টার দিকে নোয়াখালী প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
অন্যদিকে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত আলাউদ্দিনের ভাই এমদাদ হোসেন বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি মামলার আবেদন করেন। ওই আবেদনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
মঙ্গলবারের সংঘর্ষের পর থেকেই কোম্পানীগঞ্জের পরিস্থিতি থমথমে। পুরো উপজেলায় এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে। সন্ধ্যার পর থেকে রাস্তাঘাট অনেকটা জনশূন্য হয়ে পড়ে। নিহত আলাউদ্দিনের ভাই এমদাদ হোসেনের করা আবেদনে আবদুল কাদের মির্জা ছাড়াও তার ছোট ভাই শাহাদাত হোসেন, ছেলে মির্জা মাশরুর কাদের তাসিকসহ ১৬৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মীর জাহিদুল হক রনি এ তথ্য জানিয়েছেন।
তারও আগে, বুধবার রাতে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার অনুসারী আরিফুর রহমান বাদী হয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খিজির হায়াত খানকে প্রধান আসামি করে থানায় মামলা করেন। মামলায় মিজানুর রহমান বাদল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরনবী চৌধুরী, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আজম পাশা চৌধুরী রুমেলসহ প্রায় ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
৮ মার্চ বিকেলে বসুরহাটের রূপালী চত্বরে আবদুল কাদের মির্জার ব্যক্তিগত অফিস ভাঙচুর এবং ওই দিন রাতে বঙ্গবন্ধু চত্বরে আয়োজিত বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপনের মঞ্চ ভাঙচুরের ঘটনায় এ মামলা করা হয়। এ ছাড়া গত মঙ্গলবার রাতে বসুরহাট পৌরসভা মেয়রের কার্যালয়ে হামলা, গুলি, ভাঙচুরের ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে পৌরসভার কর্মচারী মো. স্বপন বাদী হয়ে ৯৮ জনের নাম উল্লেখ করে কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন।
প্রসঙ্গত, আবদুল কাদের মির্জার ‘সত্য বচন’ শুরু হয় গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর। স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে একের পর এক তার বিস্ফোরক বক্তব্যে দলে দেখা দেয় অস্বস্তি। এক পর্যায়ে শুরু হয় পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি। এরপর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদল মাঠে নামেন। তার নেতৃত্বে চাপরাশিরহাট বাজারে বিক্ষোভ মিছিল বের হলে সেখানে কাদের মির্জার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষ ও গোলাগুলি হয়। এতে গুলিতে প্রাণ হারান সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মোজাক্কির।
তবে সেই রেশ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবার দু’গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষ, বোমা হামলা ও গোলাগুলিতে প্রাণ হারান চরফকিরা ইউনিয়নের চরকালী গ্রামের শ্রমজীবী আলাউদ্দিন। এরপর থেকে মূলত থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :