July 27, 2024, 7:06 am

প্রিয়ঙ্কাকে সামনে পেয়ে মন খুললেন মহিলারা

অনলাইন ডেস্ক।
তাঁর সঙ্গে ঠাকুরমার মিল পান অনেকে। দর্শনেই শুধু নয়, সোজাসাপ্টা ধারাল কথাবার্তাতেও। ইন্দিরা গান্ধীর সেই বিচক্ষণতা, সেই প্রজ্ঞা ও আগ্রাসী রাজনীতি নাতনি প্রিয়ঙ্কায় বর্তেছে কি না, সময় তা বলবে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে ক্ষয়ে ক্ষয়ে প্রায় বিলীন হয়ে যাওয়া কংগ্রেসকে প্রাণের ছোঁয়া দিতে তাঁর নেতৃত্ব যে এ বারে পরীক্ষায় নেমেছে, এবং তাতে ভাল ফল না হলে যে অনেক কথা শুনতে হবে, সেটা বিলক্ষণ বোঝেন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা।

সোমবার নয়ডায় প্রার্থী পাঙ্খুরী পাঠকের প্রচারে জনতার দোরে দোরে ঘোরার পরে গৌতম বুদ্ধ নগরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তাই প্রিয়ঙ্কা মাটির কাছাকাছি। ‘উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসই জয়ী হয়ে সরকার গড়বে’ জাতীয় কোনও ‘জুমলা’-র ধার না-ধেরে অক্লেশে জানিয়ে দিতে ভোলেন না— এই যে তাঁর দল ৪০৩টি আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছে, এটাই তো অনেক বড় কথা! জয় পরাজয় পরের কথা। মানুষ আজ ফের কংগ্রেসের পতাকার নীচে সমবেত হচ্ছেন, এটাই বা কম কী?

দিল্লি লাগোয়া নয়ডায় ভোট ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখে। তার আগে এ দিনের প্রচারে একটা বিস্তীর্ণ এলাকার বাড়ি বাড়ি ঘুরে নজর কেড়ে নেন প্রিয়ঙ্কা। নির্বাচন কমিশনের কোভিড বিধি মেনে রোড শো করার উপায় ছিল না। নিয়ম মেনে ২০ জনের বেশি কর্মী বাড়ি বাড়ি প্রচারে তাঁর সঙ্গে থাকতে পারেননি। বাকিরাও থেকেছেন, নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে। নয়ডার সেক্টর ৭২-এ বেশ কয়েক দফায় মহিলাদের সঙ্গে আলাপচারিতায় যোগ দেন প্রিয়ঙ্কা। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন, সাধারণ গৃহবধূ, আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী থেকে বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে যুক্ত মহিলারা। যোগী আদিত্যনাথের আমলে তাঁদের যে সব অসুবিধায় পড়তে হয়েছে, খোলসা করেন কংগ্রেসের উত্তরপ্রদেশের সাধারণ সম্পাদকের কাছে। এর পরে প্রিয়ঙ্কা ফের বেরিয়ে পড়েছেন প্রচারে। নয়ডার কালীবাড়িতে জোড়হস্তে পুরোহিতের সঙ্গে মন্ত্র পাঠ করেন, পুজোর ডালি রাখেন নির্দিষ্ট দূরত্ব বিধি মান্য করে। প্রবল উৎসাহী এক কংগ্রেস কর্মীকে দেখা গেল শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েই নেত্রীর সঙ্গে সঙ্গে ঘুরছেন প্রচারে। গতির সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে পা আটকে গেল সেই কর্মীর, পায়ের চপ্পল গেল ছিটকে। সবার আগে এগিয়ে গিয়ে সেই চপ্পল কুড়িয়ে তাঁকে পরিয়ে দিলেন প্রিয়ঙ্কা। কর্মীর চোখ তখন ছলছল আবেগে।

উত্তরপ্রদেশের বাকি নেতাদের থেকে তাঁর ডিএনএ যে কিছুটা আলাদা, গৌতম বুদ্ধ নগরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তা এক রকম বুঝিয়ে দিয়েছেন ইন্দিরার নাতনি। অন্য দলের নেতারা সবাই যখন ভোটে নিজেদের সম্ভাব্য ফল নিয়ে লম্বা-চওড়া দাবি করতে ব্যস্ত, প্রিয়ঙ্কা তখন তাঁর দলের আসল ছবিটিকেই প্রেক্ষপটে রেখে এগোনোর পরিকল্পনার কথা জানাচ্ছেন। ২০১৭ সালের নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টির সঙ্গী হয়ে লড়েছিল কংগ্রেস। বিজেপি এই নির্বাচনে ৪০৩টির মধ্যে ৩০০টি জিতে সরকার গড়ে। এসপি-কংগ্রেস জোট পায় ৬০টি আসন। প্রশ্ন উঠেছিল, ওই জোটে কী লাভ হয়েছিল কংগ্রেসের? দলের অনেক নেতা বলেছিলেন, এর চেয়ে একক শক্তিতে লড়তে নামলে জেতা-হারা পরের কথা, সংগঠন যে চাঙ্গা হত সন্দেহ নেই। প্রিয়ঙ্কা রাখঢাক না করেই বলেছেন, আসলে সব আসনে প্রার্থী দেওয়া ও লড়াই করার মতো ক্ষমতাই তো তখন ছিল না কংগ্রেসের। অন্যের কাঁধ খুঁজতে হয়েছিল তাই। সেখান থেকে এগিয়ে এই যে রাজ্যের ৪০৩টি আসনের সব ক’টিতেই প্রার্থী দিতে পেরেছে তাঁর দল— এটাই তো মস্ত বড় সাফল্য। বেশ কিছু মানুষ কংগ্রেসের পাশে আবার জড়ো হচ্ছেন। মেয়েরা তাঁদের সমস্যার কথা মন খুলে বলতে পারছেন। ভোটারদের অর্ধেক মহিলা, কিন্তু তাঁরাই সব চেয়ে বেশি উপেক্ষিত এই রাজ্যে। কংগ্রেস এ বার তাঁদের মুখপত্র হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে চেয়ে আশাতীত সাড়া পাচ্ছেন।

প্রশ্ন করা হয়েছিল কটা আসন কংগ্রেস পাবে। জবাবে প্রিয়ঙ্কা জানান, এই নির্বাচনে যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে বিজেপি সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানোটা হল কংগ্রেসের প্রাথমিক লক্ষ। মানুষ যে ভাবে বিজেপি সরকারের উপরে বীতশ্রদ্ধ, প্রশাসনের অদক্ষতায় যে ভাবে সব ধরনের মানুষের জীবনে দুর্বিপাক নেমে এসেছে, তাতে সেটা ঘটার সম্ভবনাও দেখা যাচ্ছে। তিনি জানেন, প্রতিপক্ষের ক্ষমতার কথা, তাঁদের নখ-দাঁতের কথা। প্রিয়ঙ্কা বলেন, “লড়াইয়ে নেমেছি এফআইআর, মামলা, এমনকি জেল খাটার জন্য তৈরি হয়েই। কিন্তু বহু মানুষ যে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, লড়াইয়ের সঙ্গী হিসেবে ফের এই দলকে বেছে নিয়েছেন, তাঁদের ফেলে চলে যাওয়ার প্রশ্নই নেই।
সুত্রঃ আনন্দ বাজার প্রত্রিকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :