উপলব্ধির পাতা থেকে- বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস
।। হিংসা ও রাজনীতি সহোদর।।
রাশিদা-য়ে আশরার,কবি ও সাহিত্য সম্পাদক দৈনিক পদ্মা সংবাদ।।
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর মাতৃভাষা বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ও নিজেদের স্থান অস্তিত্ব এবং মুক্তি সংগ্রামের জন্য স্বাধীনতা সংগ্রাম। দীর্ঘ ৯- মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর অর্জিত হয় স্বাধীনতা! বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে দেশের পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সাথে রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনী বাংলাদেশের অসংখ্য শিক্ষাবিদ,গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের চোখ বেঁধে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে তাদের নির্যাতনের পর হত্যা করে। স্বাধীন বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতেই পরিকল্পিত ভাবে এই হত্যাযজ্ঞ সংগঠিত হয়। পরবর্তীকালে ঢাকার মিরপুর, রায়ের বাজার সহ বিভিন্ন স্থানে গণ কবরে তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় ।
১৯৭১ সালের ২৫-শে মার্চ থেকে ৩১-শে জানুয়ারি, ১৯৭২ পর্যন্ত সময়কালে যেসব বাঙালি সাহিত্যিক, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, চিত্রশিল্পী, শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতি, সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারী, রাজনীতিক, সমাজসেবী, সংস্কৃতিবিদ, চলচ্চিত্রকার, নাটক ও সংগীতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং এর ফলে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী অথবা তাদের সহযোগীদের হাতে শহীদ কিংবা ওই সময়ে নিখোঁজ হয়েছেন, তাঁরাই শহীদ বুদ্ধিজীবী।”
বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত ‘শহিদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থ’ (১৯৯৪) থেকে জানা যায়, ২৩২ জন বুদ্ধিজীবী নিহত হয়েছেন। তবে তালিকায় অসম্পূর্ণতার কথাও একই গ্রন্থে স্বীকার করা হয়। “বুদ্ধিজীবী তদন্ত কমিটির প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়, রাও ফরমান আলী এদেশের ২০,০০০ বুদ্ধিজীবীকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু এই পরিকল্পনা মতো হত্যাযজ্ঞ চলেনি। কারণ ফরমান আলীর লক্ষ্য ছিল শীর্ষ বুদ্ধিজীবীদেরকে গভর্নর হাউজে নিমন্ত্রণ করে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা। বুদ্ধিজীবী তদন্ত কমিটির প্রধান জহির রায়হান বলেছিলেন, ‘এরা নির্ভুলভাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রমনষ্ক বুদ্ধিজীবীদেরকে বাছাই করে আঘাত হেনেছে’। দুঃখজনকভাবে ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি জহির রায়হান নিখোঁজ হন।
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ কালরাত্রির শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে নামকরণ করেন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নীল নকশা অনুযায়ী এ দেশের মূল চালিকা শক্তি অর্থাৎ প্রথম শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীদের হত্যার মাধ্যমে চেয়েছিল নিশ্চিহ্ন ও বিনষ্ট করতে। কিন্তু হিংসা ও ক্রোধের বশবর্তী হয়ে উদীয়মান সূর্যকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করা যায় না সৃষ্টিকর্তা সঙ্গে থাকেন তো! জাতি ভারাক্রান্ত মনে স্মরণ করে একাত্তরের সেই কাল রাত্রির কথা! পাকিস্তানের সেনাবাহিনী সেই রাতে অতর্কিত ঢাকা শহর, চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম সহ সারাদেশে নারকীয় হত্যা যজ্ঞে মেতে উঠেছিল। রক্তের বন্যা বইয়ে গিয়েছিল পদ্মা-যমুনা, তিস্তা সুরমা, মধুমতি নদীর কোল ঘেঁষে যা মানব সভ্যতার ইতিহাসে অসভ্য রোমহর্ষক হত্যাযজ্ঞ ও জঘন্যতম কালো অধ্যায়!
১৬-ই ডিসেম্বর গৌরবের এবং বিজয়ের ইতিহাস, মাতৃভাষা ও মুক্তির দাবিতে যারা অকাতরে প্রাণ দিয়েছিলেন স্বাধীনতার জন্য সেই সব সকল শহীদ বুদ্ধিজীবীদের জানাই প্রাণঢালা শ্রদ্ধাঞ্জলি ও লাল সালাম, বাঙালি জাতি সকল শহীদদের নিকট ঋণী।
সৃষ্টিকর্তা দান করুন সকল শহীদদের জান্নাতের উদ্যান!
২০২১
Leave a Reply