April 27, 2024, 10:17 am

ঝগড়ুবাবা'র মাজারে অঙ্কন প্রতিযোগিতা

সংগ্রাম মিত্র ( ভারত )”বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি দেশে দেশে কত না নগর রাজধানী ۔۔۔۔۔۔۔۔” ভারতবর্ষের উত্তর প্রান্তে ফৈজাবাদ এক নিরীহ,প্রান্তিক সত্রিক গ্রামে ১৯৩০ সালে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহন করেন এক শিশু , কিছুদিন বাদে তাঁর নিজের গ্রাম বখরিমন্ডিতে চলে আসেন। গ্রামীণ জীবনের আর্থ-সামাজিক পরিবেশে ক্রমশ বেড়ে উঠছিলেন খারাপ- ভাল পারিবারিক আদর অনাদরের মধ্যে দিয়েই।
শৈশবের দিনগুলিতে জীবন ও চারপাশের সমাজকে বড় গদ্যময় , কঠিন মনে হয়েছিল যে শিশুটির তিনি হলেন – মহম্মাদ আহমেদ কুরেশি। চরম দারিদ্র কবলিত কুরেশি কোনও এক অমোঘ অজানা জগতের ইশারায় নিজেকে আত্মনিবেদনের চর্চায় ডুবিয়ে বাস্তবের কড়া শাসনকে স্বাভাবিক ভাবে নেবার সহজাত প্রচেষ্টায় মনোযোগী হয়ে ছিলেন।
খাওয়া- দাওয়া , থাকা ভালো অবস্থা বিলাসিতা তাঁকে ছুঁতে পারেনি। কষ্টটাই স্বাভাবিক জীবন ভাবনায় নিজেকে তৈরী করেছিলেন।

শিশু মহম্মদ কুরেশি ঘন বন জঙ্গলে পরের বাড়ির গবাদি পশু চরিয়ে মালিকের দয়ার দান নিয়ে নিজের জীবিকার্জন করতেন। অনেকগুলি ভাই বোনের সংসারে অভাব অনটন অপুষ্টি এসব কোনও কিছু অনুভব করেননি মহম্মদ কুরেশি। বোহেমিয়ান বাবার প্রতি রাগ অভিমান প্রতিবাদও ছিল না তাঁর। নয় বছরের ফৈজাবাদের আত্মিক সম্পর্ককে বিদায় দিয়ে জোব চার্ণককের কলকাতায় পা রেখেছিলেন শিশু আহমেদ কুরেশি।
কোনও আত্মীয় পরিজনের বাড়ি নয় কারো আমন্ত্রনেও নয় ۔۔নিজের অস্তিত্বের তাগিদে নিজেকে লড়াই এর ময়দানে নামালেন۔۔۔۔দিশেহারা শিশু বুঝে নিয়েছিলেন বাঁচ জন্য নিজেকেই দায়িত্ব নিতে হবে। এই বলেন বালককে অনেক বড় করে তুললো। অনেক প্রচেষ্টার পর দমদম অঞ্চলে এক বাঙালি মাছের ব্যবসায়ী কালিবাবুর কাছে কাজের বরাত পেলেন। শুরু হলো ফাইফরমাস খেটে দিনগুজরান পর্ব শুরু করেন। একই সময়ে কৈখালির এক মাংসের কারবারির সাথে যোগাযোগ হয় এবং কঠিন পেশার সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। কসাই মনের মধ্যে তার পেশা সুলভ মানসিকতা তৈরী হয়নি কিশোর মুসলিম।ভাইটির উপর। তখনই আহমেদ মনের গভীর কোণে ক্রমশ এক নতুন বার্তার মৃদু আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন। সব কিছুর জন্য মন প্রাণ এই সমাজের মঙ্গলের জন্য সমর্পণ করে দেওয়া সৎ ভাবে বাঁচার সাথে খারাপ কে খারাপ অন্যায়ের প্রদিবাদ , গরিব অসহায় অবহেলিত সম্প্রদায়কে বাঁচানোর ব্রত গ্রহণ করেন। তাঁর মধ্যে সমানাধিকার বোধ প্রবল ভাবে জেগে ওঠে। অল্প বয়সে জীবনাদর্শ ۔۔۔ বোধ অনুভব , অনুভূতি এবং তা অন্যের মধ্যে সঞ্চারিত করা মহাব্রত গ্রহণ ۔۔করেন।
কোনও জাত কোনও ধর্ম , কোনও ভাষা মহম্মদ কুরেশির কাছে অপ্রাসঙ্গিক বিষয় ছিল। ধর্ম হলো ব্যক্তিগত বিশ্বাস , ভক্তি এবং পূজা – অর্চনার বিশেষ পথ। ধর্মীয় ভাবনা , ধর্মবোধ পরম সত্যকে উপলব্ধি করার একটি পথ মাত্র। তিনি বলতেন বিশ্বাস ও প্রত্যয়কে নিজের মন ও হৃদহৃদয়ের মধ্যে একাত্ম করতে হবে।
বাদ – প্রতিবাদ কলহ – ঝগড়া তার প্রায় সঙ্গী হয়ে ওঠে ۔۔۔ঝগড়া করার প্রয়োজন হয়েছিল বলেই লোকশ্রুতিতে আহম্মেদ কুরেশি ঝগড়ুবাবা বাবা হয়ে উঠেছিলেন।
মানুষ যখন ভুল করে তখন সে না বুঝেই করে – তাঁকে সঠিক পথে নিয়ে আসার কথা ভাবতে পারেন মহাপুরুষ। তিনি বলতেন ” ইয়ে হামরা স্কুল , শিখানে কা ঘর ” তিনি বলতেন ” মানো তো মানো , না মানো তো না মানো, হামরা কামই লোগোকো রাস্তা দিখানা ” এভাবেই ধর্মের লোকশিক্ষক হয়ে উঠেছিলেন। হাজার হাজার মানুষের আশ্রয় আল্লা ভগবান হয়ে উঠেছিলেন কুরেশি। যীশুখ্রিষ্ট , রামকৃষ্ণ , কবীর, নানক , বুদ্ধ, চৈতন্য সব ধর্মের প্রতি সহনশীল হয়ে উঠেছিলেন।
ঝগড়ুবাবার মন , প্রাণ , জ্ঞান , চিন্তা , কর্মের মধ্যেই ছিল এক সহজাত সহজিয়া ভাব।
তিনি আজকের যুগে যে সামাজিক মূল্যবোধ , নীতি নৈতিকতার সংকট ( Ethics morality ) মননে শক্তিশালী হয়ে ওঠার কথা বলতেন।
ঝগড়ুবাবার ভাবাদর্শে গড়ে ওঠা দক্ষিণ কলকাতার একটি মাজার ‘ঝগড়ুবাবা ফাউন্ডেশন টালিগঞ্জ দরবার সোসাইটি ‘ যেখানে তাঁর পদধূলি পড়েছে অনেকবার সেই কর্ম কেন্দ্রটি ঘুরে দেখালেন ঐ সংস্থার এক সদস্য পল্লব কাঞ্জিলাল।
যাঁরা হিন্দু ব্রাম্ভন পরিবারে পূজিত হচ্ছেন ঝগড়ুবাবা।
বর্তমানে তাঁর কোনও প্রসাদ বিতরণের মধ্যে ভাব প্রচারের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে। সারা বাংলায় বিভিন্ন কর্মকান্ড অঙ্কন প্রতিযোগিতা প্রদর্শনী , ইত্যাদির মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চান সোসাইটির কর্মকর্তাগণ। ২০ ডিসেম্বর এমনই কর্মযজ্ঞ পালিত হলো। অঙ্কন প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনীতে পাঁচশত’র অধিক প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন এই প্রতিযোগিতায় l প্রত্যেককে স্মারক ও মানপত্র প্রদান করা হয় l
প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কাউন্সিল ICHFR এর কেন্দ্রীয় সভাপতি ক্যালকাটা হাইকোর্টের বর্ষীয়ান আইনজীবী মহম্মদ ইদ্রিস I

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :