May 4, 2024, 4:27 am

হিট অ্যালার্টে বন্ধ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্দেশনা উপেক্ষিত কোচিং সেন্টারে

এম. আইউব:

দেশে প্রচন্ড তাপদাহের মধ্যে হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। অবস্থা এতটাই অসহনীয় হয়ে উঠেছে যে, শিক্ষামন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে। অথচ তাপ লাগছে না কোচিং সেন্টার মালিকদের গায়ে! এ কারণে তারা কোচিং খোলা রেখেছেন। সেখানে উপেক্ষিত হচ্ছে সরকারি নির্দেশনা।
যদিও এক শ্রেণির সন্তান ‘নিপীড়নকারী’ অভিভাবক কোচিং খোলা রাখার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। তাদের দাবি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং যদি একসাথে বন্ধ থাকে তাহলে ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া না করে অন্যমনষ্ক হবে। এ কারণে যাই হোক না কেন কোচিং খোলা রাখতেই হবে! ফলে, কোচিং খোলা রাখতে বাধ্য হন বলে মালিকদের দাবি।
তীব্র তাপদাহের মধ্যে অতি প্রয়োজন ছাড়া দিনের বেলায় বাইরে চলাফেরা না করার পরামর্শ দিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। অথচ সরকার কী বললো না বললো তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই কোচিং মালিকদের। গরমের মধ্যে পুরোদমে চলছে কোচিং সেন্টারগুলো। স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের ব্যাচ করে প্রাইভেট পড়ানোও বন্ধ নেই। ফলে, তীব্র গরমের মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে বাইরে বের হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
মাস গেলে টাকা দিতে হবে ভেবে সন্তানদের কোচিংয়ে যেতে বাধ্য করছেন অভিভাবকরা। অপরদিকে, কোচিং সেন্টার মালিকরা বলছেন, রমজান ও ঈদের ছুটির কারণে দীর্ঘদিন কোচিং বন্ধ ছিল। অভিভাবকরাই এখন ক্লাস চালু রাখতে চাপ দিচ্ছেন। তাছাড়া, বড় কোচিং সেন্টারগুলোর ক্লাসরুমে এসি থাকায় গরমে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি হচ্ছে না। এজন্য তারা কোচিংয়ে ক্লাস চালাচ্ছেন।
যশোরে মোট ৫০ টির মতো কোচিং সেন্টার রয়েছে। এরমধ্যে মোটামুটি পরিচিত রয়েছে ২০ থেকে ২৫ টি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, প্যাগাসাস, রাইজিং স্টার, উদ্ভাষ-উন্মেষ, ইমদাদ স্যারের কোচিং, আলমাস, ড্রিম, সুব্রত স্যারের কোচিং, সুশান্ত স্যারের কোচিং। এর বাইরে কয়েকটি ক্যাডেট কোচিংও রয়েছে।
তীব্র গরমে যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার সেখানে কীভাবে কোচিং খোলা রাখা হয়েছে জানতে চাইলে আলমাস কোচিংয়ের পরিচালক আলমাস হোসেন বলেন, ‘কোচিং বন্ধ করেছি।’ কবে থেকে বন্ধ করেছেন জানতে চাইলে অলমাস বলেন, ‘আজ থেকে (গতকাল সোমবার)’। আলমাস হোসেন বলেন, ‘কোচিং খোলা রাখার জন্য অভিভাবকদের চাপ রয়েছে। তারা বলেন, স্কুল ও কোচিং একসাথে বন্ধ থাকলে শিক্ষার্থীরা বাজে কাজে সময় নষ্ট করে। নানা ধরনের বাজে কাজ থেকে ফেরাতে তারা কোচিং খোলা রাখার কথা বলেন।’ আবার কোনো কোনো অভিভাবকের বক্তব্য, ‘কোচিং যদি খোলা থাকে আর আমার সন্তান যদি না যায় তাহলে সে পিছিয়ে পড়বে। অন্যরাতো ঠিকই এগিয়ে যাবে।’
কোচিং মালিক ইমদাদ স্যার বলেন, ‘আমরা সকাল ও বিকেলে কোচিং করি। ঠান্ডার ব্যবস্থা রয়েছে। অসুবিধা হয় না।’ কোচিং মালিক সুশান্ত স্যার বলেন, ‘আমাদের এসির ব্যবস্থা রয়েছে। কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।’
এসব বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফুল আলমের কাছে জানতে ফোন করলেও তার শ্বশুর মারা যাওয়ায় বিস্তারিত কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে, সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল হান্নান বলেন, কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা শিক্ষা অফিসার মাহফুজুল হোসেন বলেন, ‘যেখানে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ, সেখানে কোচিং সেন্টার খোলা থাকে কী করে। আর কোচিং খোলা থাকলেও অভিভাবক তার সন্তানকে পাঠাবেন কেন। নতুন কারিকুলামে কোনো পরীক্ষা নেই। তাহলে কোচিংয়ে পাঠানোর তাড়া কেন অভিভাবকদের। আবহাওয়ার যে অবস্থা তাতে সন্তানদের ঘরের মধ্যে রাখা উচিত সবাইকে। সবমিলিয়ে অভিভাবকদেরই সচেতন হতে হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :