May 17, 2024, 9:19 pm

আদালতে চাকরির নামে ৫২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন কম্পিউটার অপারেটর

ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাপিয়ে আদালতে চাকরি দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে ৫২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বদলি হয়ে আসা স্টেনো-গ্রাফার কাম কম্পিউটার অপারেটর আরাফাত জোয়ার্দ্দার। তার বিরুদ্ধে এরইমধ্যে মামলা হয়েছে। সেই মামলায় তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

আদালতের বিজ্ঞ বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। অভিযুক্ত আরাফাতকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ সদর থানায় হওয়া মামলা ও লিখিত অভিযোগের বরাত দিয়ে জানান, চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের জনবল পূরণের জন্য গত ২০২৩ সালের ২৮ মার্চ ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ভোরের কাগজ ও স্থানীয় দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাপা হয়। ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ৪ জন নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, একজন ড্রাইভার, একজন জারিকারক ও একজন অফিস সহায়কের জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদনপত্র চাওয়া হয়।

রাজবাড়ী জেলা সদরের মহাদেবপুর গ্রামের মান্নান জোয়ার্দ্দার ও সীমা বেগমের ছেলে স্টেনো-গ্রাফার কাম কম্পিউটার অপারেটর আরাফাত জোয়ার্দ্দার রাজবাড়ী আদালত থেকে চুয়াডাঙ্গায় বদলি হয়ে আসেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর তিনি চাকরি প্রার্থীদের সঙ্গে কৌশলে যোগাযোগ শুরু করেন। এরপর চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে চুয়াডাঙ্গা রেলপাড়ার ছাইদুর রহমানের ছেলে রেলস্টেশনের কাছে মাছের আড়ৎ হক ফিস সাপ্লাইয়ের স্বত্বাধিকারী নাহিদ হোসেনের কাছ থেকে গত ২০২৩ সালের ৭ ডিসেম্বর বেলা ১টার দিকে ওই আড়ৎতে বসে ১৬ লাখ টাকা নেন। নাহিদ তার দু’ভাগ্নে আরিফুল ইসলাম ও আছির উদ্দিনের চাকরি দেওয়ার প্রস্তাব দিলে তিনি ৪০ লাখ টাকা দাবি করেন। ১৬ লাখ টাকা নেওয়ার সময় সে বলে বাকি টাকা চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর দিতে হবে।
টাকাগুলো গুনে নেওয়ার সময় নাহিদে সেটি তার মোবাইল ফোনে ধারণ করে রাখেন। টাকা দেওয়ার মুহূর্তে পৌর এলাকার হাজরাহাটী উত্তরপাড়ার মরহুম জামাল উদ্দিনের ছেলে মাসুদুর রহমান ও সাদেক আলী মল্লিকপাড়ার মরহুম হামিদুল হকের ছেলে আমিরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল।

এ ছাড়া আরাফাত জোয়ার্দ্দারের বিরুদ্ধে জেলার জীবননগর উপজেলার ধোপাখালী গ্রামের ডালিমের ছেলে সাইফুল ইসলাম চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক এবং নিয়োগ ও পদোন্নতি সংক্রান্ত বাছাই কমিটির সভাপতি মো. মাসুদ আলী বরাবর লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, সাইফুল ও মোক্তারপুর গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে তার ভাগ্নে মো. শারাফাৎকে আদালতে চাকরি দেবে বলে ৪০ লাখ টাকা প্রস্তাব দেয়।

চাকরি পরীক্ষায় অংশ দেওয়ার জন্য দুজনকে আরাফাত জোয়ার্দ্দার ২০২৩ সালের ৮ সেপ্টেম্বর প্রবেশপত্র দেয়। তারা দুজন ওই দিন আদালতের এজলাসে বসেই পরীক্ষা দেন। পরীক্ষা দেওয়ার পর ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর আরাফাত জোয়ার্দ্দার সাইফুল ইসলামকে নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে এবং তার ভাগ্নে শারাফাৎকে অফিস সহায়ক পদে যোগদানের জন্য নিয়োগপত্র দেয়। কিন্তু সাইফুল ইসলামের নিয়োগপত্রে জেলা জজের কার্যালয়, চুয়াডাঙ্গার আদেশ নং-১৭ (এ.টি.) এবং তারিখ ১১.০৯.২০২৩ উল্লেখ করে এবং মো. শারাফাৎতের নিয়োগপত্রে জেলা জজ কার্যালয়, চুয়াডাঙ্গার আদেশ নং-১৯ (এ.টি.) এবং ২৭.০৮.২০২৩ তারিখ উল্লেখ করে। সাইফুল ইসলামের নিয়োগপত্রে ১১.১০.২০২৩ তারিখ হতে ১৯.১০.২০২৩ তারিখের মধ্যে এবং শারাফাৎতের নিয়োগপত্রে ০৫.১০.২০২৩ তারিখ হতে ১১.১০.২০২৩ তারিখের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা জজ আদালতে যোগদান করতে হবে বলে উল্লেখ রয়েছে।

ডাকযোগে এ নিয়োগপত্র হাতে পাওয়ার পর ২০২৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বেলা আনুমানিক ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে আরাফাত জোয়ার্দ্দারকে ৩৬ লাখ টাকা নগদ পরিশোধ করা হয়।

এ টাকা নেওয়ার সময় আরাফাত জোয়ার্দ্দারের বাবা মান্নান জোয়ার্দ্দারসহ আরও অজ্ঞাত দুব্যক্তি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। এ টাকা গুলোগুণে নেওয়ার দৃশ্য মোবাইল ফোন ক্যামেরায় কৌশলে ধারণ করে রাখা হয়।

এ সময় জীবননগর উপজেলার মুক্তারপুর গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে কামাল হোসেন ও একই উপজেলার খয়েরহুদা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলীর ছেলে ইমরান আলী উপস্থিত ছিল।

তিনি আরও জানান, ওই দু’জনকে নিয়োগপত্র দেওয়ার কিছুদিন পর ডাকযোগে ওই নিয়োগ স্থগিত হয়েছে বলে তারা একটি পত্র পায়। যাতে উল্লেখ করা হয় যে, হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নং-৮০৬৪/২০২৩ এর নির্দেশে নিয়োগ স্থগিত রাখা হলো।

এরপর তারা ডাকযোগে আরও একটি পত্র পায়, তাতে উল্লেখ ছিল ৮০৬৪/২০২৩ মামলাটি ০৮.১১.২০২৩ তারিখে খারিজ হয়েছে। সে কারণে বিগত ১৯.১১.২০২৩ তারিখে আরও একটি পত্র দিয়ে বলা হয় নিয়োগপ্রাপ্ত সব প্রার্থীকে ০৮.০১.২০২৪ তারিখে যোগদান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে ওই তারিখে জেলা জজ আদালতে যোগদান করতে এসে তারা জানতে পারে, চুয়াডাঙ্গা জজ আদালত থেকে কোনো চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়া হয়নি।

আরাফাত জোয়ার্দ্দার প্রতারণার মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক এবং জেলা জজ আদালতের নিয়োগ ও পদোন্নতি সংক্রান্ত বাছাই কমিটির সভাপতি মো. মাসুদ আলীর স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্র এবং জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ মো. জিয়া হায়দারের স্বাক্ষর জাল করে আর্থিক সুবিধার মাধ্যমে নিয়োগপত্র দিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এ ঘটনার পর চুয়াডাঙ্গা শহরের রেলপাড়ার ছাইদুর রহমানের ছেলে নাহিদ হাসান বাদী হয়ে আরাফাত জোয়ার্দ্দারের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করে। মামলা নম্বর: ০২ তারিখ: ০১.০১.২০২৪।

এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে নিয়োগ কমিটির সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন জেলার জীবননগর উপজেলার ধোপাখালী গ্রামের ডালিমের ছেলে সাইফুল ইসলাম। এরপর থেকে আরাফাত জোয়ার্দ্দার চুয়াডাঙ্গা জজ আদালতে তার কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছে।

মামলার বিষয়টি চুয়াডাঙ্গা সদর থানা থেকে পাঠানো এক পত্রের মাধ্যমে জেলা ও দায়রা জজ অবহিত হন। তারপর অনুপস্থিতের কারণ দর্শানোর জন্য ২০২৪ সালের ৯ জানুয়ারি একটি অফিস আদেশ আরাফাত জোয়ার্দ্দারের রাজবাড়ী জেলার স্থায়ী ঠিকানায় এবং ওই মাসের ১৪ জানুয়ারি তার প্রতারণার বিষয়ে জানতে আরেকটি অফিস আদেশ ডাকযোগে পাঠানো হয়।

দুটি আদেশের কপি হাতে পাওয়ার পর তিনি ডাক বিভাগের প্রাপ্তি স্বীকার রশিদে স্বাক্ষর করে। পরে তিনি পুলিশের হাতে আটক হয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে গেলে তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :