May 1, 2024, 2:50 pm

ইলিশ, বাগদা চিংড়ি উৎপাদনকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে সরকার

সৈয়দ রুবাইয়াত হাবীব ॥
দেশে মাছের উৎপাদন বাড়াতে সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় ইলিশ ও চিংড়ি ইতোমধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এস এম রেজাউল করিম বলেন, ‘দেশের জাতীয় মাছ ইলিশ এবং বাগদা চিংড়ি ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেছে।’ এই দুটি প্রজাতি আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের নিজস্ব অবস্থান তৈরি করেছে, যা রপ্তানির সম্ভাবনা অনেকাংশে বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, একক প্রজাতি হিসেবে দেশের মোট মাছ উৎপাদনে ইলিশের অবদান প্রায় ১২ শতাংশ। রেজাউল করিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের জাটকা ও মা ইলিশ সংরক্ষণ কর্মসূচির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কারণে ইলিশের উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। জাটকা সংরক্ষণ, অভয়ারণ্য ব্যবস্থাপনা ও মা ইলিশ সংরক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ২ লাখ ৯৯ হাজার মেট্রিক টন থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইলিশ আহরণ ক্রমান্বয়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৭১ হাজার মেট্রেক টন। ২০০৯-১০ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত জাটকা সংরক্ষণে ৫ লাখ ২৮ হাজার ৪৮৫ দশমিক ৫৬ মেট্রিক টন এবং ২০১৬-১৭ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মা ইলিশ সংরক্ষণে ৬৬ হাজার ৪৬২ দশমিক ৩৬ মেট্রিক টন চাল দেওয়া হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. ইফতেখার হোসেনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মূলত দুর্বল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের ফলে ইলিশের আকার ও উৎপাদন উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে। রেজাউল করিম বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্ভাবনী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্রুত উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাত এই অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার। এছাড়া উদ্যোক্তা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন, গ্রামীণ অর্থনীতি সচল রাখা এবং রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে এ খাত ভূমিকা রেখে চলেছে। বিদেশে বাংলাদেশী চিংড়ির রপ্তানি বাড়ানোর লক্ষ্যে, ভেনামি চিংড়ির বাণিজ্যিক চাষ, যা হোয়াইট-লেগ চিংড়ি চাষ নামেও পরিচিত, এর রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণের জন্য পাইলট চাষের পর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।
ইলিশ উৎপাদন ছাড়াও, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) দেশী মাছ সংরক্ষণের অংশ হিসেবে ৪০ প্রজাতির দেশী বিপন্ন মাছের প্রজনন কৌশল ও চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রথমবারের মতো দেশি মাছের জীবন্ত জিন ব্যাংক স্থাপন করেছে। এই জিন ব্যাংকে এ পর্যন্ত ১০২ প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ করা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। বিএফআরআই-এর বিজ্ঞানীরা ‘সুবর্ণ রুহি’ নামে একটি নতুন রুহির জাত উদ্ভাবন করেছেন যা বিভিন্ন নদীর অরিজিনাল রুহির ক্রসব্রিডিং। বিএফআরআই ইলিশ সম্পদের উন্নয়ন এবং দেশীয় মাছের প্রজাতি সংরক্ষণে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদক ২০২০ পেয়েছে। এছাড়া বিগত ১৫ বছরে বর্তমান সরকার দেশে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যেমন ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম নির্ধারণ এবং ইলিশের নতুন অভয়ারণ্য স্থাপন, কৈ মাছের টিকা উদ্ভাবন, মিঠা পানির ঝিনুকের মুক্তা উৎপাদন, ইলিশ উৎপাদন ইত্যাদি। কুচিয়া এবং শীলা কাঁকড়া পোনা, বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ২৭ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল শনাক্ত করা এবং ছয় প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল চাষ পদ্ধতির বিকাশ।
দেশের অর্থনীতিতে ইলিশ ও চিংড়ির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে রেজাউল করিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় দেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :