April 27, 2024, 2:43 pm

ধান রক্ষায় ইঁদুরের লেজ প্রতি ১০ টাকা দেওয়ার ঘোষণা

জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার কৃষককের প্রধান ফসল বোরো ধান। তবে বোরো ক্ষেতের ধান গাছ কেটে নষ্ট করছে ইঁদুর। ক্ষেতে বিষমাখা টোপ, আতপ চালের টোপ এবং ফাঁদ পেতেও ইঁদুর নিধনে ব্যর্থ হচ্ছেন কৃষকরা। তাই ধানের উৎপাদন কমে যাওয়ার আশংকায় চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন তারা। যদিও এখনো পর্যন্ত কত হেক্টর জমির ফসল ইঁদুরে নষ্ট করেছে তা নিরুপন করতে পারেনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
বোরো আবাদ শেষে ক্ষেতে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা দেয়। কীটনাশক প্রয়োগ করে এটি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। তারপরই শুরু হয়েছে ইঁদুরের উৎপাত। উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়নের পাকুড়তিয়া বিল, পাটগাতী ইউনিয়নের গিমাডাঙ্গার বিল, গোপালপুর বিল সহ কয়েকটি বিলের ধান গাছের নিচের অংশ খেয়ে ফেলেছে ইঁদুর। ইঁদুরে কাটা গাছ মারা যাচ্ছে।
ফসল রক্ষায় তাদের পাশে এসে দাড়িয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ইঁদুর দমনে কৃষকদের সাথে মতবিনিময় সভা, মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করছেন অধিদপ্তর। আগামী ৩০ চৈত্রের মধ্যে ইঁদুর মেরে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসে লেজ জমা দিলেই লেজ প্রতি ১০ টাকা দেওয়া ঘোষনা দিয়েছে ওই তারা।
কৃষি অফিস সুত্রে জানাগেছে, চলতি মৌসুমে টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ৮ হাজার ৬শ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬১ হাজার ৯শ’২০ মেট্রিক টন।
গিমাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক তরিকুল ইসলাম বলেন, টুঙ্গিপাড়া বিল বেষ্টিত। এখানে এক ফসলী বোরো ধানের জমি বেশি। বোরো ধানই আমাদের প্রধান ফসল। বোরো রোপনের পর পোকার আক্রমন হয়। সেটি কৃষি বিভাগের পরামর্শে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এখন ইঁদুরের উপদ্রব শুরু হয়েছে। ধান রক্ষায় বাঁশের কঞ্চি গেড়ে তাতে পলিথিন টাঙিয়ে দিয়েছি। আবার অনেকে ক্ষেতের চারপাশে ইঁদুর মারার ফাঁদ তৈরি করে রেখেছেন। কেউ কেউ খাবারে বিষ মিশিয়ে ক্ষেতের চারপাশে রেখে দিয়েছেন । কিন্তু তাতেও কোন কাজ হচ্ছে না। ইঁদুর ধান গাছের গোড়া কেটে দিচ্ছে। এতে গাছ মারা যাচ্ছে। ইঁদুর নিধনে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি।
পাকুড়তিয়া গ্রামের চাষি মিলু মুন্সী বলেন, ৪ বিঘা জমিতে গত বছর ২শ’ থেকে আড়াইশ’ মণ ধান পেয়েছিলাম। সেই জমিতে এবার ১শ’ থেকে দেড়শ’ মণ ধানও হবে না। ধানের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আশার আশংকা করছি। ইঁদুর আমাদের সব শেষ করে দিচ্ছে।
গোপালপুরের কৃষক বরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, এখন বোরো ধানের শীষ বের হচ্ছে। এঅবস্থায় ক্ষেতে ইঁদুরের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেও ইঁদুর দমন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই কষ্টের ফসল রক্ষায় দুশ্চিন্তায় আছি। এই ফসল রক্ষা করতে না পারলে সারা বছর চাল কিনে ক্ষেতে হবে।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে ইঁদুরের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই ইঁদুর দমনে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে মাঠ পর্যায়ে মতবিনিময় সভা , মাইকিং, লিফলেট বিতরণ করছি। পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মীয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমরা ইঁদুর দমেনের নতুন কৌশলের ম্যাসেজ পৌঁছে দিচ্ছি।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, কৃষককে ইঁদুর দমনে উদ্বুদ্ধ করছি। আগামী ৩০ চৈত্র পর্যন্ত ইঁদুরের লেজ প্রতি ১০ টাকা দেওয়ার ঘোষনা দিয়েছি। উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা লেজের হিসাব রাখবেন। ৩০ চৈত্রের পরে কৃষকের প্রাপ্য টাকা দেয়া হবে। এখন পর্যন্ত ইঁদুর কত বিঘা জমির ধানের ক্ষতি করেছে সেটা নিরুপন করা সম্ভব হয়নি জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, এ ব্যাপারে কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :