রাশিদা য়ে আশরার।
“এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,
সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি।”
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলা নিকেতনের দেশ বাংলাদেশ, ঋতু পরিক্রমায় ছয়টি ঋতুর আবির্ভাব হয়- স্বমহিমায় প্রস্ফুটিত হয় বারবার। প্রকৃতি ও পরিবেশে হয় আমূল পরিবর্তন, আপন খেয়ালে মেতে ওঠে মাঠ- ঘাট- নদী, ফুল পাখি, আলো- আবহাওয়া জনজীবনে ও পড়ে তার প্রভাব।
আরও পড়ুন-দর্শনা পৌর মেয়র মতিয়ার রহমানের লাশ আনা হচ্ছে আজ
পৌষ ও মাঘ মাস শীতকাল হলেও অঘ্রায়ণ হতেই তার
সূচনা হতে শুরু করে। পত্র কুঞ্জে জলে স্থলে সবখানে পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়, আসলেই হেমন্তের পৌঢ়ত্তের পর আসে জড়তাগ্রস্থ শীত ঋতুর নির্মম বার্ধক্য।
শুষ্ক কাঠিন্য ও রিক্ততার বিষাদ ময় আলো বাতাসে গাছগুলো যেন কঙ্কালসার; খালে- বিলে নদীতে পানি শুকাতে থাকে জেগে উঠে চর! চেহারা হয়ে ওঠে কিছুটা শ্রীহীন নিষ্প্রভ- গায়ের ত্বক শুষ্ক হতে থাকে ও মানুষ গুলো যেন শীতে জড়োসড়ো অশাড় অন্তিমশার শূন্য! সারারাত ঘন কুয়াশায় আবৃত নিঝুম প্রকৃতি চারিদিকে একরাশ শূন্যতা বিরাজমান… নিঃস্ব প্রকৃতির মাঝে শীতবস্ত্র লেপকাথা কম্বল গায়ে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে তন্দ্রাচ্ছন্ন রাত্রি যাপন।
শীতে শৈত্য প্রবাহ দেখা যায় মাঝে মাঝে তখন সূর্যের দেখা মেলে না প্রায় বললেই চলে,শীত প্রবাহ বেড়ে যায় প্রচুর পরিমাণে- হাড় কাঁপানো শীত অনুভূত হয়;
হিমশীতল ঠান্ডায় জড়োসড় বয়োঃবৃদ্ধ শিশু কিশোর, দরিদ্র অসহায় মানুষদের দুর্ভোঘ বেড়ে যায় চরম, কখনো খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুনের কুণ্ডলী পাকিয়ে- জীর্ণ কাপড়ের আচ্ছাদনে মুড়ে কোন মতে কাটে তীব্র শীত নিবারণের আকাঙ্ক্ষায়!
শীতকালে স্বভাবতই সূর্যের দেখা একটু দেরিতেই মিলে, ভেজা ঘাস উপর সোনালী রোদ মুক্ত দানার মত চকচক করে, সকালের মিষ্টি রোদের সোনালী আলো শরীরে জড়িয়ে হৃদয় মন পুলকিত ও শিহরিত হয়! শীত ঋতুতে খেজুর রস, নতুন শাকসবজি বাঁধাকপি ফুলকপি, সিম টমেটা বরবটি, নতুন ধানের পিঠা নবান্ন উৎসব কৃষকের ঘরে ঘরে আনন্দ। মনে পড়ে যায় ফিরে যায় শৈশবে সেই অতীতে… নদীর তীরে গ্রাম্য মেলা সাজসাজ রব মিঠাই মন্ডা, মাটির পুতুল রকমারি খেলনা সারি সারি!
আঁকাবাঁকা মেঠো পথ দু’ধারে কাশবন বাঁশ ঝাড়,সরিষা ফুলের হলুদ বিছানা বিছিয়ে মুহুর্মুহু গন্ধ চারিদিকে; মৌমাছিদের আনাগোনা মধু সংগ্রহের ধুম, শিউলি, গাদা, ডালিয়া, সূর্যমুখী গোলাপ বিভিন্ন ফুলেল সুভাষ নয়নাভিরাম দৃশ্য অন্যরকম এক মুগ্ধতায় ঋতুর রানীর
সমাহার!
শহরের জীবন অনেকটা একঘেয়েমি অন্যরকম এক ব্যস্ততা, বাস্তবতার সঙ্গে প্রতিমুহূর্তে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা, সংগ্রামী জীবন ব্যতিব্যস্ত সময় তবুও একটুখানি ফুসরত মিললে শহরমুখী মানুষগুলো ছুটে যায় প্রকৃতির খোঁজে- শিকড়ের টানে আপন ঠিকানায়। কখনোবা শহরের পাশে অথবা দূরে প্রকৃতির পাশে কিছুটা সময় কাটায় ব্যস্ততার বাইরে।
শীতের আবির্ভাবে কাব্য কবিতার ফসল ফলায় কবি,
হৃদয়ের ভাবাবেগে নিঃসীম শূন্যতায় শব্দের জাল বুনে।
স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা এমনকি অফিসে কর্মচারীগণ আনন্দ উৎসব আয়োজনে মেতে ওঠে কিছুটা সময়- পিকনিক স্পটগুলো জন মানুষের সরব উপস্থিতিতে মুখরত হয়ে ওঠে প্রকৃতি ও পরিবেশ। ভালো- মন্দ সবকিছুর উর্ধে উঠে শীত ঋতু ভিন্ন এক মাত্রায় উদ্ভাসিত; তাই ঋতু বৈচিত্রে ভরপুর অন্যতম উৎস ঋতুর রানী হিসাবেও অবিহিত করা যায় এই শীত মৌসুমকে।
২০২২
Leave a Reply