April 27, 2024, 6:36 am

একাত্তরের নির্মমতা আমরা ভুলিনি

সংগ্রাম মিত্র।।

নেতাজী ঘনিষ্ঠ বিপ্লবী হেমন্ত কুমার বসুকে কলকাতার রাজপথে নৃশংস ভাবে গুলি করে হত্যা করেছিল। একাত্তরের সেই কলকাতার রাজপথ নি:স্তব্ধ। ৩/১ নন্দরাম সেন স্ট্রিট, উত্তর কলকাতার এই ঠিকানাতেই ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে জন্মেছিলেন হেমন্ত কুমার বসু। ১৯০২ সাল, ব্রিটিশ ভারতবর্ষে স্বাধীনতা আন্দোলন জোরদার হচ্ছে তখন। মা আনন্দসুন্দরী দেবীর ইচ্ছেয় বাবা পূর্ণচন্দ্র বসু ৭ বছরের ছোট্ট ছেলেকে ভর্তি করে দিয়ে এলেন কলকাতার আর্য স্কুলে। এই স্কুলজীবন থেকেই বিপ্লবী ভাবাদর্শে দীক্ষা হয় তাঁর।

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় স্কুলের বন্ধুরা এসে জামায় কালো ব্যাজ লাগিয়ে দিয়েছিল। এই সময় থেকেই কিশোর হেমন্ত জড়িয়ে পড়লেন বিপ্লবী আন্দোলনে। পরের বছর, ১৯০৬ সালে কয়েকজন বন্ধু মিলে যোগ দিলেন অনুশীলন সমিতিতে। সেখানকার কিশোর বাহিনীর সদস্য হয়ে দেশমায়ের মুক্তির শপথ নিলেন ১১ বছরের ছোট্ট হেমন্ত । অনুশীলন সমিতি বেআইনি ঘোষিত হলেও থেমে থাকেনি হেমন্ত কুমারদের কার্যকলাপ, বিপ্লবী দলের হয়ে গোপনে খবর সংগ্রহ করতেন হেমন্ত। এই কাজের সূত্রেই পরিচয় ঘটে বহু স্বনামধন্য বিপ্লবীর সঙ্গে।

মহাবিপ্লবী রাসবিহারী বসু ও বাঘা যতীনের নেতৃত্বে বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানে প্রথমবার সক্রিয় ভূমিকায় এগিয়ে এলেন হেমন্ত। এই সময় বেশ কিছুদিন গা ঢাকা দিতে হয়েছিল, অরবিন্দ ঘোষ, চারু রায়, ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত প্রমুখের সঙ্গে আত্মগোপন করেছিলেন হেমন্তও। পাকেচক্রে ওই বছরেই সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে আলাপ। সুভাষ তখন জাতীয় কংগ্রেসের তরুণ নেতা। বন্ধুর পাশে থাকবেন বলে প্রথাগত পড়াশোনা ছেড়ে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিলেন হেমন্ত ।

অসহযোগ আন্দোলনের সময় প্রথম জেল খেটেছিলেন হেমন্ত কুমার বসু। পরে ১৯৩০ সালের মহিষবাথান লবণ আন্দোলন, ১৯৩১-এর আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দিয়ে এবং ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা দিবস পালন করার জন্য কারাবরণ করেন তিনি। দুবছরের ছোট সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে হেমন্তের আলাপ ততদিনে গড়িয়ে গেছে প্রবল বন্ধুতায়। ১৯২৮ সালে নাগাদ কলকাতায় কংগ্রেস অধিবেশনের জন্য সুভাষচন্দ্র যে বিশাল স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন, তারই অন্যতম ছিলেন হেমন্ত কুমার।

হরিপুরা অধিবেশনে  কংগ্রেসের সঙ্গে মতবিরোধে তিনি সুভাষচন্দ্রকে সমর্থন করেছিলেন হেমন্ত৷ ফরোয়ার্ড ব্লক প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন বন্ধু সুভাষের সঙ্গে। সুভাষচন্দ্র গোপনে দেশত্যাগ করার পর ব্রিটিশ পুলিশের বিষনজর পড়ে হেমন্ত কুমারের উপর। সবার আগে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। হেমন্ত কুমার বসু ছিলেন এক আপসহীন সংগ্রামী। কোনওকিছুই দমাতে পারেনি তাঁকে। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে রাজ্য বিধানসভার সদস্যও হন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও সক্রিয় রাজনীতিতে ছেদ পড়েনি তাঁর। মানুষের সঙ্গে মিশে মানুষের কাজ করতে ভালোবাসতেন বরাবর।
সকলের শ্রদ্ধেয় ও ভালোবাসার মানুষ ছিলেন হেমন্তকুমার। অজাতশত্রু হিসাবে পরিচিত ছিলেন দলে। রাস্তায় দেখা হলে লোকজন প্রণাম করত পায়ে হাত দিয়ে। সেই মানুষটাকেই খুন করা হয়েছিল কলকাতার রাজপথে প্রকাশ্য দিবালোকে। নকশাল আন্দোলন চলাকালীন ১৯৭১ সালের ২০ শে ফেব্রুয়ারি মহানগরীর রাস্তায় একদল যুবকের হাতে ছুরিকাহত হয়ে মারা গেছিলেন নেতাজি-ঘনিষ্ঠ ব্রিটিশ বাংলার এই স্বাধীনতাকর্মী।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :