April 30, 2024, 5:08 pm

একুশ আমার অহংকার

মাতৃভাষার মাধ্যমে জীবন ও জগত সম্পর্কে যে গভীর বোধ জাগ্রত হয় তা আর বিদেশী কোন ভাষার মাধ্যমে তৈরি হয় না। মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ‘অমর একুশের ষাট বছর’ শিরোনামে বাংলাভাষার ওপর একটি রচনা লিখেছিলেন। ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি ওই স্মারকপত্র প্রকাশ করে। সেখানে মাতৃভাষার সর্বগামিতার প্রশ্নে তিনি অস্ট্রেলিয়ার কিম্বার্লি ল্যাঙ্গুয়েজ রিসোর্স সেন্টারের কর্মকর্তা জুন অস্কারের উদ্ধৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আপনি নিজের অনুভূতি যেভাবে নিজের ভাষায় প্রকাশ করতে পারেন, সেভাবে ইংরেজিতে প্রকাশ করতে পারবেন না। আপনি অনুভব করতে এবং বুঝতে পারছেন কী বলা হচ্ছে, কিন্তু ঠিক তা মাথায় ঢুকছে না।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ২৯তম অধিবেশনে বাংলা ভাষায় ভাষণ দান করে এর আন্তর্জাতিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ রাষ্ট্রপতি হিসেবে এক আদেশে তিনি বলেন, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। বাংলা আমাদের জাতীয় ভাষা। তবুও অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে স্বাধীনতার তিন বছর পরও অধিকাংশ অফিস-আদালতে মাতৃভাষার পরিবর্তে বিজাতীয় ইংরেজী ভাষায় নথিপত্র লেখা হচ্ছে। মাতৃভাষার প্রতি যার ভালোবাসা নেই, দেশের প্রতি যে তার ভালোবাসা আছে এ কথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।’ বঙ্গবন্ধুর এ ক্ষোভযুক্ত বাণী যে প্রেক্ষাপটে উচ্চারিত হয়েছিল, সে প্রেক্ষাপট যে এখনও খুব বদলেছে তা নয়। যা বদলাচ্ছে সেটা যে বাংলার প্রতি প্রীতি বা বাংলায় দক্ষতা বেড়ে গেছে বলে বদলাচ্ছে তা নয়, বেড়েছে ইংরেজীর প্রতি প্রীতি বজায় থেকে এবং নানা কারণে ইংরেজীতে দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে।
অর্থাৎ ওই চেতনা এখনও কাজ করছে যে বাংলা ভাষার মাধ্যমে বুঝি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। বুদ্ধির মুক্তি ও জ্ঞানের পথে দেশের কিছু মানুষকে নয়, সব মানুষকে সহযাত্রী করতে চাইলে বাংলা ভাষার ওপর নির্ভর করা ছাড়া উপায় নেই।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :