May 6, 2024, 10:32 am

চট্টগ্রামে কোভিড বিশেষ গণটিকা ক্যাম্পেইন সম্পন্ন

দৈনিক পদ্মা সংবাদ ডেস্ক :
ভাসমান তরকারি বিক্রেতা মো. শাহজাহান (২৮) যখন কোভিড টিকা গ্রহণ করে বাসার পথ ধরেছে তখন তার চোখে-মুখে ভেসে উঠেছিল স্বস্তির আবহ। এক ধরণের আত্মতৃপ্তি অনুভব করছে সে। নিজকে কিছুটা ভাগ্যবানও ভাবা শুরু করেছে। কেননা, সকাল থেকে দীর্ঘ সারিতে রোদ ছাঁয়ায় দাঁড়িয়ে অবশেষে টিকা নিতে পেরেছে। তাইতো তার চোখে মুখে খুশির আভা। একই অভিব্যক্তি ফুটে ওঠেছে ছুটা কাজের বুয়া জাহিদের মায়ের মধ্যে। নাম একটা তার আছে। কিন্তু সে নাম এখন আর সচরাচর ব্যবহার হয় না। আট বছর বয়সী ছেলে জাহিদই এখন তার পরিচয়ের মাধ্যম। সে নামে ডেকেই কথা বলে তার খুশির মাত্রা বুঝা গেল। সু-শৃংখলভাবে লাইনে দাড়িয়ে বিনামূলে টিকা নিতে পেরে সে যারপরনাই আনন্দিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষাই খুজে পাচ্ছেনা সে। বার বার কথার খেই হারিয়ে ফেলছে।

এমনই সব খন্ড খন্ড চিত্র দেখা গেল আজ চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ সরকারি কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ের বালিকা শাখার অস্থায়ী কোভিড টিকা কেন্দ্রে। অসংখ্য নারী-পুরষকে দেখা গেছে সুন্দরভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকার জন্য অপেক্ষা করতে। স্বেচ্ছাসেবকগণ সর্বাত্বক সহযোগিতা করছেন তাদের।

সরকার ঘোষিত ১ কোটি মানুষকে গণটিকা দেওয়ার বিশেষ ক্যাম্পেইন এর অংশ হিসেবে আজ চট্টগ্রামের বিভিন্ন কেন্দ্রে গণটিকা প্রদান সফলভাবে সম্পন্ন হয়। সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় এ কার্যক্রম। চলেছে একটানা সন্ধ্যা পর্যন্ত। চট্টগ্রামে টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল ৪ লাখ। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লক্ষ ৮৪ হাজার ৫ শত।

নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের প্রতিটি ওয়ার্ডে ৩টি অস্থায়ী কেন্দ্রে টিকা প্রদান করা হয়। এছাড়া স্থায়ী কেন্দ্রগুলোতে টিকাদান অব্যাহত ছিল। এর বাইরে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অতিরিক্ত ২৫টি ভ্রাম্যমাণ দল কাজ করেছে। প্রতিটি দলে ৫ শত জনকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সিটি এলাকার গড়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে ৪ হাজার ৫ শত টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বড় ওয়ার্ডগুলোতে এ সংখ্যা আরো বেশি। এছাড়া ১২টি কেন্দ্রে বুস্টার ডোজ প্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, জোনাল মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল অফিসার, ইপিআই কর্মসূচিতে নিযুক্ত সরকারি বেসরকারি স্বায়ত্তশাসিত এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় সম্পৃক্ত সকল কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য সহকারী, স্বাস্থ্যকর্মী, সিটি কর্পোরেশনে কর্মরত সংশ্লিষ্ট ইপিআই টেকনিশিয়ান, সুপারভাইজার, স্বাস্থ্য সহকারী, টিকাদান কর্মী, ও স্বাস্থ্যকর্মীগণ এ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন।

সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী সকালে নগরীর কাট্টলি ওয়ার্ডের মোস্তফা হাকিম স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে টিকাদান কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। তিনি টিকা গ্রহীতাদের সাথে কথা বলেন। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে টিকা দেওয়ার জন্য তিনি এসময় সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। পরে তিনি নগরীর আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের লালদীঘি পার্কে গণটিকাদান উৎসবে যোগ দেন।

চট্টগ্রামের ১৪টি উপজেলায়ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় গণটিকা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ইউনিয়নের প্রতি ওয়ার্ডে ৩টি অস্থায়ী কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হয়েছে। পৌরসভাগুলোর প্রতিটি ওয়ার্ডে ৩টি অস্থায়ী কেন্দ্র স্থাপন করে টিকা দেওয়া হয়। এছাড়া নির্ধারিত কেন্দ্রের বাইরে প্রতি উপজেলায় ৫টি এবং জেলায় ২০টি ভ্রাম্যমাণ দল টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। প্রতিটি দলের জন্য ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ৩ শত জনকে টিকা প্রদান করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

আজকের বিশেষ গণটিকা প্রদান কার্যক্রম পরিদর্শন করতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) সাবিনা ইয়াসমিন ও অতিরিক্ত সচিব (বাজেট) রাশেদা আক্তার গতকাল (২৫ ফেব্রæয়ারি) চট্টগ্রামে এসেছেন। তাঁরা আজ বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর, সিলি সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরীর সাথে বিভিন্ন টিকা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান সকালে নগরীর অফিসার্স ক্লাব টিকা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।

আজ এ বিশেষ গণটিকা ক্যাম্পেইনে ১২ বছর ও তদুর্ধ সকল নাগরিককে টিকা প্রদান করা হয়। জাতীয় পরিচয় পত্র ও নিবন্ধন ছাড়াই দেওয়া হয়েছে টিকা। এছাড়া যারা নিবন্ধন করে টিকা নিতে পারেননি, তাদেরকেও আজ টিকা প্রদান করা হয়। মোবাইল ফোন নাম্বারে টিকা গ্রহীতার তথ্য নথিভূক্ত করে টিকা প্রদানের ব্যবস্থা ছিল। টিকা দেওয়ার পর গ্রহীতাদের একটি কার্ড দেওয়া হয় যা পরবর্তীতে টিকা গ্রহণের প্রমাণক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :