May 17, 2024, 1:40 pm

চুয়াডাঙ্গায় বেড়েছে সরিষার আবাদ

প্রণোদনা সুবিধায় ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে চুয়াডাঙ্গা জেলার ৪টি উপজেলায় গত ৫ অর্থ বছরে বেড়েছে সরিষার আবাদ। আমন ধান কাটার পর বোরো ধান রোপনের আগে কৃষকরা তাদের জমিতে সরিষার আবাদ করছে। তারা সরিষার ভাল ফলন পাবে বলে আশা প্রকাশ করেছে।

সরিষা আবাদে প্রণোদনা বাড়িয়ে আরো বেশী সংখ্যোক কৃষককে এর সুবিধা আওতায় আনার দাবী জানিয়েছে কৃষকরা।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ৩৫০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১ হাজার ৭৭৫ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ৪০০ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ৩১১ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। ওই অর্থ বছরে সদর উপজেলায় ২ লাখ ২৮ হাজার ৫৭০ টাকার প্রণোদনা সুবিধা পেয়েছিল ২৮৫ জন। আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১৭ লাখ ৪০ হাজার ৩৪০ টাকার প্রণোদনা সুবিধা পেয়েছিল ২ হাজার ১৭০ জন, দামুড়হুদা উপজেলায় ১ লাখ ৪৯ হাজার ১৬০ টাকার প্রণোদনা সুবিধা পেয়েছিল ২২০ জন ও জীবননগর উপজেলায় ২ লাখ ২০ হাজার ৩৫০ টাকার প্রণোদনা সুবিধা পেয়েছিল ৩২৫ জন কৃষক।

২০২০-২০২১ অর্থ বছরে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ১৯০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১ হাজার ৫৬৫ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ৩০২ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ২০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। এ অর্থ বছরে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৮০০ টাকার প্রণোদনা সুবিধা পেয়েছিল সদর উপজেলায় ৪০০ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ২০০ জন প্রণোদনা সুবিধা পেয়েছিল ৮৮ হাজার ৪০০ টাকা, দামুড়হুদা উপজেলায় ২০০ জন প্রণোদনা সুবিধা পেয়েছিল ৭১ হাজার ৬০০ টাকা ও জীবননগর উপজেলায় ২০০ জন কৃষক প্রণোদনা সুবিধা পেয়েছিল ৭১ হাজার ৬০০ টাকা।

২০২১-২০২২ অর্থ বছরে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ১৬০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১ হাজার ৬০৫ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ২৫০ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ৩৭৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। সে সময় সদর উপজেলার ১৭০ জন কৃষক প্রণোদনা সুবিধা পেয়েছিল ৬৭ হাজার ৩৬০ টাকা, আলমডাঙ্গা উপজেলার ১ হাজার ৩৯০ জন কৃষক প্রণোদনা সুবিধা পেয়েছিল ৫ লাখ ৩৭ হাজার ৯৪০ টাকা, দামুড়হুদা উপজেলার ২৭০ জন কৃষক প্রণোদনা সুবিধা পায় ৯৯ হাজার ৯০০ টাকা ও জীবননগর উপজেলায় ১৭০ জন কৃষক প্রণোদনা সুবিধা পায় ৬২ হাজার ৯০০ টাকা।

২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ২৭৮ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ২ হাজার ১৫০ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ৩৫৭ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। ওই সময় সদর উপজেলার ৭৪০ জন কৃষক ২ লাখ ৯৬ হাজার, আলমডাঙ্গা উপজেলার ৭ হাজার ৩৫০ জন কৃষক ২৯ লাখ ৪০ হাজার, দামুড়হুদা উপজেলার ১ হাজার ১৬০ জন কৃষক ৪ লাখ ৩১ হাজার ৩৫৬ ও জীবননগর উপজেলার ১ হাজার ২৫০ জন কৃষক ৫ লাখ টাকা প্রণোদনা সুবিধা পেয়েছিল।

২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৩১০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ২ হাজার ৪৮৫ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ৩১০ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ৪১০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এ আবাদে সদর উপজেলার ১ হাজার ১২০ জন কৃষক ৬ লাখ ২৬ হাজার ৬৪০ টাকা, আলমডাঙ্গা উপজেলার ৮ হাজার ৬৪০ জন কৃষক ৪৮ লাখ ৩৪ হাজার ৮০ টাকা, দামুড়হুদা উপজেলার ১ হাজার ৪৩০ জন কৃষক ৭ লাখ ২৫ হাজার ১০ টাকা ও জীবননগর উপজেলার ১ হাজার ৪১০ জন কৃষক ৭ লাখ ১৪ হাজার ৮৭০ টাকার প্রণোদনা সুবিধা পেয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে এ জেলায় সরিষার উৎপাদন হয়েছিল ৪ হাজার ২৫৪ মেট্রিক টন, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে সরিষা উৎপাদন হয় ৩ হাজার ২৪ মেট্রিক টন, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে সরিষার উৎপাদন হয়েছিল ৩ হাজার ৩২১ মেট্রিক টন, ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে সরিষা উৎপাদন হয় ৪ হাজার ২০১ মেট্রিক টন ও ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ৪ হাজার ২৩২-৩৩ মেট্রিক টন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এবার কৃষরা টরি-৭ এবং বারি-৯,১৩ ও ১৪ জাতের সরিষা বেশী আবাদ করেছে। সরিষা ফসল উঠতে ৮৫ থেকে ৯০ দিন সময় লাগে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমিরুল হক জানান, চুয়াডাঙ্গার মাটি সরিষা চাষের জন্য বেশ উপযোগী। টরি-৭ জাতের সরিষা প্রতি বিঘায় ৩ থেকে সাড়ে তিন মন, রাই-৫ জাতের সরিষা প্রতি বিঘায় সোয়া ৩ থেকে সাড়ে ৩ মন, বারি জাতের ৭-৮ সরিষা প্রতি বিঘায় সাড়ে ৬ থেকে ৮ মন, বারি-৯-১০ জাতের সরিষা প্রতি বিঘায় ৬ থেকে ৮ মন, বারি-১১ জাতের সরিষা প্রতি বিঘায় সাড়ে ৬ থেকে ৮ মন,বারি-১২ জাতের সরিষা প্রতি বিঘায় ৫ থেকে ৬ মন, বারি-১৩ ও ১৪ জাতের সরিষা প্রতি বিঘায় ৭ থেকে ৯ মন উৎপাদন হয়।

চুয়াডাঙ্গা শৈলগাড়ী গ্রামের সরিষা চাষী তাজু বলেন, ১২ কাঠা জমি পড়েই থাকে। ওই জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। এবার দেড় মন মত সরিষা হবে। খরচ দু’হাজার হয়েছে। ৪ হাজার টাকা লাভ থাকবে। এরপর এই জমিতে কচুর আবাদ করবো

একই গ্রামের সরিষা চাষী আজিজুল জানান, এক বিঘা জমিতে আনুমানিক মন তিনেক সরিষা হবে। এ সময়টিতে জমি পড়েই থাকে। সরিষা লাভ জনক হবে বলে ধারনা করছি। সামনের দিনে আবার ভালমত সরিয়ার আবাদ করতে পারলে ভাল। এক বিঘা জমিতে আনুমানিক ৩ মন সরিষা ফলন হবে। এক বিঘা জমিতে দু’থেকে আড়াই হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ৩ মন সরিষার বাজার মূল্য ১২ হাজার টাকা পাওয়া যাবে। সরিষা ওঠার পর এ জমিতে ধান লাগাবো।

ওই গ্রামের সরিষা চাষী ফজলু বলেন, ২২ কাঠা জমিতে সরিষা আবাদ করেছি। সরিষা ভাল হয়েছে। এ সময় জমি ফাঁকাই পড়ে থাকে। আবাদে ২২ শত টাকা মত খরচ হয়েছে। ৩ থেকে সাড়ে ৩ মন সরিষা হবে। কৃষি অফিসার মাঠে এসে চাষাবাদ দেখাশুনা করে। যে বীজ দেয় তা সবাই পায়না। যদি বীজ দেয়া বাড়াই তাহলে চাষীরা তাদের পড়ে থাকা জমিতে আরো বেশী সরিষার চাষ করতে পারবে।

সরিষা চাষী ফজলুর পাশের জমিতে সরিষা আবাদ করেছে সাদিব,সে জানায়, ধান আবাদের আগে এ জমিটা পড়েই থাকতো। ১০ কাঠা জমিতে সরিষা চাষ করলাম। সরিষা ভালই হয়েছে। এক থেকে দেড় মন সরিষা হতে পারে। সরকার যদি সহযোগীতা করে তাহলে আমরা এগিয়ে যেতে পারি। সহযোগীতা পেলে অনেক পড়ে থাকা জমিতে সরিষা চাষ সম্ভব।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা জানান, ‘চুয়াডাঙ্গা জেলাতে সরিষার আবাদ বেড়েছে। সরকারের প্রণোদনার ফলে কয়েক বছর সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরিষা আমন আবাদের শেষের দিকে রিলে পদ্ধতিতে চাষ শুরু হয়। ভাল জাতের সরিষা আবাদে কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। তেল ফসলে চাহিদা আস্তে আস্তে পূরণ হবে। দেশের বাইরে থেকে তেল আমদানী করতে বিপুল পরিমান বৈদেশীক মুদ্রা খরচ হয়। এ প্রক্রিয়ায় সরিষার আবাদ করলে তেলের উৎপাদন বাড়বে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গায় সরিষার আবাদ বাড়ানোর জন্য চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।’

বিঘা প্রতি সরিষার আবাদ ৪ থেকে সাড়ে ৪ মন হচ্ছে। এক কেজি সরিষা ভাঙ্গালে সাড়ে ৪০০ গ্রাম তেল পাওয়া যায়। সরকারীভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এজন্য কৃষকদের সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে। দেশী সরিষা মাড়াই করে ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম, টরি-৭ জাতের সরিষা প্রতি কেজি মাড়াই করে ৩৮০ থেকে ৪১০ গ্রাম, রাই-৫ জাতের সরিষা প্রতি কেজি মাড়াই করে ৩৯০ থেকে ৪০০ গ্রাম এবং বারি-৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩ ও ১৪ জাতের সরিষা প্রতি কেজি মাড়াই করে ৪৩০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম তেল পাওয়া যায়।

চুয়াডাঙ্গা জেলার ৪টি উপজেলায় আমন ধান আবাদের পর বোরো ধান আবাদের পূর্ব পর্যন্ত বেশী ভাগ কৃষকের জমি অনাবাদী পড়ে থাকে। কোন কোন কৃষক প্রণোদনা সুবিধা পেয়ে, পড়ে থাকা অনাবাদী জমির কিছু অংশে সরিষার আবাদ করে লাভবান হচ্ছে। সেই সঙ্গে মিটছে ভোজ্য তেলের চাহিদা। যদি জেলার বৃহৎ অংশ কৃষককে প্রণোদনার আওতায় এনে সরিষা আবাদে সংপৃক্ত করা যায় তাহলে এ জেলা থেকে প্রচুর পরিমান ভোজ্য তেল উৎপাদন সম্ভব বলে মনে করে কৃষকেরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :