May 19, 2024, 12:08 am

জনগণ ও রাষ্ট্রের স্বার্থে আমাকে হতে হবে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ

সদ্য নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বলেছেন, ‘আমি একটি আদর্শকে লালন করতে পারি। কিন্তু জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে, রাষ্ট্রের স্বার্থে আমাকে হতে হবে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ। আমার কোনো কর্মকাণ্ড যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। আমার এটাই ব্রত থাকবে, জনগণের দ্বারা একটি ভালো নির্বাচন করানো এবং সকল সিদ্ধান্ত নিরপেক্ষভাবে নেওয়া।’

আগামী ২৩ এপ্রিল অবসরে যাবেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। পরদিন (২৪ এপ্রিল) রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেবেন মো. সাহাবুদ্দিন।

সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়- রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর আপনার প্রথম কাজ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

উত্তরে তিনি বলেন, ভোটের মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ সরকার, সরকার পদ্ধতি ও দেশ পরিচালিত হোক, এটাই সাধারণ মানুষের কামনা থাকে। আমিও, (তেমন কিছু কামনা করি)। রাষ্ট্রপতি হলেও আমিও একজন সাধারণ ভোটার। যে দল থেকেই মনোনীত হই না কেন, নির্বাচনের সময় হোক অথবা কোনও বিশেষ সময়ে যদি প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগের প্রশ্ন ওঠে; তাহলে আমাকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে থাকতে হবে।

জনগণ ও রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে আমাকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকতে হবে মন্তব্য করে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, আমি একটি আদর্শকে লালন করতে পারি, কিন্তু জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে, রাষ্ট্রের স্বার্থে আমাকে হতে হবে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ। আমার কোনও কর্মকাণ্ড যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। সেই চেষ্টাই থাকবে সবসময়। আমার এটাই ব্রত থাকবে, জনগণের দ্বারা একটি ভালো নির্বাচন করানো এবং সকল সিদ্ধান্ত নিরপেক্ষভাবে নেওয়া।

তিনি বলেন, সংবিধান বলে রাষ্ট্র আমাকে যেটুকু অধিকার দিয়েছে, সেটুকু যেন আমি পরিপূর্ণ করতে পারি, আল্লাহ’র কাছে সেই প্রার্থনা করি। আল্লাহ যেন সেই শক্তিটা দেন। সেই শক্তিবলে বলীয়ান হয়ে আমি যেন আমার দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করতে পারি।

নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এর আগে বিচারকের দায়িত্ব ছাড়াও দুদকসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া একসময় সাংবাদিকতা পেশাতেও যুক্ত ছিলেন তিনি।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পরিচিতি

১৯৪৯ সালে পাবনা শহরের জুবিলি ট্যাঙ্ক পাড়ায় (শিবরামপুর) জন্মগ্রহণ করেন মো. সাহাবুদ্দিন। ডাকা নাম চুপ্পু যুক্ত করে ‘সাহাবুদ্দিন চুপ্পু’ নামে তিনি বেশি পরিচিত। তাঁর পিতার নাম শরফুদ্দিন আনছারী এবং মাতার নাম খায়রুন্নেসা।

শহরের পূর্বতন গান্ধী বালিকা বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে রাধানগর মজুমদার অ্যাকাডেমিতে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৬৬ সালে সেখান থেকে এসএসসি পাসের পর পাবনার এডওয়ার্ড কলেজে ভর্তি হন। তার রাজনীতির হাতেখড়ি সেখান থেকেই।

১৯৬৮ সালে এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি ও ১৯৭১ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৭২ সালে) বিএসসি পাস করেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পাবনা শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।

মুক্তিযুদ্ধ ও কারাবরণ

১৯৬৬ সালে কলেজ জীবনে প্রবেশের আগে পাবনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর এডওয়ার্ড কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক, অবিভক্ত পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হন। পরে টানা ৬ বছর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

১৯৭১ সালে পাবনা জেলা স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। এসময় মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন তিনি। ছাত্রলীগের সক্রিয় কাজের ধারাবাহিকতায় ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান সাহাবুদ্দিন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকেও গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। কারামুক্তির পর পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি।

আইন পেশা ও দুদক কমিশনার

পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ছিলেন মো. সাহাবুদ্দিন। ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) পরীক্ষা দিয়ে বিচারক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে পরপর দুইবার বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন তিনি।

বিচারালয়ে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন শেষে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে ২০০৬ সালে অবসরে যান মো. সাহাবুদ্দিন। এরমধ্যে শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান পদেও ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয়ের নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তখনকার বিচারক সাহাবুদ্দিন। বিচারিক জীবনের ইতি টানার পর আবারও আইন পেশায় ফেরেন তিনি।

২০০৮ থেকে ২০১১ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ছিলেন তিনি। এরমধ্যেই তাকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব দেয় সরকার। ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি সেই দায়িত্ব পালন করেন।

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা হয়। পরবর্তীতে ক্ষমতায় এসে সে সময়ের ‘হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের’ মতো ঘটনায় তদন্ত কমিশন গঠন করে আওয়ামী লীগ। ওই কমিশনের প্রধান ছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ব্যক্তিগত জীবনে এক ছেলের বাবা। তার স্ত্রী রেবেকা সুলতানা যুগ্ম-সচিব ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :