May 18, 2024, 7:01 pm

তীব্র শীতের ভেতরেও জমে উঠেছে সাগরদাঁড়ির মধুমেলা

তীব্র শীতের ভেতর হাজারো দর্শনার্থীর পদচারণায় আনন্দ উচ্ছ্বাসে জমে উঠেছে যশোরের কেশবপুরে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মভূমি সাগরদাঁড়ির মধুমেলা। মধুভক্তদের পদচারণায় মুখরিত এখন সাগরদাঁড়ি। মহাকবির বসতভিটা, কপোতাক্ষ নদ পাড়, বিদায় ঘাট, কবির স্মৃতিবিজড়িত বুড়ো কাঠবাদাম গাছতলা ও মধুমেলা প্রাঙ্গণ মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গত ১৯ জানুয়ারি থেকে সাগরদাঁড়িতে শুরু হয়েছে নয়দিনব্যাপী এই মেলা।
বুধবার মেলার ষষ্ঠ দিন সকাল থেকে মেলার মাঠসহ কপোতাক্ষ নদ পাড়ে হাজার হাজার মানুষের পদচারণা দেখা গেছে। এবারের মধুমেলায় দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য মধুমঞ্চে কেশবপুর ও যশোরের শিল্পীগোষ্ঠীসহ দেশবরেণ্য কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীদের আলোচনা, কবিতা, সংগীত পরিবেশনার পাশাপাশি প্যান্ডেলে সার্কাস, যাদু প্রদর্শনী ও মৃত্যুকূপ রয়েছে। শিশুদের বিনোদনের জন্য রয়েছে নাগরদোলাসহ নানা আয়োজন। মেলার মাঠে কুটির শিল্পসহ প্রায় ৫ শতাধিক বিভিন্ন পণ্যের পসরা বসেছে। এছাড়া মেলার মাঠে বসানো হয়েছে বাহারি আকারের তৈরি মিষ্টির দোকান। হরেক রকমের পান, মটকা চা, ফুচকা-চটপটি, আচার ও মোয়া-মুড়ির দোকানগুলোতে রয়েছে দর্শনার্থীদের ভিড়। মেলার মাঠের এক পাশে রয়েছে খাট পালঙ্গসহ আসবাবপত্রের দোকান।
কপোতাক্ষ নদ পাড়ের কবির স্মৃতি বিজড়িত কাঠবাদাম গাছ তলার পাশে বসানো হয়েছে আন্ডারগ্রাজুয়েট নামে একটি চায়ের স্টল। ওই স্টলে কথা হয় ঢাকার বাসাবো থেকে আসা রোজিনা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, তার কলেজ পড়ুয়া ছেলে শাহেদ খান ও স্কুল পড়ুয়া ছেলে জায়েদ খানকে নিয়ে মধুমেলায় এসেছেন। মেলা প্রাঙ্গণের পাশে সুন্দর পরিবেশে বসানো এ স্টলটি দর্শনার্থীদের জন্য খুবই ভালো হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার মানিকহার গ্রাম থেকে এসেছেন মুজিবুর রহমান, তবিবুর রহমান, মহব্বত হোসেন। তারা তিন বন্ধু। সারাদিন কপোতাক্ষ নদ পাড়, মেলার মাঠ ঘুরে বিকেলে মধুমঞ্চের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান তাদেরকে মুগ্ধ করেছে। প্রতিবছরই মেলায় আসেন। মুজিবুর রহমান বলেন, মধুমেলা তাদের প্রাণের মেলায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু কপোতাক্ষ নদের উপর ব্রিজ নির্মাণ না হওয়ায় মেলার সময় দর্শনার্থীদের যাওয়া আসায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
মেলার মাঠে বসানো হয়েছে বাহারী মিষ্টির দোকান। পরিতোষ নন্দির দোকানে একটি রাজভোগ মিষ্টির দাম ৭০০ টাকা এবং একটি বালিশ মিষ্টির দাম ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। দোকানের কর্মচারী শিমুল ঘোষ জানান, দর্শনার্থীরা মিষ্টি কেনার থেকে দেখতে আসছে বেশি।
সাতক্ষীরা থেকে আসা আসিফ হোসেন বলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মধুমেলায় এসেছি। মেলা থেকে ছেলে-মেয়েদের জন্য বিভিন্ন খেলনা কেনা হয়েছে। মধুমেলায় এসে কবির বসতভিটা, কপোতাক্ষ নদ পার, বিদায় ঘাট, কবির স্মৃতি বিজড়িত বুড়ো কাঠবাদাম গাছতলা ও মধুমেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে খুবই ভালো লেগেছে।’
বাগেরহাট শহর থেকে মেলা দেখতে আসা রায়হান হোসেন বলেন, ‘মধুমেলার কথা অনেক শুনেছি, কিন্তু কখনো আসা হয়নি। এবারই প্রথম মধুমেলায় এসেছি। মেলার মাঠ ও কপোতাক্ষ নদ পাড় ঘুরে বিভিন্ন প্যান্ডেলের অনুষ্ঠান দেখে মুগ্ধ হয়েছি।
মধুমেলার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, দিনের বেলায় নারী দর্শনার্থী এবং রাতের বেলায় পুরুষ দর্শনার্থীদের ভীড় হচ্ছে। মেলার বিভিন্ন স্টলগুলোতে নারীদেরকে সাংসারিক মালামালসহ ছেলেমেয়েদের জন্য বিভিন্ন খেলার সামগ্রী কিনতে দেখা যায়।
কেশবপুরের পাঁজিয়া গ্রাম থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে এসেছেন আব্দুর রহমান নামে একজন কৃষক। তিনি বলেন, এবারের মেলায় কৃষি মেলা না থাকায় কিছুটা হলেও মেলার আকর্ষণ কম হয়েছে। তবে মেলার সুষ্ঠু পরিবেশ তাদের ভালো লেগেছে।
সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার সুভাষ দেবনাথ বলেন, মধুমেলা উপলক্ষে সাগরদাঁড়িসহ চারপাশের গ্রামগুলোতে শুরু হয়েছে আত্মীয়-স্বজনদের আতিথেয়তা। মধুকবির ২০০তম জন্মবার্ষিকীতে মেলা সাতদিন দিন থেকে বাড়িয়ে নয়দিন করায় মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা চলছে।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তুহিন হোসেন বলেন, মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসছেন। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে এ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যশোর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে নয়দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এ মধুমেলা আগামী ২৭ জানুয়ারি শেষ হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :