রাশিদা য়ে- আশরার,কবি ও সাহিত্য সম্পাদক দৈনিক পদ্মা সংবাদ।
বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ দেশ, শতকরা মাথাপিছু আয় এখনো দরিদ্র সীমার নিচে-গ্রাম অঞ্চলে বেশিরভাগ ঘরবাড়ি কাঁচাপাকা মিলিয়ে,শহরের বাড়ি গুলোও বেশিরভাগ ভূমিকম্প বা দুর্যোগ সহনীয় নয়। বন্যা, জলোচ্ছ্বাস,ঘূর্ণিঝড়,অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি,খরা সবকিছু মিলিয়ে প্রতিবছর ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাগর পাড়ের মানুষ ও জনবসতি গণ, বিনষ্ট হয় ফসল- নিরাশ্রী হয়, শেষ হয়ে যায় বেঁচে থাকার অবলম্বন!
আজ রাতের শেষ ভাগ ৫.৪৫ মিনিটের দিকে ভূমিকম্প শুরু হয় শেষ হয় ৫৫ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয় অর্থাৎ ১০
মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়। মায়ানমার, ভারত, ঢাকা সীমান্তের হাখা শহর থেকে শুরু হয়। ভূমিকম্পর পরিমাণ ছিল রিখটার স্কেল ৬.১ জান-মালের তেমন ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ পাওয়া যায়নি তবে ভূমিকম্পটি বেশ ঝাঁকুনি দিয়ে গিয়েছিল। আর তা নেহায়েত কম ভয়ের ছিল না। ভূমিকম্পের কারণে ঘুম ভেঙে যায়, ঘরের আসবাবপত্র কম্পনের শব্দ, অনুভূত হচ্ছিল পৃথিবীটা দোদুল্যমান এক দোলনায় চড়েছে- ঘরবাড়ি আসবাব পত্র সব যেন মৃদুভাবে দুলছিলো সেইসঙ্গে মানুষ! সৃষ্টিকর্তার স্মরণ ছাড়া আর কিছুই তখন মনে পড়ে না, মানুষের শেষ মুহূর্তে বাঁচার আকাঙ্ক্ষা টায় হয়ে পড়ে প্রবল! সত্যিই জীবনটা অতি ক্ষণস্থায়ী শুধু সে কথাই মনে পড়ছিল অনুভূতিটাই এরকম; শেষ বাক্য সকল মুমিন মুসলমানের প্রয়োজন- অন্তর থেকে উচ্চারিত হচ্ছিল তাই-“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।” আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই- মোহাম্মদ( সাঃ) তাঁর রাসূল।
ভূমিকম্প হঠাৎ করেই আসে আর এমনটা হলে আসলে আমাদের কি করনীয়?
নিজেকে ধীর-স্থির ও শান্ত রাখা, না করা বাড়ির বাইরে থাকলে ঘরে প্রবেশ না করা। একতলা দালান হলে দৌড়ে বাইরে চলে যাওয়া। তাছাড়া বহুতল দালানের ভেতর থাকলে টেবিল বা খাটের নিচে চলে যাওয়া ও কাচের জিনিস এর কাছ থেকে দূরে থাকা, লিফট ব্যবহার না করা। উচ্চ দালানের জানালা বা ছাদ থেকে লাফ দিয়ে নামার চেষ্টা না করা ও ভূমি ধসে পড়ার সম্ভাবনা আছে এমন উঁচু ভূমি থেকে দূরে থাকা। ভূমিকম্পের সময় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা।
ভূমিকম্পের পূর্বের পদক্ষেপসমূহঃ
বিদ্যুৎ ও গ্যাস লাইন বন্ধ করার নিয়ম- কানুন পরিবারের সবাই জেনে রাখা দরকার। ঘরের উপরের তাকে ভারী জিনিসপত্র না রাখা, পরিবারের সব সদস্যের জন্য হেলমেট রাখা ও পরিকল্পিত বাড়ি ঘর নির্মাণের জন্য বিল্ডিং কোড মেনে চলা প্রয়োজন। ভবনের উচ্চতা ও ওজনের হিসাব অনুযায়ী শক্ত ভিত দেওয়া, রেইনফর্সড কনট্রি ব্যবহার করা।
পাশের বাড়ি থেকে নিরাপদ দূরত্বে বাড়ি নির্মাণ, গ্যাস ও বিদ্যুৎ লাইনের নিরাপদ ভাবে স্থাপন করা গর্ত ও নরম মাটিতে ভবন নির্মাণ না করা উচিত।
ভূমিকম্পের পরবর্তী পদক্ষেপ সমূহঃ
ক্ষতিগ্রস্ত ভবন থেকে ধীরে ধীরে ও শৃঙ্খল ভাবে বের হওয়া, রেডিও টেলিভিশন থেকে জরুরি নির্দেশনা এবং তা মেনে চলা। বিদ্যুৎ- গ্যাস ও টেলিফোন লাইন কোন সমস্যা হয়েছে কিনা পরীক্ষা করে নেওয়াও প্রয়োজনে তখন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। শারীরিক সংস্থাগুলোকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতা করা, উদ্ধার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করা- এবং অস্থায়ী আশ্রয়স্থলে ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা সার্বিক সহযোগিতা করা।
ভূমিকম্পের সংজ্ঞা, উৎপত্তি ও ফলাফল সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ এবং বাংলাদেশে ভূমিকম্পের প্রভাবঃ
ভূ-অভ্যন্তরে কঠিন শিলার আঘাত জনিত কারণে
যে শক্তির সঞ্চয় ঘটে, সেই শক্তির বলে ভূ-পৃষ্ঠ ক্ষণিকের জন্য কেঁপে ওঠে এবং ভূ-ত্বকের কিছু অংশ আন্দোলিত হয়। এই রূপ আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পন কে ভূমিকম্প বলে।
কম্পন-তরঙ্গ থেকে যে শক্তির সৃষ্টি হয়, তা ভূমিকম্পের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এই তরঙ্গ ভূ-গর্ভের কোনও নির্দিষ্ট অঞ্চলে উৎপন্ন হয় এবং চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ভূমিকম্প সাধারণত কয়েক সেকেণ্ড থেকে ১/২ মিনিট স্থায়ী হয়।তবে কিছু কিছু ভূমিকম্প ৮-১০ মিনিটও স্থায়ী হয়। ভূমিকম্প কখনো দুর্বল কখনো শক্তিশালী ও বিধ্বংসী আকারে ঘর- বাড়ি, মালামাল ও ধন-সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং বহু প্রাণহানি ঘটে।
ভূমিকম্পের ফলাফলঃ
ভূমিকম্পের ফলে ভূত্বকে অসংখ্য ফাটলের সৃষ্টি হয়। কখনো সমুদ্রতলের অনেক স্থান উপরে ভেসে ওঠে। আবার কখনো ভূপৃষ্ঠের অনেক স্থান সমুদ্রের নিচে ডুবে যায়। অনেক সময় নদীর গতি পরিবর্তিত বা বন্ধ হয়ে যায়।
ভূমিকম্পের ধাক্কায় সমুদ্রের পানি স্থল ভাগ থেকে নিচে নেমে যায় এবং ভীষণ গর্জন সহ ১৫-২০ মিটার উঁচু
হয়ে ঢেউয়ের আকারে উপকূলে এসে আছড়ে পড়ে।
এ ধরনের জলোচ্ছ্বাস কে সুনামি বলে।
ভূমিকম্পে রেলপথ, সড়কপথ, পাইপ লাইন প্রভৃতি ভেঙে যায়, কালভার্ট সেতু প্রভৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং যাতায়াত ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। ২০০৪ সালে ২৬-ডিসেম্বর ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট সুনামির আঘাতে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা থাইল্যান্ড, ভারত ব্যাপকহারে জানমালের ক্ষতি হয়।
বাংলাদেশঃ বাংলাদেশে ভূমিকম্পের সরব উপস্থিতি, ব্যাপক প্রভাব বা ক্ষয়ক্ষতি এখন পর্যন্ত হয়নি তবে ভবিষ্যতে সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। মূলতঃ বাংলাদেশের ভূমিকম্প বলতে বাংলাদেশ ও তৎসংলগ্ন এলাকার ভূমিকম্পকে বোঝায়। কারণ বাংলাদেশ আসলে ভারত ও মায়ানমারের ভূ-অভ্যন্তরের দুটি ভূ-চ্যুতির প্রভাবে আন্দোলিত হয়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ, ভারতীয়, ইউরেশীয় এবং বার্মার (মায়ানমারের) টেকটনিক প্লেটের মধ্যে অবস্থান করছে। ভারতীয় এবং ইউরেশীয় প্লেট দুটি (১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে) দীর্ঘদিন যাবৎ হিমালয়ের পাদদেশে আটকা পড়ে আছে, তাই অপেক্ষা করছে বড় ধরনের ভূ-কম্পনের। বাংলাদেশে ৮টি ভূতাত্ত্বিক চ্যুতি এলাকা বা ফল্ট জোন সচল অবস্থায় রয়েছে।
সৃষ্টিকর্তা বিশ্ববাসীকে সবরকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং বিপর্যয় থেকে রক্ষা করুন আমিন।
২০২১
Leave a Reply