May 18, 2024, 7:48 pm

বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা, সঙ্গে মৃত্যুও

সারাদেশে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। বাড়ছে মৃত্যুও। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, সবাই সম্মিলিতভাবে ডেঙ্গু মোকাবিলা না করলে পরিস্তিতি আরো অবনতি হতে পারে।

বুধবার (১৯ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে জানানো হয়, দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরো ৮৬৪ জন রোগী।

বর্তমানে সারাদেশে সর্বমোট তিন হাজার ৩০৪ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে দুই হাজার ২৪৭ জন এবং ঢাকার বাইরে সারাদেশে ভর্তি রয়েছে এক হাজার ৫৭ জন ডেঙ্গু রোগী।

এবছর ১ জানুয়ারি থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সর্বমোট ২৭ হাজার ৮০২ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা সর্বমোট ২০ হাজার ৬৩ জন এবং ঢাকার বাইরে সারাদেশে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সর্বমোট সাত হাজার ৭৩৯ জন।

চলতি বছরের জুনে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউটে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় ১২ শয্যা বরাদ্দ ছিলো। রোগী বেড়ে যাওয়ায় সেপ্টেম্বর মাসে ৫০ শয্যার ডেঙ্গু সেল গঠন করা হয়। তারপরও রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালটি।

বুধবার শিশু হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউটে ৫০টি শয্যার বিপরীতে ৭২ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ১৪ জন ডেঙ্গুরোগী। আইসিইউতে ৭ জন ভর্তি আছে। এবছর হাসপাতালটিতে মোট ৬৯০ জন রোগী ভর্তি হয়েছে এবং ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউটে সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে। দুই তিন মাসের শিশু থেকে শুরু বিভিন্ন বয়সের ডেঙ্গু রোগী ভর্তী ররেছে। ডেঙ্গু ওয়ার্ড ছাড়াও অন্যান্য ওয়ার্ডেও দেওয়া হচ্ছে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা।

অন্যান্য ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগী কেন জানতে চাইলে হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জানা যায়, কেউ ডেঙ্গু রোগে আক্তান্ত হয়ে আসলে, তাকে যেখানে শয্যা খালি থাকছে সেখানেই ভর্তি করে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে সিট খালি হলে তাকে সেখানে স্থানান্তর করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল এবং ইনস্টিটিউটের ডেঙ্গু সেলের ইনচার্জ এবং শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. ফারহানা আহমেদ বলেন, গত এক দুই মাস থেকে ডেঙ্গু রোগী আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। দুই তিন মাসের শিশু থেকে শুরু করে সবাই আক্রান্ত হচ্ছে। তবে যারা দ্বিতীয় কিংবা দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে তাদের ঝূঁকি বেশি। এছাড়াও যাদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা যেমন হার্টের, কিডনি, থ্যালাসেমিয়ার কিংবা অ্যাজমার অসুখ আছে, তাদের ঝুঁকিও বেশি। এমনকি আইসিইউতে পর্যন্ত ভর্তি করতে হচ্ছে। এছাড়াও এবার আমরা দেখতে পাচ্ছি যারা স্থূলকায় শিশু রয়েছে তাদের মধ্যেও ঝুঁকি আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।

অপরদিকে রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৮ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন এবং সর্বমোট ১৪০ জন রোগী বর্তমানে হাসাপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. নিয়াতুজ্জামান বলেন, গতবছর অক্টোবরের তুলনায় এবছর অক্টোবরে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বেশি রয়েছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। ডাক্তার চিকিৎসা দেবে, রোগীকেও সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি ডেঙ্গুর হটস্পটগুলোতে মশা নিধন জোরদার করতে হবে। সঠিক সময়ে হাসপাতালে আসতে হবে এবং সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে। লক্ষণ দেখা দেওয়ার পরও বাসায় বসে থেকে নিচের বিপদ ডেকে না আনাই ভালো।

শুধু বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট কিংবা মুগদা জেনারেল হাসপাতাল নয়, রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য নির্ধারিত অন্য হাসপাতালগুলোও।

হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, এবারের ডেঙ্গুর ধরনটা অন্যান্য বছরের তুলনায় ভিন্ন। এবছর ডেঙ্গু শহর থেকে গ্রাম এবং পাহাড়ি এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। ডেঙ্গু মশা ইতোমধ্যে তার সংক্রমণের ধরন বদলে ফেলেছে।

তিনি বলেন, আগে এডিস মশা শুধু সকালে এবং সন্ধ্যায় কামড় দিতো, কিন্তু এখন সারাদিন এডিস মশা কামড়াচ্ছে। যার ফলে এবার শিশু এবং বয়স্কদের মধ্যেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। যদি আর বৃষ্টিপাত না হয় তাহলে এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে, আর যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে ডেঙ্গু বাড়তেই থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :