April 24, 2024, 12:34 pm

সরকারি মূল্য কম হওয়ায় ধান-চাল সংগ্রহ ব্যাহত চুয়াডাঙ্গায়

চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় বাজার এবং সরকার নির্ধারিত দামের পার্থক্যের কারণে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান ব্যাহত হচ্ছে। এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৬৭৮ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা গেলেও এখন পর্যন্ত ধান সংগ্রহ করা যায়নি। ফলে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান-চাল সংগ্রহ করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। অথচ চলতি মৌসুমে এ জেলার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক আমন ধান আবাদ হয়েছে। উৎপাদনও বেশ ভালো।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২২ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধান-চাল সংগ্রহের সময় নির্ধারণ করা হয়। প্রতি কেজি ধানের দাম ২৮ টাকা ও চালের ৪২ টাকা করে সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয়।

২০২২-২০২৩ অর্থবছরে আমন মৌসুমে এ জেলার ৪টি উপজেলায় মোট ২ হাজার ২৫৫ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু গত ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত এক কেজি ধানও সংগ্রহ হয়নি। অপরদিকে, এ জেলায় চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ হাজার ৮৩৪ মেট্রিক টন। সেখানে গত ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ৬৭৮ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে।

সদর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের কৃষক নূরুজ্জামান বলেন, সরকার প্রতি মণ ধানের দাম ১ হাজার ১০০ টাকা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রামের আড়তে প্রতি মণ ধান আমরা বিক্রি করছি ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকা দরে। এতে আমাদের পরিবহন ব্যয়ও বেঁচে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন চাল মিল মালিক জানান, তারা সরকারের সঙ্গে চাল সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। কিন্তু বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে সরকার নির্ধারিত দরের বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। সরকার প্রতি মণ চাল ১ হাজার ৬৮০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু স্থানীয় বাজারে তা ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে তাদের লোকসান দিয়ে চাল সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

বরাদ্দ পাওয়া ছোট ছোট মিল মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের মিল ছোট। কোটায় বরাদ্দও কম পেয়েছে। কিন্তু এ চাল অটোরাইস মিলের মতো কোয়ালিটি করে দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য সরকারি গুদামে চাল দিতে পারছে না।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে এ জেলায় মোট ৩৪ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। মোট আবাদ হয়েছে ৩৫ হাজার ১৮৭ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৬৭ হেক্টর বেশি। চলতি মৌসুমে এ জেলায় ১ লাখ ২৭ হাজার ২৩৬ মেট্রিক টন আমন ধান উৎপাদন হয়েছে। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন হয়েছে ৩ দশমিক ৬১ মেট্রিক টন।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা জানান, এবার বৃষ্টির কারণে ধানের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছিল। কিন্তু পরে আবহাওয়া স্থিতিশীল হওয়ায় সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। অন্যান্য জেলায় খরার কারণে সেচ ব্যবস্থা আবাদ সহায়ক না থাকলেও চুয়াডাঙ্গা জেলা ছিল সহায়ক। এখানকার কৃষকরা ভালো সেচ সুবিধা পেয়েছেন। সময়মতো ভালো জাতের ধানবীজ ও সার পেয়েছে। তা ছাড়া পোকা-মাকড়ের উপদ্রব ছিল না বললেই চলে। পরিকল্পিত কৃষিব্যবস্থার কারণে এবার আমন ধান উৎপাদন বেশ ভালো হয়েছে।

ফলন ভালো হওয়ার পরেও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান-চাল সংগ্রহ ব্যাহত হওয়ার কারণ সর্ম্পকে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক একেএম শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি আর স্থানীয় বাজারে দামের পার্থক্যের কারণে কৃষকরা আমাদের কাছে ধান বিক্রি করছে না। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি ধান-চাল সংগ্রহ করতে। কিন্তু এখনো কাঙ্ক্ষিত সাড়া মেলেনি। তবে ৬৭৮ মেট্রিক টন চাল আজ পর্যন্ত সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। সংগ্রহ অভিযানের সময় বাড়ানো হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :