May 18, 2024, 6:33 pm

সুদানে ক্ষুধার জ্বালায় ঘাস, বাদামের খোসা খাচ্ছে মানুষ

জাতিসংঘের খাদ্য সহায়তা সংক্রান্ত সংস্থা ডব্লিউএফপি সুদানে যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে সতর্ক করে বলেছে, পশ্চিম সুদানের দারফুর ও অন্যান্য অঞ্চলে দ্রুত মানবিক সাহায্য পৌঁছানো না হলে ব্যাপক অনাহার ও মৃত্যুর গুরুতর ঝুঁকি রয়েছে। খবর সিএনএনের।

ডব্লিউএফপি’র পূর্ব আফ্রিকার পরিচালক মাইকেল ডানফোর্ড শুক্রবার (৩ মে) জাতিসংঘের ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পশ্চিম সুদানের দারফুরে মানুষের অনাহার ঠেকানোর সময় ফুরিয়ে আসছে। ক্রমবর্ধমান সহিংসতা গোটা জাতিকে শেষ করে দিচ্ছে। খাদ্যাভাবে মানুষ ঘাস ও চিনাবাদামের খোসা খেতে বাধ্য হচ্ছে।’

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘যদি শিগগির তাদের কাছে সহায়তা না পৌঁছায়, তাহলে দারফুর ও সংঘাত বিধ্বস্ত সুদানের অন্যান্য এলাকায় ব্যাপক অনাহার এবং মৃত্যুঝুঁকি দেখতে হতে পারে।’

ডব্লিউএফপি’র আঞ্চলিক মুখপাত্র লেনি কিনজলি বলেন, ‘গত ডিসেম্বরে দারফুরে অন্তত ১৭ লাখ মানুষ খাদ্য সংকটের মুখে পড়ে। বর্তমানে এই সংখ্যাটি আরো অনেক বেশি।’

নাইরোবি থেকে জাতিসংঘের ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সুদানে সংঘাতের হটস্পটগুলোতে মানবিক সাহায্যে পৌঁছানোর জন্য আমাদের আহ্বান এর চেয়ে বেশি সমালোচনামূলক এর আগে ছিল না।’

সিএনএন জানিয়েছে, সুদানের সেনাবাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনী ‘র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’ (আরএসএফ) ২০২৩ সালের এপ্রিলে সংঘাতে জড়ালে সেখানে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। যৌন সহিংসতা, গণহত্যার মতো কর্মকাণ্ড ও বেসামরিক মানুষ হত্যার ঘটনায় মানুষ দ্রুত ঘরবাড়ি ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে। রাজধানী খার্তুম থেকে শুরু হওয়া সংঘাত দেশটির অন্যান্য অংশে, বিশেষ করে শহরাঞ্চল ও দারফুর অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।

আধা সামরিক বাহিনী আরএসএফ দারফুরের বেশিরভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং এখন অঞ্চলটির রাজধানী ‘এল ফাশের’ ঘেরাও করছে। এল ফাশের একমাত্র শহর যেটি এখনো আরএসএফ দখল করতে পারেনি। এখানে অন্যান্য এলাকা থেকে আসা প্রায় ৫ লাখ বেসামরিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।

কিনজলি জানান, এল ফাশেরের পরিস্থিতি ‘খুব ভয়ঙ্কর’। সেখানে আরএসএফের বোমা হামলা ও গোলাগুলি থেকে প্রাণ বাঁচিয়ে বেসামরিক নাগরিকদের পক্ষে চলে যাওয়া কঠিন।

কিনজলি বলেন, ‘এল ফাশের ও উত্তর দারফুরের সহিংসতা পুরো দারফুর অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ মানবিক চাহিদা বাড়িয়ে তুলেছে। সেখানে গম ও বাজরার মতো প্রধান খাদ্যশস্যের ফসলের উৎপাদন ব্যাপকমাত্রায় কমেছে।’

তিনি জানান, শুক্রবার সকালে দারফুরের মধ্যাঞ্চলে বাস্তচ্যুত লোকদের একটি আশ্রয় শিবিরের যে ছবি তিনি দেখেছেন, সেখানে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের শরীরে চামড়া ও হাড় ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। ক্ষুধার জ্বালায় মানুষ ঘাস ও চিনাবাদামের খোসা খাওয়া শুরু করেছে।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেন, ‘পশ্চিম এল ফাশেরে এক ডজনেরও বেশি গ্রামে সম্প্রতি হামলা চালানো হয়েছে। যৌন সহিংসতা, শিশু হত্যা, বাড়িঘরে আগুন এবং অবকাঠামো ধ্বংসসহ ভয়ঙ্কর সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে।’

গত বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক রেডক্রম কমিটির (আইসিআরসি) দুজন চালক দক্ষিণ দারফুরে অস্ত্রধারীদের হামলায় নিহত হন। এসময় সংস্থাটির আরো তিনজন কর্মী আহত হন।

সংঘাতের এমন পরিস্থিতি আর আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে দারফুরে খাদ্য সহায়তা বিতরণে কর্মকাণ্ড থেমে গেছে। ওই অঞ্চলে ১৭ লাখের বেশি মানুষ তীব্র ক্ষুধায় ভুগছে বলে জানিয়েছে ডব্লিউএফপি।

জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় সংস্থা ওসিএইচএ এর হিসাবে, যুদ্ধের কারণে সুদানে ৪৬ লাখ শিশুসহ ৮৭ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছে। ২ কোটি ৪৮ লাখ মানুষের সহায়তা প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :