July 4, 2024, 11:21 pm

দুই ভাই খেলছেন দুই দলের হয়ে!

স্পোর্টস ডেস্ক : জর্জিয়াকে উড়িয়ে দিয়ে ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে তিনবারের চ্যাম্পিয়ন স্পেন। ২০১২ সালে ইউরো জেতার পর থেকে বাজে সময় কাটানো স্প্যানিয়ার্ডরা এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফুটবল খেলেছে।

স্পেনের আক্রমণভাগে দুই উইঙ্গার মিলে প্রতিপক্ষ দলের রক্ষণভাগে ত্রাস ছড়াচ্ছেন। তরুণ নিকো উইলিয়ামস ও লামিনে ইয়ামালের নৈপুণ্য নজর কেড়েছে ফুটবলপ্রেমীদের।

স্পেনে জন্ম হলেও ইনাকি ও নিকো আলাদা আলাদা জাতীয় দলে খেলেন। নিকো স্পেনের হয়ে ইউরো মাতালেও ইনাকি খেলেন ঘানার হয়ে।

১৬ বছর লামিনে ইয়ামালকে নিয়ে যতটা আলোচনা হয়, ঠিক ততটা আলোচনায় নেই নিকো উইলিয়ামস। তবে এবারের ইউরোতে পারফরম্যান্স দিয়ে চোখ ধাধিয়ে দিচ্ছেন ২১ বছর বয়সী নিকো। শেষ ম্যাচে তো জর্জিয়াকে নাচিয়ে ছেড়েছেন এই উইঙ্গার।

লা লিগার ক্লাব অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের হয়ে খেলে থাকেন নিকো। একই ক্লাবের হয়ে খেলেন আরেক উইলিয়ামসও। স্প্যানিশ ফুটবলের পরিচিত মুখ ইনাকি উইলিয়ামস স্পেনের বয়সভিত্তিক দলের হয়ে দীর্ঘদিন খেলার পর খেলেছেন জাতীয় দলেও।

তবে মাত্র ১ ম্যাচ খেলার পরেই স্পেনের হয়ে থেমেছে তার ক্যারিয়ার। স্পেন জাতীয় দলে থিতু হতে না পারলেও বিলবাওয়ের একাদশে নিয়মিত ইনাকি। বিলবাওয়ের ম্যাচ মানেই দুই উইংয়ে দুই উইলিয়ামসের গতির ঝড়।

শুধু নামেই মিল নয়, এই দুই উইলিয়ামসের মধ্যে রক্তের সম্পর্কও আছে। সম্পর্কে ইনাকি ও নিকো উইলিয়ামস সহোদর ভাই। দুই উইলিয়ামস ভাই নিকো এবং ইনাকি গত এপ্রিলে বিলবাওয়ের ৪০ বছরের শিরোপাখরার অবসান ঘটিয়ে কোপা ডেল রে শিরাপো জিতিয়েছিলেন। এবার নিকোর চ্যালেঞ্জ স্পেনকে এক যুগ পর ইউরো জেতানোর। ২১ বছর বয়সী নিকো টুর্নামেন্টে আলো ছড়িয়ে সমর্থকদের হৃদয় জিতেছেন।

ইউরোয় স্পেন জাতীয় দলের হয়ে ইনাকিকেও হয়তো দেখা যেতে পারতো। কিন্তু ২০২২ সালের পর থেকে তিনি আর স্পেনের খেলোয়াড়ই নয়। জাতীয়তা বদলে বনে গেছেন ঘানা জাতীয় দলের খেলোয়াড়। কাতার বিশ্বকাপে ঘানার হয়ে মাঠও মাতিয়েছেন তিনি। বিশ্বকাপে ৪ ম্যাচ খেলে একটি অ্যাসিস্ট করেন ইনাকি।

এদিকে, ২০২১ সালে নিকো অ্যাথলেটিক বিলবাওতে যোগদান করার পর ওঠার পর থেকেই সতীর্থ হয়ে উঠেন তারা। যদিও, আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভিন্ন দেশের হয়ে খেলেন এই জুটি। বিলবাও ক্লাবে একটি দারুণ মৌসুম কাটিয়ে স্পেনের জার্মানিগামি প্লেনের টিকিট পেয়েছেন নিকো। স্পেনের জার্সিতে এখন পর্যন্ত ১৭টি ম্যাচ খেলেছেন এই উইঙ্গার।

স্পেন জাতীয় দলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে না পাড়ায় ইনাকি জাতীয় দল হিসেবে ঘানাকে বেছে নিয়েছেন। মূলত বাবা-মায়ের সূত্র ধরেই ঘানার প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েছেন ইনাকি। ঘানার হয়ে এখন পর্যন্ত খেলেছেন ১৭টি ম্যাচ।

উইলিয়ামস ভাইদের জন্ম স্পেনে। উন্নত জীবনের সন্ধানে মা মারিয়া এবং বাবা ফেলিক্স ইউরোপের উদ্দেশ্যে ঘানা ছেড়েছিলেন। তারা বাস্ক অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে এবং এর পরপরই ১৯৯৪ সালে ইনাকির জন্ম হয়। আট বছর পরে ২০০২ সালে নিকো ভূমিষ্ঠ হন।

যখন তাদের পিতামাতা বাঁচার তাগিদে অক্লান্ত পরিশ্রম করছিলেন তখন ইনাকি তার ছোট ভাই নিকোকে দেখভাল করেছিলেন। তবে তার ভাই এবং অন্যান্য অভিবাসী ছেলেদের ক্লাবে প্রতিনিধিত্ব করার পথটাও তিনিই প্রশস্ত করে দিয়েছিলেন। ঐ ক্লাবের নীতি অনুযায়ী শুধুমাত্র বাস্ক অঞ্চলে জন্মগ্রহণকারী বা বেড়ে ওঠা খেলোয়াড়দের দ্বারা স্কোয়াড গঠন করা হয়। জন্মসূত্রে বাস্ক অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাওয়া ইনাকি বিলবাওয়ের কিংবদন্তিদের একজন। লা লিগায় রেকর্ড ২৫১ ম্যাচে টানা মাঠে নামার রেকর্ডের মালিকও ইনাকিই।

ছোটভাই ভিন্ন জাতীয় দলের হয়ে খেললেও তার সবচেয়ে বড় অনুরাগী ইনাকিই। ৩০ বছর বয়সী ইনা জানান, তার আট বছরের ছোট ভাই নিকো ফুটবলে রঙ ছড়াচ্ছেন। ছোটভাইয়ের জন্য তিনি একজন বড় ভাই, পরামর্শদাতা এবং অভিভাবকও বটে।

বিবিসি স্পোর্টকে ইনাকি বলেন, ‘তিনি কীভাবে বড় হয়েছেন এবং একজন ফুটবলার হিসেবে তিনি কীভাবে উন্নতি করছেন তা একজন বড় ভাই হিসেবে আমাকে সত্যিই গর্বিত করে। আমি তাকে সাহায্য করতে, শেখাতে এবং যেকোনো প্রয়োজনে সবসময় তার পাশে থাকব।’

বিলবাও তারকা আরও বলেন, ‘জাতীয় দল পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়া এতোটা সহজ ছিল না।আমাকে আমার পরিবার এবং প্রিয়জনদের সাথে পরামর্শ করতে হয়েছিল। কারণ সিদ্ধান্তটি আমার পরবর্তী ক্যারিয়ারে প্রভাব ফেলবে, শুধুমাত্র খেলাধুলার ক্ষেত্রে নয় ব্যক্তিগত পর্যায়েও।’

তার ৯০ বছর বয়সী বৃদ্ধ দাদার জাতীয় দলের হয়ে খেলার ইচ্ছায় জোরেই তিনি ঘানার জাতীয় দলের হয়ে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ খেলেছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :