May 17, 2024, 8:23 am

যেভাবে হালুয়া-রুটির খাওয়ার প্রচলন হলো শবে বরাতে

নুরুদ্দীন তাসলিম: হাদিসের ভাষায় লাইলাতুম মিন নিসফি শাবানকে উপমহাদেশে শবে বরাত বলা হয়। ‘শবে বরাত’ ফারসি শব্দ। ‘শব’ শব্দের অর্থ রাত, ‘বরাত’ অর্থ নাজাত বা মুক্তি। এই দুই শব্দ মিলে অর্থ হয় মুক্তির রজনী।

এই রাতের ফজিলত হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত। হাদিসে এসেছে, এ রাতে আল্লাহ তার সঙ্গে শিরককারী ও হিংসুক ছাড়া সব সৃষ্টিকে ক্ষমা করেন। এই রাতে মানুষজন বিভিন্ন ধরনের নফল ইবাদত পালন করে থাকেন। ইবাদতের পাশাপাশি শবে বরাত উপলক্ষে হালুয়া রুটি খাওয়ারও প্রচলন রয়েছে অনেকের মাঝে। তবে এটি ইসলামি বিধান সম্মত কোনও বিষয় নয়।

নবীজি কিংবা সাহাবিদের যুগে শবে বরাত বা লাইলাতুম মিন নিসফি শাবানকে কেন্দ্র করে হালুয়া রুটি খাওয়া বা প্রতিবেশিদের মাঝে বিলানোর কোনও প্রচলন ছিলো বলে হাদিসে পাওয়া যায় না।

তবে বাংলাদেশে ১৯’শ শতকের শেষের দিকে শব-ই- বরাত পালনের ব্যাপক প্রচলন শুরু হয় বলে মতামত দিয়েছেন অনেক ইতিহাস বিশ্লেষক।

অনেকে আবার হালুয়া রুটির প্রচলনের বিষয়ে উহুদ যুদ্ধে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাঁত শহিদ হওয়ার ঘটনাকে সামনে নিয়ে আসেন। বলতে শোনা যায়, উহুদ যুদ্ধে যখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দানদান মোবরক শহীদ হয়েছিল, তখন কিছুদিন কোনো প্রকার শক্ত খাবার খেতে পারতেন না। সেই ঘটনার প্রতি সমবেদনা জানিয়ে এই দিনে ঘটা করে হালুয়া রুটি খাওয়া হয়।

এ বিষয়ে রাজধানীর দারুর রাশাদ মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস ও মিরপুর বায়তুল ফালাহ জামে মসজিদের খতিব মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী বলেন, উহুদ যুদ্ধ তো শাবান মাসের ১৫ তারিখে হয়নি তা হয়েছে শাওয়ালের ৭ তারিখে। সুতরাং যদি সে কেন্দ্রিক কোনো বিষয় থাকত তাহলে তা শাওয়াল মাসের ৭ তারিখে থাকত শাবানের ১৫ তারিখে নয়।

তিনি বলেন, আমাদের এই অঞ্চলে অনেক কাজ-কর্মে শিয়াদের কিছু প্রভাব রয়েছে। তাদের মাধ্যমে মুসলিম সমাজে শবে বরাত উপলক্ষে হালুয়া রুটি খাওয়ার এই প্রচলন শুরু থাকতে পারে। দারুর রাশাদ মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস ও মিরপুর বায়তুল ফালাহ জামে মসজিদের খতিব মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী

মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী বলেন, এই রাতের ফজিলত সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে (শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষপোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (সহিহ ইবনে হিববান, হাদিস: ৫৬৬৫; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস: ৬২০৪)

তাই সবার উচিত হাদিসে এ রাতের যতটুকু ফজিলত প্রমাণিত আছে শুধু ততটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকা। নবী-সাহাবিদের যুগে প্রচলন ছিলো না এমন কোনও বিষয় ও রসম-রেওয়াজের পিছে পড়ে এর মূল ফজিলত থেকে বঞ্চিত হওয়া কোনওভাবে ঠিক নয়।-ঢাকা পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :