May 6, 2024, 8:23 pm

আন্ডারওয়ার্ল্ডের তৎপরতা বাড়ছে রমনা-মতিঝিলে

অনলাইন ডেস্ক

মতিঝিল-রমনা বাণিজ্যিক এলাকায় আবারো তৎপর হয়ে উঠছে আন্ডারওয়ার্ল্ড। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় হামলা, খুনের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনার অন্তরালে চাঁদাবাজি, নিজেদের প্রভাব জানান দেয়া। তবে পুলিশ বলছে, অপরাধীদের ধরতে তৎপর তারা। অপরাধীরা যে দলেরই হোক না কেন তাদের ছাড় দেয়া হবে না।

ক’দিন আগেই সন্ত্রাসী হামলায় স্বামী যুবলীগ নেতা ওয়ালি উল্লাহ রুবেলকে হারিয়েছেন স্ত্রী তানজিলা দেওয়ান। এখন চাওয়া শুধুই ন্যায় বিচার।

এই ঘটনার পর হামলায় জড়িত অনেকে গ্রেপ্তার হলেও এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে মূল হোতা। তাদের আইনের আওতায় না আনা পর্যন্ত ন্যায় বিচার নিয়ে শঙ্কিত রুবেলের পরিবার।

তানজিলা দেওয়ান জানান, মূল আসামি কে তা এখনও বের হয়নি।

কারা রুবেলকে হত্যা করেছে। পেছনের হোতা কারা? কেনই বা এই হত্যাকাণ্ড। কি ছিল তাদের মোটিফ? এমন নানা প্রশ্ন এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে মালিবাগ বাজার এলাকায়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রুবেল ছিলেন যুবলীগ নেতা। রাজনীতির পাশাপাশি পানি, ইন্টারনেট ও ডিমের ব্যবসা ছিল তার। এসব ব্যবসার আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দ্বন্দ্ব ছিল শাহজাহানপুর থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. হামিদুল্লাহ’র সাথে। এই দ্বন্দ্বের চূড়ান্ত রূপ নেয় শাজাহানপুর থানা শাখার ১২নং ওয়ার্ড যুবলীগের কমিটি নিয়ে। রুবেল ছিলেন এই কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী।

প্রতিপক্ষ সাবেক ছাত্র নেতা শেখ মো. হামিদুল্লাহ। এ নিয়ে রুবেলের সাথে ছিল হামিদুল্লাহ’র রাজনৈতিক গ্রুপিং। পরিবারের ধারণা এই রাজনৈতিক গ্রুপিংয়ের কারণেই ২০ জুলাই রুবেলকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।

রুবেলের স্ত্রী, বোন ও বাবা দাবি করেন, যুবলীগের সভাপতি বা সেক্রেটারি সে হবে- তা জানা ছিলো বলেই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এখন সামনেই বা নিরাপত্তার দায়িত্ব কে নেবেন?

কেন মতিঝিল এলাকার আধিপত্য নিয়ে এত দ্বন্দ্ব। সেটা রাজনৈতিক হোক আর ব্যবসায়িক?

মতিঝিল এলাকাকে বলা হয় রাজধানীর বাণিজ্যের আতুর ঘর। তাই এ এলাকা যার নিয়ন্ত্রণে থাকবে তার নিয়ন্ত্রণে থাকবে পুরো বাণিজ্য। কোটি কোটি টাকার হাতছানি এই মতিঝিলকে ঘিরে তাই মরিয়া প্রভাবশালীদের মদদে গড়ে উঠা সন্ত্রাসী গ্রুপ। তাদের ছত্রছায়ায় এখানের ক্লাবগুলোতে চলতো ক্যাসিনো ব্যবসা। এসব ক্যাসিনো ব্যবসাকে ঘিরেই একসময় মতিঝিল এলাকায় চলতো অস্ত্রের মহড়া, গুলি, হত্যা। সন্ত্রাসী গ্রুপের যুক্ত হচ্ছে কিশোর গ্যাংও।

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মতিঝিল এলাকায় ২০১৩ সালে গুলি করে হত্যা করা হয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কিকে। ২০২২ সালে হত্যা করা হয় আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে। সব হত্যার পেছনে আছে আধিপত্য বিস্তারের গল্প।

ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, সেখানে অনেক ধরনের বাণিজ্য হয়। সব কিছু মিলেই বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়।

মাঝে শান্ত ছিলো মতিঝিল, রমনা এলাকা। কিন্তু নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই মাথাচাড়া দিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। নিজেদের অবস্থান জানান দিতে আবারও মাঠে নামছে প্রভাবশালীদের মদদের থাকা সন্ত্রাসী বাহিনী। হিসেবে বলছে, শুধু এপ্রিলেই মতিঝিলের খুন হয়েছে চার জন। এরমধ্যে রুবেল ছাড়াও আছেন আরও এক রাজনৈতিক কর্মী।

পাশের রমনা এলাকায় এপ্রিলে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে চারটি। অর্থাৎ সমানে সমানে চলছে হত্যার ঘটনা। এছাড়াও গোলাগুলি, ছুরিকাঘাতের ঘটনা তো নিত্যদিনের বিষয়। যেমন- ৩০ জুলাই, রমনা এলাকায় নিজের বাসায় নিজের কর্মীকে গুলি করার ঘটনা। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের লোককেই গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনাও ঘটান ইসমাইল হোসেন বাচ্চু।

মূলত রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় জাকের সুপার মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মার্কেট কমিটির সাথে দ্বন্দ্ব ছিল বাচ্চুর। মার্কেট কমিটিকে ফাঁসাতেই নিজের বাসায় কর্মচারী মানিককে গুলি করে বাচ্চু। আবার নিজের গাড়ি করেই দিয়ে আসেন হাসপাতালে। কিন্তু রক্ষা হয়নি বাচ্চুর। এখন তিনি জেলে।

এসময়ের স্থানীয়রা রাজধানীতে এসে নিজেদের অবস্থান সৃষ্টির জন্য মরিয়া হয়ে যায়। বাচ্চু তেমনি একজন। একসময়য়ের ফুটপাতের হকার বাচ্চু ছিলেন ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনাল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। হয়েছেন কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামের আলকড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। গুলি করে আহত, ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা অপরাধের অভিযোগে অর্ধ ডজন মামলা আছে বাচ্চুর বিরুদ্ধে। নিজের বাসায় কর্মচারীকে হত্যা চেষ্টা মামলায় এখন বাচ্চু আছেন জেলে।

ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ জানান, বাচ্চু যেখানে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন- তা সাজানো বোঝাই যায়।

তিনি বলেন, যেখানে দেশে কোটি কোটি মানুষ, সেখানে এমন দু-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা এ ঘটনার সাথে যারাই জড়িত তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় নিয়ে আসছি।

নিজের সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে এর আগেও নিজের ভাতিজির স্বামী চৌদ্দগ্রাম আলকড়া ইউনিয়নের যুবলীগের সভাপতি জামাল উদ্দিন বাক্কাকে হত্যা করে বাচ্চু। সেই ঘটনায় একটি মামলাও হয় বাচ্চুকে আসামি করে। গ্রেপ্তারের পর জামিনে ছাড়া পান বাচ্চু। কিন্তু তার পর থেকেই এলাকা ছাড়া আতঙ্কিত জামাল উদ্দিনের পরিবার।

কথা কথায় কোমরে থাকা পিস্তল বের করে গুলি করা; বাচ্চুর পুরনো অভ্যাস। ২০১৯ সালে সারাদেশে নৈরাজ্য পরিবেশ সৃষ্টির ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত ছিল বাচ্চু। যে কারণে তাকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল পুলিশ।

একসময় ক্যাসিনো পাড়া মতিঝিল, রমনা এলাকায় ক্ষমতা মানে কাচা টাকার হাতছানি। যে কারণে, এই এলাকার আধিপত্য নিজেদের পকেটে নিতে প্রভাবশালীদের মদদে গড়ে উঠে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ। এখনই তাদের থামানো না গেলে নির্বাচনের আগে নিজেদের অবস্থান পোক্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠবে সন্ত্রাসীরা। রক্তাক্ত জনপদে পরিণত হবে অর্থনৈতিক এলাকা রমনা, মতিঝিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :