April 27, 2024, 5:41 am

ঈশ্বরদীতে ডেঙ্গু বাড়ছে, আক্রান্তের ৯০ ভাগ রূপপুর প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারী

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। আক্রান্ত রোগীর অধিকাংশই নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত দেশি-বিদেশি নাগরিক। এছাড়াও উপজেলার সাহাপুর ও পাকশীসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে রোগী আসছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

আক্রান্তের হিসাব অনুযায়ী আজ শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ জন রোগী ভর্তি আছেন। এ ছাড়া সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন দেড়শর বেশি রোগী। তবে আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার খুবই কম। কয়েকদিন আগে রকিবুল ইসলাম নামে এক রোগীকে ঈশ্বরদী থেকে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানোর পর তিনি মারা যান। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়াও পাবনা, রাজশাহী, ঢাকায় ৪০ জনের অধিক রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। আক্রান্ত রোগীর ৯০ ভাগই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী। বাঙালি ছাড়াও আক্রান্তের তালিকায় রয়েছেন রূপপুরে কর্মরত রুশসহ বিদেশি নাগরিকেরা। প্রথমদিকে তারা জ্বরাক্রান্ত হয়ে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। কিন্তু সুস্থ না হওয়ায় অনেকে প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ডেঙ্গুর বিষয় নিশ্চিত হয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি হতে আসেন। এছাড়াও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা সরাসরি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে তাদের পরীক্ষা নিরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ও ডেঙ্গু ইউনিটের প্রধান শফিকুল ইসলাম শামীম বলেন, বিগত বছরের তুলনায় ঈশ্বরদীতে এবার ডেঙ্গু আক্রান্তের হার উদ্বেগজনক। এ কারণে হাসপাতালে ডেঙ্গুর আলাদা ইউনিট চালু করা হয়েছে। তিনি জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা ৯০ ভাগ রোগী আসছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। আমরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে তাদের জানিয়েছি। বাসাবাড়ি বা অফিস চত্বরে জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গু মশা বিস্তার লাভ করে। এজন্য জমে থাকা পানি অপসারণ ও এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। তারা ইতিমধ্যে গ্রিনসিটি এলকায় নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।

রূপপুরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেশি কেন? এমন এক প্রশ্নের জবাবে চিকিৎসক শফিকুল ইসলাম শামীম বলেন, আক্রান্ত রোগীর অনেকেই কিন্তু বাইরে থেকে এসেছেন। আবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর মাধ্যমে অন্য ব্যক্তির শরীরে ডেঙ্গু ছড়িয়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এর বাইরে বিশেষ কোনো কারণ আছে কিনা- সেটি বিশেষজ্ঞরা ভালো বলতে পারবেন।

রূপপুর প্রকল্পে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের অভ্যন্তরে চিকিৎসা ইউনিট রয়েছে। এটি রূপপুর প্রকল্পের মূল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আছে (Ase) দ্বারা পরিচালিত। কিন্তু আছের মেডিকেল ইউনিটে চিকিৎসক ফকরুল ইসলাম কিছুদিন যাবৎ অনুপস্থিতির কারণে অভ্যন্তরীণ চিকিৎসাসেবা ব্যহত হচ্ছ।

এদিকে রূপপুরে প্রকল্পের বিদেশীদের আবাসন এলাকা সাহাপুরে’গ্রিনসিটি বহুতল ভবনের’ অভ্যন্তরে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পাবনা সিভিল সার্জন বিভাগের একটি টিম গত সপ্তাহে গ্রিনসিটি এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন টিমটি এ সময় গ্রিনসিটি ভেতর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন নিশ্চিত ও মশা নিধনের জন্য পরামর্শ দেন।

রূপপুর প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরাও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। বিশেষ করে গ্রিনসিটি ভবনের অভ্যন্তর ও আশপাশে মশা নিধনের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন রাশিয়ান নাগরিক রয়েছেন। তারা ঢাকায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের ব্যাপারেও খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :