April 20, 2024, 6:06 pm

চাষিরা বিক্রি করছে না ধান, শূন্যের কোটায় আমন সংগ্রহ

চাষিরা বিক্রি করছে না ধান, শূন্যের কোটায় আমন সংগ্রহ
সরকার দাম কম দিচ্ছে তাই সরকারের কাছে চাষিরা ধান বিক্রি করছেন না। ফলে সরকারিভাবে আমন ধান সংগ্রহ শূন্যের কোটায়। সরকারি আর স্থানীয় বাজারে দামের ফারাকের কারনে চুয়াডাঙ্গায় ১৭ নভেম্বর থেকে সরকারীভাবে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হলেও ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত এক ফোঁটাও ধান সংগ্রহ হয়নি । অথচ চুয়াডাঙ্গা জেলার ৪টি উপজেলায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার অধিক আমন ধান আবাদ হয়েছে। ফলনও হয়েছে বেশ।

চুয়াডাঙ্গা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০২২-২০২৩ আমন মৌসুমে এ জেলার ৪টি উপজেলায় মোট ২ হাজার ২৫৫ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩৪১ মেট্রিক টন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১ হাজার ৫৮ মেট্রিক টন, দামুড়হুদা উপজেলায় ৪৫৯ মেট্রিক টন ও জীবননগর উপজেলায় ৩৯৭ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো।

৩ জানুয়ারি পর্যন্ত এক কেজি ধানও সংগ্রহ হয়নি। ৪টি উপজেলায় চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩ হাজার ৮৩৪ মেট্রিক টন। সদর উপজেলায় ৪৮৩ মেট্রিকটন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৬১২ মেট্রিকটন, দামুড়হুদা উপজেলায় ৩২৫ মেট্রিক টন ও জীবননগর উপজেলায় ২ হাজার ৪১৪ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

প্রতি কেজি ধানের সংগ্রহ মূল্য ২৮ ও চালের সংগ্রহ মূল্য ৪২ টাকা। ২০২২ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত চলবে। তবে গত ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত চাল সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৬৭৮ মেট্রিক টন। জেলার ৬৭ টি চাল কলের সাথে চুক্তি হয়েছে চাল ক্রয়ের। তারা এ বছর ২ হাজার ৬২ মেট্রিক টন চাল দেবে সরকারি গুদামে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন রাইস মিল মালিক বলেন, আমরা সরকারের সঙ্গে চাল সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। বর্তমান বাজার দরের সাথে সরকার নির্ধারিত দামের বিস্তর ফারাকের কারনে চাল সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছেনা। কারন লোকসান করে চাল সরবরাহ করা অত্যান্ত দুরূহ হচ্ছে। সরকার প্রতি মন চাল ১ হাজার ৬৮০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু খোলা বাজারে প্রতি মন চাল ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

তাছাড়া বরাদ্দ পাওয়া ছোট ছোট মিল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের মিল ছোট। কোটায় বরাদ্দও কম পেয়েছে। কিন্তু এ চাল অটো রাইস মিলের মতো কোয়ালিটি করে দেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য সরকারিগুদামে চাল দিতে পারছেনা।

সরকারী খাদ্য গুদামে ধান সরবরাহ করা প্রসঙ্গে সদর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের কৃষক নূরুজ্জামান বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত ধানের দাম প্রতি মন ১ হাজার ১০০ টাকা করেছে। কিন্তু গ্রামের আড়তে প্রতি মন ধান আমরা বিক্রি করছি ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকা দরে। এতে আমাদের পরিবহন ব্যয়ও বেঁচে যাচ্ছে।

ধান-চাল সংগ্রহ মাস পেরিয়ে গেলেও কেনো শুন্যের কোঠায়-এ প্রশ্নের জবাবে ভারপ্রাপ্ত জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক একেএম শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছি ধান-চাল সংগ্রহ করতে। কিন্তু এখনো কাঙ্খিত সাড়া মেলেনি। তবে ৬৭৮ মেট্রিক টন চাল আজ পর্যন্ত সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। সংগ্রহ অভিযান আবারো বাড়ানো হবে। সরকারি আর স্থানীয় বাজারে দামের ফারাকের কারনে কৃষকরা আমাদের কাছে ধান বিক্রি করছে না’।

চলতি মৌসুমে এ জেলায় ১ লাখ ২৭ হাজার ২৩৬ মেট্রিক টন আম ধান উৎপাদন হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে এ জেলায় মোট ৩৪ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু মোট আবাদ হয়েছে ৩৫ হাজার ১৮৭ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৬৭ হেক্টর বেশী। চুয়াডাঙ্গা জেলার সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৩২০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১৬ হাজার ৫১২ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ৭ হাজার ১৫৫ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ৬ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছে। হেক্টর প্রতি গড় ফলন হয়েছে ৩ দশমিক ৬১ মেট্রিক টন।

আরও জানা যায়, ব্রি-ধান ৩০,৩১,৩২,৩৩,৩৯,৪০,৪১,৪৪,৪৬,৪৯,৫১,৫২ ও বিনা-৭ এবং স্বর্ণা জাতের ধান আবাদের জন্য গত ২০২০ সালে ৩ হাজার বিঘা জমিতে ফসল ফলানোর প্রক্রিয়া করে ৩ হাজার কৃষককে বীজ ও সারসহ ২৪ লাখ ৬ হাজার টাকা প্রণোদনা দেয় কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর। ২০২১ সালে ২ হাজার বিঘা জমিতে ধান আবাদের জন্য ২ হাজার কৃষককে ৭ লাখ ৮২ হাজার টাকা ও ২০২২ সালে ১০ হাজার ৫০০ বিঘা জমিতে ধান আবাদের জন্য ১০ হাজার ৫৫০ কৃষককে ২৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। এর ফলে ধানের আবাদ বেড়েছে বলে অধিদপ্তর দাবী করেছে।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা জানান, এবার বৃষ্টির কারণে ধানের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আবহাওয়া স্থিতিশীল হওয়ায় সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। অন্যান্য জেলায় খরার কারনে সেচ ব্যবস্থা আবাদ সহায়ক না থাকলেও চুয়াডাঙ্গা জেলা ছিলো সহায়ক। এখানকার কৃষকরা ভালো সেচ সুবিধা পেয়েছে। সময় মত ভালো জাতের ধান বীজ ও সার পেয়েছে। তাছাড়া পোকা মাকড়ের উপদ্রব ছিলোনা বলতে গেলেই চলে। পরিকল্পিত কৃষি ব্যবস্থার কারনে এবার আমন ধান উৎপাদন বেশ ভালো হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার কালা গ্রামের কৃষক মিনাজ আলী, কৃষক শামসুল, পুরাতন তেঁতুলিয়া গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম ও বাঁকা গ্রামের কৃষক বাদশা মিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে বিনা-৭, ব্রি-৪৯ ও ধানী গোল্ড জাতের ধান ১ হাজার ৩১০ থেকে ১ হাজার ৩২০, স্বর্ণা ও ব্রি-৫১ জাতের ধান ১ হাজার ১৭০ থেকে ১ হাজার ২০০, ব্রি-৭১ ও ব্রি-৭৫ জাতের ধান ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকা মন দরে বিক্রি হচ্ছে। ধানের বাজার দর বেশ ভালো বলে তারা জানিয়েছে।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :