April 18, 2024, 11:54 am

জাতীয় সংসদের অষ্টাদশ ও ২০২২ সালের বাজেট অধিবেশন সমাপ্ত

অনলাইন ডেস্ক : জাতীয় সংসদের অষ্টাদশ ও ২০২২ সালের বাজেট অধিবেশন আজ সমাপ্ত হয়েছে।
সংবিধান অনুযায়ি অধিবেশন সমাপ্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদের ঘোষণা পাঠ করে শোনানোর মাধ্যমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশন সমাপ্তির ঘোষণা দেন।
শেষদিনে রেওয়াজ অনুযায়ি সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাপনি ভাষণ দেন।
গত ৫ জুন থেকে শুরু হওয়া অধিবেশনে গত ৯ জুন অর্থ মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বর্তমান সরকারের এ মেয়াদের চতুর্থ বাজেট পেশ করেন। কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শ্লোগান শীর্ষক ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট পেশ করা হয়।
এবারের বাজেট অধিবেশনে মোট কার্যদিবস ছিল ২০টি। সম্পূরক বাজেটসহ মূল বাজেট সংক্রান্ত আলোচনায় ২২৮ জন সংসদ সদস্য অংশগ্রহণ করেন এবং মোট ৩৮ ঘন্টা ৫৭ মিনিট আলোচনা হয়। বাজেট পাস ছাড়াও এ অধিবেশনে ৪ টি বিল পাস হয়। আইন প্রণয়ন সম্পর্কিত কাজ সম্পাদনের পাশাপাশি কার্যপ্রণালী-বিধির ৭১ বিধিতে ৩৯ টি নোটিশ পাওয়া গিয়েছে। ১৬৪ বিধিতে ১ টি নোটিশ পাওয়া যায় এবং ৬২ বিধিতে ১টি নোটিশ পাওয়া যায়। এছাড়া ১৪৭ বিধিতে ১টি নোটিশ পাওয়া যায়, যা আলোচিত হয়। এ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর উত্তর দানের জন্য সর্বমোট ৮১টি প্রশ্ন পাওয়া যায়, তারমধ্যে তিনি ৪১টি প্রশ্নের উত্তর দেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের উত্তরদানের জন্য প্রাপ্ত মোট ১৬৪৫টি প্রশ্নের মধ্যে ১৩১১টি প্রশ্নের জবাব দেয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীবর্গ সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ে বিবৃতি প্রদান করেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অদম্য সাহস সততা ও দৃঢ় প্রত্যয়ের প্রতীক হচ্ছে পদ্মা সেতু। গত ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের ইতিহাসে বহু কাঙ্ক্ষিত সর্ববৃহৎ বহুমুখী অবকাঠামো প্রকল্প ‘পদ্মা সেতু’ উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার তিন কোটির অধিক মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে তিনি ২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি বলেন, দুর্নীতি চেষ্টার ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংকের মুখ ফিরিয়ে নেয়া, রাজনৈতিক বাদানুবাদ, গুজব, প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাসহ নানা প্রতিবন্ধকতা জয় করে প্রমত্তা পদ্মার বুকে এখন বাঙালির অহংকার, আত্মপ্রত্যয়, সক্ষমতা ও আত্মমর্যাদার প্রতীক হয়ে সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের ইতিহাসের ৬.১৫ কিলোমিটারের দীর্ঘতম সেতু। পদ্মা সেতুর সফল বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণ অঞ্চলের অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চারিত হবে এবং এর ফলে দক্ষিণাঞ্চল আঞ্চলিক অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে। পদ্মা সেতু নির্মাণ বঙ্গবন্ধুর আরাধ্য অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনে এবং স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় আজ এক সোনালী অধ্যায়ের সূচনা করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তা, দেশপ্রেম, যোগ্য নেতৃত্বের কারণে নিজস্ব অর্থায়নে এ সেতু নির্মাণ সম্ভব হয়েছে।
স্পিকার তাঁর বক্তব্যে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে এর সুদূরপ্রসারি ইতিবাচক প্রভাব বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।
স্পিকার বলেন, ‘আমরা জানি জাতীয় সংসদ সকল কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু। যে কোন বিষয় আলোচনার স্থান এই জাতীয় সংসদ। সংবিধান ও কার্যপ্রণালী বিধি অনুসরণ করে সংসদে যে কোন বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। সরকারীদল ও বিরোধীদলের সংসদ সদস্যদের আলোচনার মাধ্যমে যে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে তাতে দেশ ও জাতি উপকৃত হয়। সংসদ পরিচালনায় সংসদ-সদস্যদের সহযোগিতা একান্ত অপরিহার্য। এ অধিবেশনের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনায় সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য তিনি সংসদ সদস্যদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।’
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, এ অধিবেশনে জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সকল বৈষম্য দূর করে টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বর্তমান সরকারের এ মেয়াদে চতুর্থ বাজেট পেশ করেছেন। বাজেটে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড বাস্তবায়নের প্রতিফলন ঘটেছে। ২০৩০ সালে এসডিজি এর লক্ষ্যসমূহ অর্জনসহ ‘রূপকল্প- ২০২১’ সফলভাবে বাস্তবায়নের পর ‘রূপকল্প- ২০৪১’ কে সামনে রেখে এবারের বাজেট প্রণীত হয়েছে সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যেখানে অর্থনীতির চালিকা শক্তি হবে উন্নত প্রযুক্তি ও উচ্চতর প্রবৃদ্ধি। এ বাজেট বাস্তবায়নে দলমত নির্বিশেষে সকলকে সমন্বিত প্রয়াস চালাতে হবে। এদেশের আপামর জনগণের স্বপ্ন হচ্ছে একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। তাদের সে প্রত্যাশা পূরণ আমাদেরই করতে হবে। সংসদ-সদস্যগণ একটি দলের মনোনয়নে নির্বাচিত হলেও জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাদেরকে দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে এ গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে।
তিনি বন্যা দুর্গত মানুষের প্রতি সমবেদনা জানান।
তিনি সংসদ অধিবেশন পরিচালনায় সহযোগিতা প্রদানের জন্য সব সংসদ সদস্যকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
এছাড়া সার্বক্ষণিক সংসদ পরিচালনায় সহযোগিতা প্রদান করায় তিনি সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। স্পিকার সংসদ উপনেতা, মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, চিফ হুইপ ও হুইপবৃন্দের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বিরোধীদলীয় নেতা ও বিরোধীদলীয় উপনেতার প্রতি সংসদ কার্যক্রমে সহযোগিতার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি সভাপতিমন্ডলীর সদস্যবৃন্দকে তাঁদের সহযোগিতা ও পরামর্শের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি তার সহকর্মী ডেপুটি স্পিকারের সুস্থতা ও আশু রোগমুক্তি কামনা করেন।
একই সাথে তিনি সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দসহ গণমাধ্যমের সদস্যদের আন্তরিক ধন্যনাদ জানান।
স্পিকারের সমাপনি ভাষণ শেষে সেতু বিভাগ নির্মিত পদ্মা বহুমুখী সেতুর ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :