ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়া থানাধীন চর বাউসিয়া এলাকা হতে ডাকাতি কালীন সময়ে দুর্র্ধর্ষ মহাসড়ক ডাকাত চক্রের ৮ সদস্য র্যাব-১১ কর্তৃক আটক ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার।
দীর্ঘদিন যাবত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডাকাতি একটি মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে উঠেছে। সংঘবদ্ধ এই ডাকাত চক্র মহাসড়কের সাধারণ যাত্রী ও বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের ডাকাতি করে সর্বশান্ত করছে ও অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যাত্রীদের গুরতর আঘাতসহ হত্যার মত ঘটনাও ঘটাচ্ছে। বিভিন্ন সময় এসকল ডাকাতির ঘটনা স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদ মাধ্যম সহ সোস্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আকারে প্রকাশিত হয়েছে যা এই মহাসড়কের সাধারণ যাত্রী ও চালকদের মনে ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। র্যাব-১১ এই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ডাকাতি নিরসনে ও ডাকাতির সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৬/০৩/২০২৩ তারিখ ২৩:০০ ঘটিকায় র্যাব-১১, সিপিসি-১ নারায়ণগঞ্জের একটি চৌকস আভিযানিক দল মহাসড়ক ডাকাত চক্রের দলনেতাসহ ০৮ সক্রিয় সদস্যকে বিভিন্ন ধরণের দেশীয় অস্ত্রসহ হাতেনাতে আটক করতে সক্ষম হয়।
আপনারা জানেন যে, ডাকাতি নিরসনে র্যাব-১১ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় নিয়মিত অভিযান ও টহল কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে এবং বিগত এক বছরে ডাকাতির বিরুদ্ধে ৩৫ টি অভিযান পরিচালনা করেছে এবং মোট ১১৪ জন ডাকাতকে বিপুল পরিমান অস্ত্রসস্ত্র সহ গ্রেফতার পূর্বক আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে। এই ধারাবাহিক অভিযানের অংশ স্বরুপ র্যাব-১১, সিপিসি-১ নারায়ণগঞ্জ এর একটি আভিযানিক দল গতকাল ১৬/০৩/২০২৩ তারিখ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সাদা পোষাকে এবং পোষাক পরিহিত অবস্থায় দুটি দলে বিভক্ত হয়ে টহল কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। আভিযানিক দল টহল পরিচালনা করতে করতে কাঁচপুর থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত যায়। দাউদকান্দি থেকে পুনরায় ফেরত আসার পথে মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানাধীন চর বাউসিয়া এলাকায় পৌছালে র্যাব-১১ এর সাদা পোষাকের আভিযানিক দলটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকা মুখি নির্জ্জন অন্ধকারাছন্ন জায়গায় যানযটে পড়ে। এ সময়ে সাধারণ যাত্রীবাহি গাড়ী মনে করে ১০/১২ জন দুর্ধর্ষ ডাকাত দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ডাকাতির উদ্দেশ্যে সাদা পোষাকে থাকা র্যাব সদস্যদের গাড়ীটিকে ঘেরাও করে। তখন র্যাব সদস্যরা গাড়ী থেকে নেমে ধাওয়া করে কৌশলে এই ডাকাত দলের দলনেতা সহ ০৮ জন সদস্যকে বিভিন্ন ধরণের দেশীয় অস্ত্রসহ হাতেনাতে আটক করতে সক্ষম হয় এবং আরো ৩/৪ অজ্ঞাতনামা ডাকাত দৌড়ে পালিয়ে যায়। গ্রেফতারকৃত ডাকাত দলের সদস্যরা হলঃ ১। মোঃ সুজন (২০), পিতা- মৃত আঃ রহমান, সাংÑ ভবের চর, থানা-গজারিয়া, জেলা- মুন্সীগঞ্জ, এ/পি-সাং- হোমনা চৌরাস্তা (শাহাবুদ্দিনের বাড়ীর ভাড়াটিয়া), থানা- হোমনা, জেলা- কুমিল্লা, ২। মোঃ রাসেল (২৭), পিতা- মোঃ নান্নু মিয়া, সাং-চর বাউসিয়া বরকান্দি, থানা-গজারিয়া, জেলা- মুন্সীগঞ্জ, ৩। মোঃ আলাউদ্দিন (১৯), পিতা- মৃত তোফাজ্জল হোসেন, সাং-মুক্তির কান্দি, থানা- উত্তর মতলব, জেলা- চাঁদপুর, ৪। মোঃ বাদশা হোসেন দিপু (২৩), পিতা- মোঃ এনামুল হক, সাং- দিঘা, থানা-ঈশ^রদী, জেলা- পাবনা, এ/পি-সাং-গংঙ্গানগর, থানা-মেঘনা, জেলা- কুমিল্লা, ৫। মোঃ সাব্বির (১৯), পিতা- মোঃ জামাল হোসেন, সাং- নতুন বশুরচর, থানা-গজারিয়া, জেলা- মুন্সীগঞ্জ, ৬। মোঃ হাবিবুর রহমান (১৯), পিতা- মোঃ মনোয়ার হোসেন, সাং-কাইকারটেক, থানা- সোনারগাঁ, জেলা- নারায়ণগঞ্জ, এ/পি-সাং-নাসিমগেট মদনপুর, থানা-বন্দর, জেলা-নারায়ণগঞ্জ, ৭। মোঃ মিন্টু (২৩), পিতা- মৃত শাহজাহান, সাং-নীলখি লালবাগ, থানা- হোমনা, জেলা- কুমিল্লা, ৮। মোঃ সিয়াম (১৯), পিতা- মোঃ সেলিম, সাং- আল্লু বাজার, থানা-কোতয়ালী, জেলা- ডিএমপি, ঢাকা, এ/পি-সাং-পুরান বাউসিয়া টেকপাড়া, থানা-গজারিয়া, জেলা- মুন্সীগঞ্জ। গ্রেফতারকালে তাদের কাছ থেকে ডাকাতিতে ব্যবহৃত ০১ টি রামদা, ০৩ টি চাইনিজ কুড়াল, ০১ টি স্টীলের তৈরি চাপাতি, ০১ টি বড় ছোরা, ০১ টি হাতুড়ি এবং ০১ টি শাবল উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তারা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র এবং তাদের দলের সদস্য সংখ্যা ১২-১৫ জন। গ্রেফতারকৃত ডাকাত সর্দার মোঃ সুজন ও তার সহযোগীরা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকারের যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের নগদ টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র ডাকাতি করে আসছিল। গত দুই বছরে তারা এই মহাসড়কে প্রায় ৫০টির অধিক ডাকাতি করেছে বলে স্বীকারোক্তি প্রদান করে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডাকাতদের গ্রেফতারে র্যাব-১১ এর অভিযান চলমান থাকবে।গ্রেফতারকৃত ডাকাত চক্রের সদস্যদেরকে মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া থানায় হন্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
Leave a Reply