April 20, 2024, 4:50 pm

পঞ্চাশে বাংলাদেশ : ক্ষমতায়নের পথ কত দূর পেরোল নারী?

অনলাইন ডেস্ক।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণ উপভোগ করছে বাংলাদেশে। এর ঠিক ৫০ বছর আগে নারী-পুরুষের সম অধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সব পরিকল্পনা হাতে নিয়েই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নবগঠিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ভিত্তি রচনা করেছিলেন। তবে এটি এখনো পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। বরং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী- ২০২০ সালের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোতে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব রাখার বিধান থাকলেও তা পূরণ করা যায়নি।
রাজনৈতিক দলের নারী নেতৃত্বের বিষয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো রাজনৈতিক দল নিবন্ধিত হতে চায়, তবে নিম্নলিখিত শর্তগুলোর মধ্যে একটি পূরণ করবে— কেন্দ্রসহ সব পর্যায়ের কমিটিতে নারীদের জন্য কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ পদ সংরক্ষণ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে এবং ধারাবাহিকভাবে ২০২০ সালের মধ্যে এই লক্ষ্য অর্জন করতে হবে।’ কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোতে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব রাখার বিধান পালন করা সম্ভব হয়নি।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে ইসি কমিশনার কবিতা খানম বলেন, ২০১৮ সালে আমরা রাজনৈতিক দলে নারী নেতৃত্বের সর্বশেষ অবস্থার তথ্য নিয়েছিলাম। সেখানে প্রত্যাশিত মাত্রায় না হলেও বৃদ্ধির প্রবণতা আমরা লক্ষ্য করেছি।
ইসির তথ্য অনুযায়ী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ২৪ শতাংশের কম নারী রয়েছে। সংগঠনের তৃণমূল পর্যায়ে আরও অনেক কম। অন্যদিকে ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত দলের ষষ্ঠ কাউন্সিলের পর বিএনপি যে কমিটি ঘোষণা করে তাতে ৫২১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যে নারী রয়েছেন ৬৮ জন (১৩ শতাংশ)। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিতে বর্তমানে নারী নেতৃত্বের হার ১০ শতাংশে মতো।
তবে আশার কথা হলো- স্বাধীনতার এই ৫০ বছরে নারীরা অনেক ক্ষেত্রেই নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করে এগিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান সংসদে পঞ্চাশ জন সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য ছাড়াও তেইশ জন নারী সরাসরি নির্বাচিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন নারী, বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ একজন নারী, সংসদের উপনেতা বেগম সাজেদা চৌধুরী একজন নারী এবং জাতীয় সংসদের স্পিকার একজনও নারী।
দেশের তৈরি পোশাক কারখানায় ৮০ শতাংশ শ্রমিকই নারী। এছাড়া ডিজিটাল যুগে অনলাইনে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা হিসেবে নারীরা সফলভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে তৈরি পোশাক মালিক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সহ-সভাপতি ও হান্নান গ্রুপের চেয়ারম্যান এ বি এম সামছুদ্দিন বলেন, আমাদের পোশাক খাত আজকের অবস্থানে একদিনে আসেনি। ছোট ছোট কারখানা থেকে আজকের বড় বড় কারখানা হয়েছে। বিশ্বের ১০টি গ্রিন ফ্যাক্টরির সাতটি আমাদের দেশে। পোশাক খাতের এ অগ্রযাত্রায় সবচেয়ে বড় অবদান আমাদের নারী শ্রমিকের।
জাগো নিউজকে তিনি আরও বলেন, আমাদের আরএমজি সেক্টরের বেশিরভাগ শ্রমিক নারী, তাদের অবদান কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। তবে তাদের বেশিরভাগই দক্ষ শ্রমিক নন, আমরা আগামীতে তাদের আরও দক্ষ করে তুলতে চাই। শিল্পে এখন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। নতুন নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে যেন তারা চলতে পারে, এজন্য প্রযুক্তিতে তাদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে চাই। মালিক ও কারখানা যেমন গুরুত্ব পাবে, শ্রমিকও তো আমাদের বাইরে নন, তারাও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট রুমিন বলেন, নারীদের ক্ষমতায়ন আজ থেকে ৫০ বছর আগে যা ছিল, সেখান থেকে তো নিঃসন্দেহে কিছুটা এগিয়েছে। তবে কাঙ্ক্ষিত যে লক্ষ্যটা ছিল সেটা আমরা অর্জন করতে পারিনি। এর অনেকগুলো কারণ আছে। তা হলো- আমাদের সমাজ, আমাদের পরিবার, আমাদের রাষ্ট্র, আমাদের সরকার- এরা যে শুধু নারী অবান্ধব তা নয়, নারী বিদ্বেষীও বটে। এরকম একটি বৈরি প্রতিকূল পরিবেশে নারীদের যেকোনো ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়াটা কঠিন। আশার বিষয় হচ্ছে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে এবং এগিয়ে যাবে।
এদিকে নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নারী-পুরুষ সমানাধিকারের মৌলিক আইনি কাঠামো প্রণয়ন করে গেছেন। অনেক প্রতিবন্ধকতা, বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে নারীরা আজকের অবস্থান নিশ্চিত করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদের উন্নয়নের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করতে অনুকূল ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছেন। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে নারীশিক্ষায় ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোতে এবং উচ্চশিক্ষাক্ষেত্রেও মেয়েদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর লেখা গ্রন্থ ‘আমার দেখা নয়াচীন’ থেকে উদ্ধৃত করে স্পিকার বলেন, ‘বিয়েতে যৌতুক প্রথা কখনো কাম্য নয়। যে ছেলে এভাবে অর্থ চাইবে, তাকে কোনো মেয়ের বিবাহ করা উচিত না।’ কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও যৌতুক প্রথা চলছে বাংলাদেশে এবং এর বিস্তৃতি বাড়ছে। কখনো সরাসরি আবার কখনো উপহারের নামে যৌতুক নেয়া হচ্ছে।
স্পিকার বলেন, এই ঘৃণ্য প্রথা বন্ধ করতে হবে। জাতির পিতা বিশ্বাস করতেন- দেশকে এগিয়ে নিতে হলে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক প্রতিটি ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীর সমান অধিকার ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ, বঙ্গবন্ধু সামগ্রিক নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করতেন। পরিবার সমাজ ও জাতীয় ক্ষেত্রে কোথাও বঙ্গবন্ধু নারী-পুরুষের পৃথক মর্যাদার জায়গা রাখেননি। আওয়ামী লীগ যেমন অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে, তেমনি নর-নারীর সমান অধিকারেও বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগকে নারী নেতৃত্বে গড়ে তুলতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :