দৈনিক পদ্মা সংবাদ ডেস্ক।।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনের সর্বশেষ খবর পাওয়া গেছে৷ এবারের নির্বাচনে ২০২২-২৪ মেয়াদের জন্য সভাপতি পদে জয়ী হয়েছেন অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। সাধারণ সম্পাদক পদে তৃতীয়বারের মতো জয়ী হয়েছেন জায়েদ খান।
সভাপতি হিসেবে ইলিয়াস কাঞ্চন ,সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জায়েদ খান নির্বাচিত হয়েছেনসভাপতি হিসেবে ইলিয়াস কাঞ্চন ,সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জায়েদ খান নির্বাচিত হয়েছেন
জনপ্রিয় তারকাদের অন্তর্ভুক্তিতে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির এবারের নির্বাচন বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। সাধারণ মানুষেরও আগ্রহের কেন্দ্রে চলে আসে এবারের নির্বাচন। তারকাদের একনজর দেখার জন্য এফডিসির প্রধান ফটকে সকাল থেকেই ছিল ভিড়। ভিড় গিয়ে ঠেকে এফডিসির সামনের উড়ালসড়কের কাছে। বিভিন্ন বয়সী নারী–পুরুষকে দেখা যায় এফডিসির সামনে দিনভর দাঁড়িয়ে থাকতে। একেকটা গাড়ি ঢোকে আর বের হয়—অমনি সাধারণ দর্শকের চিৎকার, দেখ দেখ কোন নায়ক–নায়িকা যায়। সারাদিনের এমন উৎসবমুখর পরিবেশের পর জানা গেল বিজয়ীদের নাম।
শুক্রবার সারা দিন নির্বাচন এবং রাত সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোট গণনা শেষে এগিয়ে থেকে আগামী দুই বছরের জন্য সভাপতি হিসেবে ইলিয়াস কাঞ্চন ,সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জায়েদ খান নির্বাচিত হয়েছেন।
এ ছাড়া অন্যান্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন সহ-সভাপতি পদে ডিপজল ও রুবেল, সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে সাইমন সাদিক জয়ী হয়েছেন। যুগ্ম সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন অভিনেত্রী শাহানূর৷ সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে মামনুন ইমন জয়ী হয়েছেন৷ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন জয় চৌধুরী।
এছাড়া কার্যকরী সদস্য পদে জয়ী হয়েছেন মিশা-জায়েদ প্যানেল থেকে অঞ্জনা, রোজিনা, অরুণা বিশ্বাস, সুচরিতা, আলীরাজ, মৌসুমী, চুন্নু আর কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলের ফেরদৌস, কেয়া, জেসমিন ও অমিত হাসান।
শিল্পী সমিতির এবারের নির্বাচন নিয়ে ছিল শঙ্কাও। তাই কয়েক স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল এ নির্বাচন ঘিরে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাইরে নির্বাচনের দিন প্রথম এফডিসিতে পা রাখেন চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক। আস্তে আস্তে তারকাদের আনাগোনায় মুখর হতে থাকে বিএফডিসির আঙিনা। তবে এবারের নির্বাচনে প্রার্থী এবং তারকা ভোটাররা মিস করেছেন তাঁদের অনেক তারকা বন্ধু, সহকর্মী ও প্রিয়জনদের। কেউ ছিলেন দেশের বাইরে, কেউবা দেশে থাকলেও করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ভোট দিতে আসেননি। অন্যদিকে ডলি জহুরের মতো অভিনয়শিল্পী জানালেন, শিল্পী সমিতির ভোট দিতেই তিনি দেশের বাইরে থেকে এসেছেন।
ডলি জহুর ভোট দিতে এসেছিলেন শর্মিলী আহমেদ ও দিলারা জামানকে নিয়ে। এবারের নির্বাচনে ভোট দিতে এসেছিলেন জ্যেষ্ঠ অভিনয়শিল্পী মিরানা জামানও। দিনব্যাপী এফডিসিতে অনুষ্ঠেয় চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ভোট ঘিরে ছিল চাপা উত্তেজনা, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এবং উৎসব আর উৎকণ্ঠাও। শেষ পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সুন্দরভাবে ভোট গ্রহণ শেষ।
ভোট দিতে এসেছিলেন ডলি জহুর।ভোট দিতে এসেছিলেন ডলি জহুর।
বছরের অন্যান্য সময়ে চলচ্চিত্রের যেসব তারকাকে এফডিসিতে আসতে দেখা যায় না, তাঁরাও এদিনটায় একবার আসেন। দীর্ঘদিন যেসব শিল্পীর সঙ্গে দেখা হয় না, তাঁদের সঙ্গে আড্ডা দেন। কথা বলেন। ভালো–মন্দ জানার চেষ্টা করেন। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ভোটদানের এই দিনে তেমনই এক উপলক্ষ তৈরি হওয়াতে দেখা হয় মঞ্চ-টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী জাহিদ হাসানের সঙ্গে চিত্রনায়ক ফেরদৌসের।
ভোটদানের জন্য এফডিসিতে ঢোকার সময় জাহিদ হাসানের গাড়ি দেখতে পেয়ে ফেরদৌস সামনে এসে দাঁড়ান এবং কথা বলেন। জাহিদের উদ্দেশে ফেরদৌস বলেন, ‘ভাই ভোট নয়, জাহিদ ভাই আমাকে ভালোবাসা দেবেন। এটুকু ছোট ভাই হিসেবে আপনার কাছে আমার চাওয়া।’ এ সময় জাহিদ হাসান হাসতে হাসতে ফেরদৌসকে বলেন, ‘ছোট ভাই, তোমাদের জন্য আমার ভালোবাসা কোনো দিন ফুরাবে না। এ ভালোবাসা চলবে, চলতেই থাকবে।’
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির এবারের নির্বাচনে ভোটের কয়েক দিন আগে থেকে ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ ও মিশা জায়েদ প্যানেলের মধ্যে যে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল, ভোটের দিন সেই উত্তেজনা অনেক কম ছিল। তবে নিয়ম ভাঙার অভিযোগে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্যানেলের মধ্যে ছিল পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। দুপুরের বিরতির আগে হঠাৎ নিপুণ তাঁর বিরোধী প্যানেলের জায়েদ খানের বিরুদ্ধে টাকা দিয়ে ভোট সংগ্রহের অভিযোগ করেন। এরপর জায়েদও জানান, নিপুণের প্যানেলের একজন প্রার্থী টাকা দিয়ে ভোট সংগ্রহ করছেন। তবে সেই সময় কিছুটা উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। নিপুণ বিষয়টি একাধিকবার নির্বাচন কমিশনের নজরে আনলে তারা লোক পাঠিয়ে সেখান থেকে দুই প্যানেলের প্রার্থীদের সরিয়ে দেন।
অন্যান্য বারের চেয়ে এবারের নির্বাচন ছিল অনেকটাই ব্যতিক্রম। ভেতরে প্রবেশ ছিল বেশ কড়াকড়ি। এ কারণে এফিডিসির বাইরে যতটা না জটলা ছিল, তার চেয়ে বেশ জটলামুক্ত ছিল ভেতরের পরিবেশ। এ কারণে তারকা শিল্পীরা অনেকটাই নির্বিঘ্নে ভোট দিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ভোটকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে চিত্রনায়িকা বুবলী বলেন, ‘ভালো লেগেছে। স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট দিলাম। প্রার্থীদের মধ্যে বেশ টান টান উত্তেজনা দেখা গেছে।’
বিকেলের দিকে মান্না ডিজিটাল কমপ্লেক্সে বসে ভোটের পরিবেশ নিয়ে নায়ক আলমগীর বলেন, ‘সুন্দর পরিবেশে ভোট হয়েছে। এটি ভালো দিক।’ ভোট দিতে এসেছিলেন আনোয়ারা, জাহিদ হাসান, আসাদুজ্জামান নূর, নূতন, শহীদুজ্জামান সেলিম, আমিন খান, অপু বিশ্বাস, বিদ্যা সিনহা মিম, ববি, বাপ্পী, মুক্তি, সিমলা, দীঘি প্রমুখ।
সকাল ৯টায় ভোট গ্রহণ শুরু হলেও ১১টা পর্যন্ত ঢিলেঢালা ভোট চলে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার উপস্থিতি বাড়তে থাকে। এফিডিসির বাগান ও ১ নম্বর ফ্লোরের পাশের রাস্তা দিয়ে লাইন ধরে শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে গিয়ে ভোট দেন ভোটার। সকাল ৯টায় ভোট শুরু হয়ে শেষ হয় বিকেল পাঁচটার পর। ৪২৮ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দেন ৩৬৫ জন ভোটার।
এক নজরে দেখে নেয়া যাক ভোটের ফলাফল
সভাপতি পদে জয়ী ইলিয়াস কাঞ্চন ভোট পেয়েছেন ১৯১টি। তার প্রতিদ্বন্দ্বী মিশা সওদাগর ১৪৮ ভোট পেয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খান ও নিপুণের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। জায়েদ ১৭৬ ভোট পেয়ে তৃতীয়বারের মত বিজয়ী হয়েছেন। নিপুণ মাত্র ১৬৩ ভোটে হেরেছেন। দুটি সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন মাসুম পারভেজ রুবেল (১৯১) ও ডিপজল (২১৯)। একই পদে ডিএ তায়েব ও রিয়াজ পেয়েছেন ১১২ ও ১৫৬ ভোট।
সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে ২১২ পেয়ে জিতেছেন সাইমন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সুব্রত পেয়েছেন ১২৭ ভোট। শাহানূর ১৮৪ পেয়ে সাংগঠিনক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। একই পদে আলেকজান্ডার বো পেয়েছেন ১৫৫ ভোট।
আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন জয় চৌধুরী ২০৫ ভোট পেয়ে। তার প্রতিদ্বন্বী নিরব পেয়েছেন ১৪০ ভোট। দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক পদে আরমান ২৩২ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জ্যাকি আলমগীর পেয়েছেন ১৬০ ভোট।
সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে জিতেছেন ইমন ২০৩ ভোট পেয়ে। একই পদে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্বী জাকির হোসেন পেয়েছেন ১৩৬ ভোট। কোষাধ্যক্ষ পদে জিতেছেন আজাদ খান ১৯২ ভোট পেয়ে। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফরহাদ পেয়েছেন ১৪৬ ভোট।
১১টি কার্যনিবার্হী সদস্য পদের জন্য লড়াই করেন ২৪ জন। এদের মধ্যে জয় লাভ করেছেন রোজিনা (১৮৫), মৌসুমী (২২৫), কেয়া (২১২), জেসমিন (২০৮), অঞ্জনা (২২৫), অমিত হাসান (২২৭), চুন্নু (২২০), আলীরাজ (২০৩), সুচরিতা (২০১), ফেরদৌস (২৪০), অরুনা বিশ্বাস (১৯২)। কার্যনির্বাহী সদস্য পদে হেরেছেন আফজাল শরীফ (১৬৩), আসিফ ইকবাল (১৬৮), গাংগুয়া (৯৯), নানা শাহ (১৬২), বাপ্পারাজ (১১৭), হরবোলা (৪৭), শাকিল খান (৭৯), সাংকুপাঞ্জা (৮২), সীমান্ত (১৭৩), হাসান জাহাঙ্গীর (১১১), নাদির খান (১৭৯) ও পরীমনি (৭৯)।
শিল্পী সমিতির নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছেন পীরজাদা হারুন। কমিশনের অন্য দুজন সদস্য হলেন বিএইচ নিশান ও বজলুর রাশীদ চৌধুরী। আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান। মোহাম্মদ হোসেন জেমী ও মোহাম্মদ হোসেনকে আপিল বোর্ডের সদস্য। কেউ নির্বাচনের ফল চ্যালেঞ্জ করতে চাইলে একদিনের মধ্যে আপিল বোর্ডে ৫ হাজার টাকা জমা দিয়ে করতে পারবেন।
এবারের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে দুটি প্যানেল। ৪২৮ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দেন ৩৬৫ জন। বাতিল হয়েছে ১০টি ভোট। শুক্রবার সকাল ৯টা ১২ মিনিটে ভোট শুরু হয়ে শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে ২১টি পদের জন্য লড়েছেন ৪৪ জন।
চলচ্চিত্র শিল্পীদের পেশাগত স্বার্থ রক্ষার্থে গঠিত এই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি বা সংগঠন। ১৯৮৪ সালে গঠিত হয় সংগঠনটি। তবে শিল্পীদের এই সংগঠনের ইতিহাস আরো সুপ্রাচীন। ভারত উপমহাদেশে এর যাত্রা শুরু হয় ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত ভারত চলচ্চিত্র সমিতির মাধ্যমে। ১৯৩৮ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় চিত্র ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সমিতি। এরপর ১৯৩৯ সালে কলকাতায় নিখিল বঙ্গ চলচ্চিত্র সংঘ নামে আরএকটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশ বিভাগের পর পূর্ববঙ্গের রাজধানী ঢাকায় ১৯৫২ সালে পূর্ববঙ্গ চলচ্চিত্র সমিতি নামে আরেকটি সংগঠন গঠিত হয়।
Leave a Reply