April 20, 2024, 5:45 pm

বেনাপোল কাস্টমসের হয়রানি : বিক্ষোভে বন্ধ আমদানি-রপ্তানি

বেনাপোল কাস্টমসের হয়রানি : বিক্ষোভে বন্ধ আমদানি-রপ্তানি বেনাপোল বন্দরে চোরাচালানে সহযোগিতার অভিযোগ এনে কাস্টমস কর্তৃক এক সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ সদস্যকে লাঞ্ছিতের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ১০ দাবিতে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দুদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করে দেয় বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ এ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুর একটা থেকে কর্মবিরতি ডাক দিয়ে কাস্টমস কার্গো শাখার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় তারা।
আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় প্রবেশের অপেক্ষায় বন্দরের দুই পাড়ে শত শত ট্রাক পণ্য নিয়ে আটকা পড়েছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে শিল্পকলকারখানার কাঁচামালসহ খাদ্যসামগ্রী। যদি দ্রুত ট্রাক থেকে পণ্য খালাসের ব্যবস্থা না হয় তবে লোকশানে পড়বে ব্যবসায়ীরা।
এদিকে কাস্টমসের এমন সিদ্ধান্তকে অযৌক্রিক দাবি করে সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ সদস্যরা প্রতিবাদ জানিয়ে কাস্টমস হাউজের সামনে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা করেছে। তারা বলেন, করোনাকালীন আমাদের বর্ডাম্যানরা ভারতে প্রবেশ করতে পারেন না। ভারতীয় এক্সপোর্টাররা ও ট্রাক ড্রাইভার হেলপাররা আমদানি পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে থাকে। সেক্ষেত্রে পণ্য আনলোডের পূর্বে কিভাবে বর্ডারম্যানরা বুঝবে তাতে অবৈধ মালামাল আছে কিনা। আর সেক্ষেত্রে কেনইবা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সদস্যদের পারমিট কার্ড কেড়ে নেবে, নানা ভাবে হয়রানিসহ পারমিট লাইসেন্স বাতিল করার হুমকি দেবে।
তারা আরো বলেন, কাস্টমস হাউজের প্রত্যেকটি শুল্কায়ন শাখা ও পরীক্ষণ শাখায় অসংখ্য এনজিও কর্মী রয়েছে। তারা কাস্টমস অফিসারদের বিভিন্ন রকম ভুল বুঝিয়ে সিএন্ডএফ এজেন্টস সদস্যদের হয়রানিসহ বাড়তি উৎকোচ দাবি করেন। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কাস্টমস অফিসাররাও সিএন্ডএফ এজেন্টস সদস্যদের সাথে অসদাচরণ করে থাকেন। আমরা ২৪ ঘণ্টা সরকারি রাজস্ব আদায়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখি। তাহলে কেন আমাদের সঙ্গে এমন আচরণ। আমাদের তো সরকার কোনো বেতন ভাতা দেয় না। তারপরও রাজস্ব আদায়ে আমরা সর্বদা সচেষ্ট থাকি।
ভুক্তভোগী খলিলুর রহমান অ্যান্ড সন্স নামের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের স্টাফ সদস্য আক্তারুজ্জামান আক্তার জানান, বুধবার (১৩ জানুয়ারি) রাতে কয়লা বোঝাই একটি ট্রাক যখন ভারতের পেট্রাপোল বন্দর থেকে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে তখন আমি বর্ডারের কার্গো শাখা থেকে ওই পণ্যের মেনিফেস্ট নম্বর ও ইনভয়েস তুলে বাড়িতে চলে আসি। পরবর্তীতে রাতে কাস্টমস কর্মকর্তারা আমাকে ফোন করে বন্দরের ট্রাক টার্মিনালে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি একটি ট্রাক থেকে ফেনসিডিল ও আমি যে ট্রাকটির কাগজপত্র তুলি সে ট্রাকটি থেকে ওষুধ উদ্ধার করে। সে সময় কাস্টমস কর্মকর্তার আমার কাছ থেকে কাস্টমস পারমিট কার্ডটি নিয়ে নেয় এবং ট্রাকসহ আমাকে নিয়ে কাস্টমস হাউজের মধ্যে আসে। পরে তারা একটা কাগজে আমার সাক্ষর নিয়ে কাস্টমস কার্ড নিয়ে রাত ১২টার দিকে আমাকে ছেড়ে দেয়।
কাস্টমস কর্মকর্তারা বলে অবৈধ পণ্য আনার অপরাধে আমার নামে মামলা হবে। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, আমাকে আটক করে আমার পারমিট কার্ড কেড়ে নিয়ে, কাগজে আমার সাক্ষর নিয়ে আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে ভারতীয় ড্রাইভারকে আটক না করে কেন তাকে ছেড়ে দেওয়া হলো? আর এ অবৈধ মালামালের জন্য আমি কেন দায়ী হবো ? সঠিক তদন্ত পূর্বক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানান, পণ্য আসে ভারত থেকে। ট্রাকে অবৈধ পণ্য আনে ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভাররা অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ প্রতিনিয়ত জোর করেই সিএন্ডএফ এজেন্ট ও সিএন্ডএফ এজেন্ট কর্মচারিকে দায়ী করে চলেছেন। এর সাথে কোনো সিএন্ডএফ এজেন্ট এর মালিক বা কোনো স্টাফ জড়িত থাকতে পারে না। এটা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য না। তবে বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। রবিবার থেকে বন্দর ও কাস্টমস যৌথভাবে চেকপোস্টে ভারতীয় ট্রাক তল্লাশি করে ছাড় দেবে। এর ফলে আমাদের আর কোনো দায়-দায়িত্ব থাকবে না।
এ ব্যাপারে সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, আমদানিকারকরা ভারত থেকে পণ্য আমদানি করেন। পণ্য বোঝাই ট্রাকগুলো আমরা বাংলাদেশে আসার পরে গ্রহণ করি। এসব পণ্য বোঝাই ট্রাক ভারতের পেট্রাপোলে পার্কিংয়ে আসার পর ড্রাইভার হেলপার পরিবর্তন হয়ে থাকে। এসব ড্রাইভার ও হেলপাররা চোকারবারীদের সাথে যোগসাজেস করেই অবৈধ পণ্য ট্রাকে তুলে নিয়ে আসে। এসব অবৈধ কাজের সাথে কোনো সিএন্ডএফ এজেন্ট বা কোনো স্টাফ জড়িত থাকতে পারে না। কাস্টমস জোর করে সিএন্ডএফ এজেন্টকে দায়ী করছেন। আমরা আমদানীকৃত পণ্যগুলো কাস্টমস থেকে ছাড় করিয়ে সরকারের রাজস্ব আহরনে সহায়তা করে থাকি।
বেনাপোল কাস্টমস হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার ড. মো. নেয়ামুল ইসলাম জানান, গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারি ভারতীয় বৈধ আমদানি পণ্যের ট্রাকের সাথে কিছু অবৈধ মালামাল বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করেছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা বন্দরের ভারতীয় ট্রাক টার্মিনালে অভিযান চালাই। এ সময় ভারতীয় তুলার ট্রাক থেকে ২০০ বোতল ফেনসিডিল ও কয়লার ট্রাক থেকে কিছু ভারতীয় ওষুধ উদ্ধার করি। এই কয়লার ট্রাকের বর্ডারম্যান আক্তারুজ্জামান আক্তারকে আটক করে তার কার্ড সিচ করে নেওয়া হয়েছে। এবং এই কর্মচারি কার্ড সিচ করে নেওয়ার কারনে সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের নেতাকর্মীরা আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। এ ঘটনায় নিরাপরাধ কাউকে হয়রানি করা হবে না। এবং ঘটনাটির তদন্ত চলছে বলেও তিনি জানান।
উল্লেখ্য, বুধবার (১৩ জানুয়ারি) রাতে বেনাপোল স্থলবন্দরের টিটিআই টার্মিনাল থেকে ২০০ বোতল ফেনসিডিল ও বিভিন্ন প্রকার ওষুধ জব্দ এবং ভারতীয় একটি ট্রাক আটক করে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এ সময় ট্রাকচালক পালিয়ে যান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :