ঝিনাইদহের শৈলকুপায় নারীদের ব্যক্তিগত ভিডিও ধারণ নিয়ে হৈ চৈ পড়ে গেছে। অজ্ঞাত এক লম্পট শৈলকুপার সাপখোলা গ্রামের প্রায় দেড়’শ নারীর এমন ভিডিও ধারণ করে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। গ্রামবাসি ভাষ্য প্রায় দেড় বছর ধরে বিকৃত রুচির ওই যুবক বাড়ি বাড়ি ঘুরে গভীর রাতে নারীদের ব্যক্তিগত ভিডিও ধারণ করলেও সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
তবে ওই অজ্ঞাত ব্যক্তির ফেলে যাওয়া মোবাইল পাওয়ার পর গ্রামবাসি জানতে পারে তাতে প্রায় দেড়’শ নারীর ব্যক্তিগত ভিডিও রয়েছে। ভুক্তভোগীরা জানান, সংসারের ঘানি টানতে সারাদিনের কাজকর্ম সেরে গ্রামের মানুষ যখন রাতে বাবা-মা, পরিবার-পরিজন, স্ত্রী-সন্তানাদি নিয়ে নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করেন, তখন গোপনে ধারণ করা হচ্ছে ব্যক্তিগত ভিডিও। বিশেষ করে নারীদের ভিডিও ধারণ করা হচ্ছে। গত দুই বছর ধরে এমন সাইবার অপরাধ চলে আসলেও সনাক্ত করা যায়নি কে সেই লম্পট।
এমন ঘটনায় রাতের ঘুম হারাম গ্রামবাসীর। রাত জেগে কখনো কখনো পাহারাও দেয়া হলেও যেদিন পাহারা বন্ধ থাকে সেদিনই বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভিডিও করা হয়। এমন অবস্থায় সাপখেখালা গ্রামের একজন কৃষক গভীররাতে ভিডিও ধারনের সময় জানালার ভেতর থেকে তার মোবাইল কেঁড়ে নিতে সক্ষম হয়। তাতে দেড় শতাধিক ভিডিও-ছবি, যার সবই স্বামী-স্ত্রী আর নারীদের ব্যক্তিগত। এমন ঘটনা জানাজানির পর পুলিশ আর সাইবার ক্রাইম টিম নেমেছে অভিযানে। তবে এখনো আটক করতে পারেনি কাউকে। লোকলজ্জার ভয়ে কেউ থানায় মামলাও করেনি। ঝিনাইদহের শৈলকুপার সাপখোলা গ্রামের যুবক রবিউল ইসলাম চাকুরী করেন একটি বে-সরকারী কোম্পানীতে, থাকেন বাইরে। তবে তার স্ত্রী গভীর রাতে ঘরের পাশে মানুষের আনাগোনা আর টের পান।
তার ঘরে পাটখড়ি দিয়ে খোঁচা দেয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে চাকরি ছেড়ে রবিউল এখন বাড়িতে অবস্থান করছেন বলে জানান। গ্রামের কৃষক ফেরদৌস হঠাৎ তার ঘরের ভেতরে জানালা দিয়ে টর্চের আলোর উপস্থিতি টের পান। কৌশলে জানালার কাছে দাড়িয়ে দেখতে পান একটি মোবাইল ঢুকিয়ে ভিডিও করছে এক যুবক, তিনি থাবা দিয়ে মোবাইল কেড়ে নিলেও ভিডিও ধারণকারী পালিয়ে যায়। ঈদের দিন রাতে এমন ঘটনার মুখোমুখি হন তিনি। গ্রামের ইউপি সদস্য টিটো শিকদার জানান, অপরাধী চক্রের একটি মোবাইল তারা পেয়ে সামাজিক ভাবে বসে জানার চেষ্টা করেন সেটি কার। পরে ফোনটি পুলিশকে দিয়েছেন। সেই মোবাইলে গ্রামের বিভিন্ন পরিবার ও নারীদের দেড় শতাধিক ভিডিও-ছবি রয়েছে, যার সবই ব্যক্তিগত।
সেই ভিডিও ধারনের সময়কাল দেড় বছরের বেশী বলে এই ইউপি সদস্য জানান। এমন নাজুক আর উদ্বেগ পরিস্থিতিতে গ্রামে পাহারা বসানো হলেও তার মধ্যেই ঘটে চলেছে এমন সাইবার অপরাধ। গ্রামবাসী মোবাইল উদ্ধার করে তার সিম সনাক্ত করে জানতে পারে সিমটি সাপখোলা গ্রামের এক তরুনীর।
সেই তরুণী অভিযোগ করছে সিমটি তার আত্মীয় আজমুলের ছেলে পার্থ ওরফে তুরাগ জোর করে কেঁড়ে নেই দুই বছর আগে। বøাকমেইল সহ ছবি তুলে হুমকি দিয়ে রাখে সিমের কথা ফাঁস করলে ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দিবে এবং হত্যা করবে বলে হুমকি দিয়ে রেখেছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে ভিডিও ধারণকারী কি তাহলে তুরাগ ?
এ ব্যাপারে তুরাগ ও তার পরিবারের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও তাদের বাড়িতে কাউকে পাওয়া যায়নি। উদ্বেগ-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামজুড়ে। রাতে নিজ বাড়ি-ঘরে নিরাপত্তার সাথে ঘুমোতে না পারায় ভয়, উদ্বেগ কাজ করছে গ্রামবাসির মধ্যে। মান-সম্মান নিয়ে নিরাপদে থাকার জন্য গ্রামের মানুষ প্রতিনিয়ত বিবেকের সঙ্গে যুদ্ধ করছে।
এ বিষয়ে শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, নারীদের ব্যক্তিগত ভিডিও সহ নানা ভিডিও ধারণ হয়েছে। তবে এমন ঘটনায় থানায় এখনো মামলা হয়নি। বুধবার তারা ঘটনা জানতে পেরে, গ্রামবাসি যে মোবাইল পেয়েছিল তা জব্দ করেছে। সাপখোলা গ্রামের পার্থ ওরফে তুরাগ নামের একজন কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে-তদন্ত শুরু হয়েছে, আর পৃথকভাবে সাইবার ক্রাইমের টিম কাজ শুরু করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।।
Leave a Reply