প্রকৃতিতে বইছে বসন্ত বাতাস:ফুলের রঙে নিজেকে রাঙাচ্ছে কিশোরীরা

Padma Sangbad

অনলাইন ডেস্ক।।
প্রকৃতিতে বইছে বসন্ত বাতাস। সেই বাতাসে ভেসে বেড়ায় ফুলের গন্ধ। ফুলের রঙে নিজেকে রাঙাচ্ছে কিশোরীরা। ফুলের সুবাস বইছে যশোরের গদখালীতে। গতকাল দুপুরে
প্রকৃতিতে বইছে বসন্ত বাতাস। সেই বাতাসে ভেসে বেড়ায় ফুলের গন্ধ। ফুলের রঙে নিজেকে রাঙাচ্ছে কিশোরীরা। ফুলের সুবাস বইছে যশোরের গদখালীতে। গতকাল দুপুরে
দেশে ফুলের বৃহত্তম পাইকারি মোকাম যশোরের গদখালী আবার জমে উঠেছে। সেখানে সব ফুলের দাম বেড়েছে। মানভেদে প্রতিটি গোলাপ এখন পাঁচ থেকে আট টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা মাসখানেক আগেও মাত্র ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকায় বিক্রি হতো। একইভাবে দাম বেড়ে প্রতিটি গ্লাডিওলাস ৫ থেকে ১০ টাকা, রজনীগন্ধা ৬ থেকে ৭ টাকা, জারবেরা ৮ থেকে ১০ টাকা দরে এবং প্রতি হাজার গাদা ফুল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে।
গদখালী মোকামে আগামী দুই সপ্তাহ ফুলের বিশাল বেচাকেনা যজ্ঞ চলবে, এমনটাই আশা করেন স্থানীয় ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা। কারণ, এই সময়ে রয়েছে ফুল বিক্রির চারটি বড় উৎসব, ১৩ ফেব্রুয়ারি পয়লা ফাল্গুন, তথা বসন্ত উৎসব; ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনস ডে, মানে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস; ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও মহান শহীদ দিবস এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস। এসব উৎসব উপলক্ষে গদখালীর ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা গত বছর করোনাভাইরাস ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে যে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন তা পুষিয়ে নিতে পারবেন, এমনটাই আশা করছেন।
গদখালী এলাকার পটুয়াপাড়া গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন জানান, গত বছর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও পয়লা ফাল্গুন উপলক্ষে তিনি আড়াই লাখ টাকার গোলাপ ও গ্লাডিওলাস ফুল বিক্রি করেছিলেন। তবে এ বছর কত টাকার ফুল বিক্রি হবে, তা নিয়ে অবশ্য শঙ্কায় আছেন তিনি। কারণ, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে দেশে সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান ব্যাপক হারে কমেছে। উৎসব–আয়োজনও সীমিত হয়ে পড়েছে। অন্য অনেক ফুলচাষিও অতীতের মতো ফুল বিক্রি হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন।
শঙ্কার মধ্যেও আলমগীর হোসেন এবারে তিন বিঘায় গোলাপ, দেড় বিঘায় গ্লাডিওলাস ও ১৫ কাঠায় গাঁদা ফুলের আবাদ করার তথ্য দিয়ে বলেন, ‘করোনার কারণে গত বছর ফুল বিক্রি তেমন ছিল না। আশা করছি সামনের চারটি অনুষ্ঠানে গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব।’
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির (বিএফএস) কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, ‘গত বছর ইংরেজি বর্ষবরণ, পয়লা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও বাংলা বর্ষবরণ, ছয়টি অনুষ্ঠান ঘিরে যশোরের গদখালী অঞ্চলের কৃষকেরা অন্তত ৫০ কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা করেন। গত বছর আমাদের ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এ বছর আমরা কোনো লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে পারছি না। করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গত বছরের মতো এ বছর ফুল বেচাবিক্রি ততটা ভালো হবে না। তারপরও ফুলের চাহিদা ভালো থাকলে আমরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব বলে আশা করছি।’
করোনা পরিস্থিতিতে সরকার গত বছর লকডাউন বা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় কয়েক মাস সারা দেশ প্রায় অবরুদ্ধ ছিল। ওই সময়ে বিয়ে বা সামাজিক অনুষ্ঠানও প্রায় বন্ধ ছিল। যার প্রভাব পড়ে ফুল চাষ ও ব্যবসায়। ফুল বিক্রি না হওয়ায় অনেক কৃষক খেতের পরিচর্যা করা বন্ধ রাখেন। এতে ফুলের খেত নষ্ট হয়েছে।
হাড়িয়া গ্রামের কৃষক মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘এই অঞ্চলে প্রথমবারের মতো গত বছর আমি চীনের লং স্টিক রোজ জাতের গোলাপ ফুলের চাষ শুরু করেছিলাম। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে ফুল বিক্রি হয়নি। বাগান পরিচর্যায় খরচও বাড়ছিল। যে কারণে বাগান পরিচর্যা অনেকটা বাদ দিয়েছিলাম। এতে ১০ থেকে ১২ কাঠা জমির গোলাপগাছ মারা গেছে। তারপরও এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ২ লাখ টাকার গোলাপ ও ৫০ হাজার টাকার গ্লাডিওলাস ফুল বিক্রি হবে বলে আশা করছি। গত কয়েক দিনে এক লাখ টাকার ফুল বিক্রি করেছি।’
গদখালী এখন পর্যটন অঞ্চল
ফুল চাষের জন্য যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী এলাকার দেশজুড়ে সুখ্যাতি রয়েছে। সেখানে এখন মাঠজুড়ে ফুটে রয়েছে গোলাপ, গাঁদা, জারবেরা, রজনীগন্ধা ও গ্লাডিওলাস ফুল। প্রতিবছরের মতো এবারও গদখালী এলাকার পানিসারা, হাড়িয়া, পটুয়াপাড়া, নাটুয়াপাড়া, ফুলসারাসহ কয়েকটি গ্রামে প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটছে। তাঁরা ফুলের বাগানের সঙ্গে রাস্তার দুই ধারে গড়ে ওঠা দোকানগুলো থেকে ফুল কিনে নিয়ে যান। অনেকেই আবার এখানে এসে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেন।
পর্যটকদের আগমন বাড়ায় এই এলাকায় অর্ধশতাধিক ছোট ছোট রেস্তোরাঁ ও ক্যাফে গড়ে উঠেছে। এসব রেস্তোরাঁ ও ক্যাফেতে মিলছে যশোরের বিখ্যাত জামতলার মিষ্টি। দর্শক–পর্যটকেরা এই মিষ্টি খাচ্ছেন, আবার কিনেও নিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে পর্যটকদের যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি (বিএফএস) থেকে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক নিযুক্ত করা হয়েছে। গলায় পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে ও বাঁশি বাজিয়ে ছুটেন তাঁরা। সহায়তা করেন পর্যটকদের।।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Update Time : ১১:২৯:০০ অপরাহ্ণ, শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১

প্রকৃতিতে বইছে বসন্ত বাতাস:ফুলের রঙে নিজেকে রাঙাচ্ছে কিশোরীরা

Update Time : ১১:২৯:০০ অপরাহ্ণ, শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১

অনলাইন ডেস্ক।।
প্রকৃতিতে বইছে বসন্ত বাতাস। সেই বাতাসে ভেসে বেড়ায় ফুলের গন্ধ। ফুলের রঙে নিজেকে রাঙাচ্ছে কিশোরীরা। ফুলের সুবাস বইছে যশোরের গদখালীতে। গতকাল দুপুরে
প্রকৃতিতে বইছে বসন্ত বাতাস। সেই বাতাসে ভেসে বেড়ায় ফুলের গন্ধ। ফুলের রঙে নিজেকে রাঙাচ্ছে কিশোরীরা। ফুলের সুবাস বইছে যশোরের গদখালীতে। গতকাল দুপুরে
দেশে ফুলের বৃহত্তম পাইকারি মোকাম যশোরের গদখালী আবার জমে উঠেছে। সেখানে সব ফুলের দাম বেড়েছে। মানভেদে প্রতিটি গোলাপ এখন পাঁচ থেকে আট টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা মাসখানেক আগেও মাত্র ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকায় বিক্রি হতো। একইভাবে দাম বেড়ে প্রতিটি গ্লাডিওলাস ৫ থেকে ১০ টাকা, রজনীগন্ধা ৬ থেকে ৭ টাকা, জারবেরা ৮ থেকে ১০ টাকা দরে এবং প্রতি হাজার গাদা ফুল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে।
গদখালী মোকামে আগামী দুই সপ্তাহ ফুলের বিশাল বেচাকেনা যজ্ঞ চলবে, এমনটাই আশা করেন স্থানীয় ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা। কারণ, এই সময়ে রয়েছে ফুল বিক্রির চারটি বড় উৎসব, ১৩ ফেব্রুয়ারি পয়লা ফাল্গুন, তথা বসন্ত উৎসব; ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনস ডে, মানে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস; ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও মহান শহীদ দিবস এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস। এসব উৎসব উপলক্ষে গদখালীর ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা গত বছর করোনাভাইরাস ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে যে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন তা পুষিয়ে নিতে পারবেন, এমনটাই আশা করছেন।
গদখালী এলাকার পটুয়াপাড়া গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন জানান, গত বছর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও পয়লা ফাল্গুন উপলক্ষে তিনি আড়াই লাখ টাকার গোলাপ ও গ্লাডিওলাস ফুল বিক্রি করেছিলেন। তবে এ বছর কত টাকার ফুল বিক্রি হবে, তা নিয়ে অবশ্য শঙ্কায় আছেন তিনি। কারণ, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে দেশে সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান ব্যাপক হারে কমেছে। উৎসব–আয়োজনও সীমিত হয়ে পড়েছে। অন্য অনেক ফুলচাষিও অতীতের মতো ফুল বিক্রি হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন।
শঙ্কার মধ্যেও আলমগীর হোসেন এবারে তিন বিঘায় গোলাপ, দেড় বিঘায় গ্লাডিওলাস ও ১৫ কাঠায় গাঁদা ফুলের আবাদ করার তথ্য দিয়ে বলেন, ‘করোনার কারণে গত বছর ফুল বিক্রি তেমন ছিল না। আশা করছি সামনের চারটি অনুষ্ঠানে গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব।’
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির (বিএফএস) কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, ‘গত বছর ইংরেজি বর্ষবরণ, পয়লা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও বাংলা বর্ষবরণ, ছয়টি অনুষ্ঠান ঘিরে যশোরের গদখালী অঞ্চলের কৃষকেরা অন্তত ৫০ কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা করেন। গত বছর আমাদের ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এ বছর আমরা কোনো লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে পারছি না। করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গত বছরের মতো এ বছর ফুল বেচাবিক্রি ততটা ভালো হবে না। তারপরও ফুলের চাহিদা ভালো থাকলে আমরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব বলে আশা করছি।’
করোনা পরিস্থিতিতে সরকার গত বছর লকডাউন বা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় কয়েক মাস সারা দেশ প্রায় অবরুদ্ধ ছিল। ওই সময়ে বিয়ে বা সামাজিক অনুষ্ঠানও প্রায় বন্ধ ছিল। যার প্রভাব পড়ে ফুল চাষ ও ব্যবসায়। ফুল বিক্রি না হওয়ায় অনেক কৃষক খেতের পরিচর্যা করা বন্ধ রাখেন। এতে ফুলের খেত নষ্ট হয়েছে।
হাড়িয়া গ্রামের কৃষক মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘এই অঞ্চলে প্রথমবারের মতো গত বছর আমি চীনের লং স্টিক রোজ জাতের গোলাপ ফুলের চাষ শুরু করেছিলাম। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে ফুল বিক্রি হয়নি। বাগান পরিচর্যায় খরচও বাড়ছিল। যে কারণে বাগান পরিচর্যা অনেকটা বাদ দিয়েছিলাম। এতে ১০ থেকে ১২ কাঠা জমির গোলাপগাছ মারা গেছে। তারপরও এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ২ লাখ টাকার গোলাপ ও ৫০ হাজার টাকার গ্লাডিওলাস ফুল বিক্রি হবে বলে আশা করছি। গত কয়েক দিনে এক লাখ টাকার ফুল বিক্রি করেছি।’
গদখালী এখন পর্যটন অঞ্চল
ফুল চাষের জন্য যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী এলাকার দেশজুড়ে সুখ্যাতি রয়েছে। সেখানে এখন মাঠজুড়ে ফুটে রয়েছে গোলাপ, গাঁদা, জারবেরা, রজনীগন্ধা ও গ্লাডিওলাস ফুল। প্রতিবছরের মতো এবারও গদখালী এলাকার পানিসারা, হাড়িয়া, পটুয়াপাড়া, নাটুয়াপাড়া, ফুলসারাসহ কয়েকটি গ্রামে প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটছে। তাঁরা ফুলের বাগানের সঙ্গে রাস্তার দুই ধারে গড়ে ওঠা দোকানগুলো থেকে ফুল কিনে নিয়ে যান। অনেকেই আবার এখানে এসে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেন।
পর্যটকদের আগমন বাড়ায় এই এলাকায় অর্ধশতাধিক ছোট ছোট রেস্তোরাঁ ও ক্যাফে গড়ে উঠেছে। এসব রেস্তোরাঁ ও ক্যাফেতে মিলছে যশোরের বিখ্যাত জামতলার মিষ্টি। দর্শক–পর্যটকেরা এই মিষ্টি খাচ্ছেন, আবার কিনেও নিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে পর্যটকদের যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি (বিএফএস) থেকে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক নিযুক্ত করা হয়েছে। গলায় পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে ও বাঁশি বাজিয়ে ছুটেন তাঁরা। সহায়তা করেন পর্যটকদের।।