অনলাইন ডেস্ক।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো- এই কথাটা কোন অবস্থাতে মেনে নেয়া যায় না।
একটি টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাতকারে রাষ্ট্রপতি আজ শুক্রবার (২৬ মার্চ) একথা বলেন।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদিন এই সাক্ষাতকারটি গ্রহণ করেন।
‘মুজিব না থাকলে বাংলাদেশ কখনো জন্ম নিতো না’। বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা এ দুটোর মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি? এই প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান ছিল। এরপর ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনসহ ’৭০ এর নির্বাচন প্রতিটি ধাপে বঙ্গবন্ধু যে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। কোন আপোষ তার মধ্যে ছিল না।
তিনি বাঙ্গালীদের অধিকারের প্রশ্নে মাথানত করেননি। ’৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে তাঁর জীবনে যে সংগ্রাম করেছেন তার একটি চিত্র তিনি তাঁর মাত্র ১৮ মিনিট কয়েক সেকেন্ডের বক্তব্যে তুলে ধরেছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে যখন গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে নেয়া হলো-পাকিস্তানি কারাগারে থাকাকালীন তাকে কবর দেয়া হবে, তার সেলের পাশে কবর পর্যন্ত করা হয়েছে। নভেম্বরের মাঝামাঝির দিকে জেলখানা থেকে বঙ্গবন্ধুকে ইয়াহিয়া খান নিয়ে গেলেন এবং সেখানে জুলফিকার আলী ভুট্টোও ছিলেন। আরও অনেক জেনারেল ছিল। যারা নাকি ভেবেছিল বঙ্গবন্ধুর যে অবস্থার মধ্যে ছিলেন, হয়তো অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছেন এবং আপোষের ব্যাপারে একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু যখন ইয়াহিয়া খান তার দিকে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়ালেন, তখনই বঙ্গবন্ধু বললেন- ‘যে হাতে বাঙালির রক্ত লেগে আছে সে হাতের সাথে আমি হাত মেলাতে পারবো না। এতে করে এটাই মনে হয় যে, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো, এ কথাটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
প্রেসিডেন্ট বলেন, এটা আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি আল্লাহপাকের ইচ্ছা যে, বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য এ দেশের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য, বঙ্গবন্ধুর মতো একজন ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক এদেশে সৃষ্টি করেছিলেন। তার মাধ্যমে আমরা এদেশের স্বাধীনতা পেয়েছি।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭০ এর নির্বাচনে অংশ নেন। পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে তিনি নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু বাঙালির বহু আকাঙ্খিত স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। তিনি ’৭১ এর সেই উত্তাল দিনগুলো নিয়ে এবং বঙ্গবন্ধুর দিক নির্দেশনা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি বিষয়ে স্মৃতিচারণ করেন।
কিশোরগঞ্জে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা ১৭ মার্চ একটা তাৎক্ষণিক জনসভা ডাকলাম। সেখানে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে পুড়িয়ে দিলাম। বাংলাদেশের পতাকা উড়ালাম। আমি নিজেই কিশোরগঞ্জে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করছিলাম।
মুক্তিযুদ্ধে অগ্নিঝরা দিনগুলো সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করে মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমরা যে এতকিছু করেছিলাম। আসলে হচ্ছে টা কী কিছুই জানতাম না। উই আর ইন ডার্ক। কোন যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিল না। তখন ভাবলাম আগরতলা গিয়ে যদি কিছু জানা যায়। যাওয়ার পর দেখলাম সেখানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কয়েকজন আছেন, হবিগঞ্জের কয়েকজন আছেন। কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর কয়েকজন মিলে প্রায় ২৫-২৬ জন এমপি-এমএন পাইলাম। কলকাতায় তখন সরকার গঠনের আলাপ হচ্ছে। আগরতলা থেকে কলকাতায় যোগাযোগ হচ্ছে। আগরতলায় আলাপ আলোচনা হলো। তাজউদ্দীন সাহেবকে প্রধানমন্ত্রী, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি আর বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি-এই তিন ব্যাপারে আমরা ঐক্যমত ছিলাম। এরপর ১৯ তারিখ আগরতলা হয়ে মিঠামইন গেলাম। এরপর ৩১ মে আবার বাড়ি ছাড়লাম।’
পাকিস্তানের আত্মসমর্পণ করার খবর পাওয়ার পর আপনার অনুভূতি কেমন ছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘দেশ স্বাধীনতা পাওয়ার পর যে অনভূতি সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। কী আনন্দ যে হয়েছিলো, মনে হলো পৃথিবীতে এর চেয়ে পাওয়ার আর কিছু হতে পারে না। আমরা স্বাধীন। আমরা মুক্ত। যে স্বাধীনতার জন্য আমরা এত কিছু করেছি, এত রক্ত, সংগ্রাম, আন্দোলন, জেল-জুলুম-নির্যাতন ভোগ করেছি সেই স্বাধীনতা আনতে পেরেছি। এর চেয়ে বড় কিছু পাওয়ার থাকতে পারে না।’
স্বাধীনতা পরবর্তী পরিস্থিতি এবং দেশ পুনর্গঠন সম্পর্কে তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি আমিও ফিরে আসেছি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু একই দিনে ফিরে আসলেন। ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশের মধ্যে অবস্থান করে আমরা দেশকে পুনর্গঠন করার জন্য বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে কাজ করেছি।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলো। আপনি মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন। যে প্রত্যাশা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন সেই প্রত্যাশা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে এসে কতটুকু পূরণ হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে যদি ওই সময় হত্যা করা না হতো, তাহলে আরও ২০ বছর আগে আমরা এটা করতে পারতাম। এরপরেও আজকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা অনেক এগিয়ে গিয়েছি। অনেক উন্নতি করতে পেরেছি।’
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকীর সন্ধিক্ষণে তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘যে আদর্শ, লক্ষ্য সামনে নিয়ে আমরা যুদ্ধ করছিলাম। দেশকে স্বাধীন করলাম। আজকে নতুন প্রজন্মকে এই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সামনে রেখেই আদর্শকে ধরেই তারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে সেটাই আমার প্রত্যাশা। আমাদের নৈতিক চরিত্র, নীতি-আদর্শ অন্য দেশের মানুষ যাতে রোল মডেল হিসেবে গ্রহণ করতে পারে, ঠিক সেই পর্যায়ে নতুন প্রজন্ম দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে সেটাই আমি প্রত্যাশা করি।
বাসস
Leave a Reply