April 20, 2024, 5:24 am

চালু হলো বলেশ্বর রায়েন্দা-মাছুয়া নৌরুটে ফেরি, ৫০ বছরের স্বপ্ন পূরণ

 

অনলাইন ডেস্ক।
উত্তাল বলেশ্বর নদীতে রায়েন্দা-মাছুয়া নৌরুটে ফেরি চালুর মধ্য দিয়ে বাগেরহাটের শরণখোলা ও পিরোজপুরের মঠবাড়িয়াবাসীর স্বাধীনতার ৫০ বছর পর স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।

বুধবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা ঘাটে বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য আমিরুল আলম মিলন ও পিরোজপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী এই ফেরি সার্ভিসের উদ্বোধন করেন।

এসময়, শরণখোলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত, বাগেরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাতুনে জান্নাত, শরণখোলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমল হোসেন মুক্তা, সাধারণ সম্পাদক আছাদুজ্জামান মিলনসহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। ফেরি উদ্বোধন দেখতে দুইপাড়ে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়েছিল।

আরও পড়ুন

➡️দৌলতদিয়ায় ফেরি স্বল্পতায় ভয়াবহ ভোগান্তির চরমে!

এদিকে শরণখোলা ও মঠবাড়িয়া বাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা বলেশ্বর নদীতে ফেরি চালু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। ফেরি চালুর খবরে আনন্দে ভাসছেন এই অঞ্চলের মানুষ। ফেরি চালুর ফলে দুই আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর মোংলা ও পায়রার সঙ্গে সড়ক পথে দূরত্ব কমেছে ৭০ কিলোমিটার। ফলে বাঁচবে সময় ও অর্থ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালীসহ খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলাগুলোর লাখো মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় এ ফেরি সার্ভিস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বাগেরহাট সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদীর দুই তীরের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ ও দ্রæততর করতে রায়েন্দা-বড় মাছুয়া ফেরিঘাট নির্মান করা হয়েছে। এ বছরের মার্চ মাসে রায়েন্দা পর্শ্বনে রাস্তা নির্মাণ শুরু হয়।

অক্টোবরের মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ হয়। এই কাজে ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকা। মোঃ মাহফুজ খান প্রাইভেট লিঃ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি করেছেন। ফেরি চলাচল শুরু হওয়াতে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ এই ফেরিতে পার হবে। সহস্রাধিক যানবাহনও চলাচল করবে এই ফেরিতে। প্রতি ঘন্টায় ফেরি চালু রাখার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

ফেরি উদ্বোধনী ট্রিপের চালক আব্দুর রউফ বলেণ, এই ট্রিপের মাধ্যমে আমি ইতিহাসের স্বাক্ষি হলাম। মাছুয়া থেকে রায়েন্দা ঘাটে ভীড়তে ৪০ মিনিট সময় লেগেছে আমাদের। অন্যান্য সময় হয়ত ৪০ থেকে ৫০ মিনিট লাগতে পারে।
মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নে বাড়ি মালতি রায়ের। থাকেন বাগেরহাটের শরণখোলায়।

তিনি বলেন, স্বামীর চাকুরীর সুবাদে শরণখোলায় থাকতে হয় আমাদের। এত নিকটে নিজেদের বাড়ি থাকলেও সহজে যেতে পারিনা। কারন এত বড় নদী ট্রলারে পাড়ি দিতে ভয় লাগে। এখন ফেরি হওয়াতে খুব সহজেই আর নিয়মিত বাড়ি যেতে পারব। আমরা খুব খুশি।

একই উপজেলার বড়মাছুয়া গ্রামের ওসমান, মাধুরী রানী, চুন্নু মিয়াসহ কয়েক জন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের স্বপ্ন ছিল একটি ফেরির। কারন খেয়া বা ট্রলার যোগে উত্তাল এই নদী পাড়ি দিতে আমাদের নানান সমস্য হত।

অবশেষে ফেরি চালু হওয়াতে বাস, ট্রাক, এ্যাম্বুলেন্স, অটো, ভ্যান-রিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করবে। আমাদের অনেক সুবিধা হবে। সহজে মঠবাড়িয়া থেকে রায়েন্দা, বাগেরহাট, খুলনা-ঢাকা যেতে পারব।

রায়েন্দা এলাকার ডালিম, ইসলামাইল হোসেন, ঝর্ণা বেগমসহ কয়েক জন বলেন, ফেরি চালু হওয়াতে আমাদের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া, তুষখালি, ইন্দুরকানি, বরগুনার পাথরঘাটাসহ পুরো বরিশালের সাথে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়েছে।

আগে খেয়ায় অনেক টাকা ভাড়া দেওয়া লাগত, আবার গন্তব্যে পৌছাতে সময়ও লাগত বেশি। এছাড়া উত্তাল বলেশ্বরে ট্রলারে যেতে ঝুকিও ছিল অনেক। এখন আমরা নিরাপদে, কম খরচে যাতায়াত করতে পারবো।

এলাকার কলেজ শিক্ষার্থী ইমন ব্যাপারী বলেন, মঠবাড়িয়ায় আমাদের অনেক বন্ধু-বান্ধব রয়েছে। কিন্তু ইচ্ছা করলেই আমরা যেতে-আসতে পারিনা। কারণ আসতে-যেতে অনেক টাকা খরচ হয়। ফেরি চালু হওয়াতে যোগাযোগ ব্যবস্থায় দারুণ পরিবর্তন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আছাদুজ্জামান মিলন বলেন, ব্যবসা-বানিজ্য, সামাজিক সম্পর্ক সহ নানা কারণে বাগেরহাটের উপক‚লীয় উপজেলা শরণখোলার সাথে পাশ্ববর্তী পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়ার একটি ঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছে। কিন্তু এই যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে ছিল বলেশ্বর নদী। বলেশ্বর নদীতে ফেরি চালু হওয়ায় এই এলাকার মানুষের যোগযোগ ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হয়েছে।

বাগেরহাট সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, পিরোজপুর ও বরগুনা জেলার একটা বড় অংশের সাথে বাগেরহাটের মানুষের যোগাযোগের জন্য বলেশ্বর রায়েন্দা-বড়মাছুয়া খেয়া ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি পায়রা থেকে মোংলা বন্দরের মধ্যে নতুন যোগাযোগ স্থাপন হবে। বলেশ্বর নদীর দুই তীরের মানুষ স্বল্প সময় এবং অল্প ব্যয়ে তাদের প্রয়োজনীয় যোগাযোগ রক্ষা করতে পারবেন। ফেরির সুবিধা থাকাতে দুই পাড়ের মানুষের জন্য যাত্রীবাহী গন পরিবহনও চালু হবে বলে জানান তিনি।
বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য আমিরুল আলম মিলন বলেন, অবস্থানগত কারণে বাগেরহাট এবং পিরোজপুরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী ছিলো একটি ফেরির। অবশেষে তাদের সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ফেরি চালুর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান এই জনপ্রতিনিধি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :