পাহাড়ের রানী খাগড়াছড়ি। সবুজের ঘেরা ও সৌন্দর্য্যের রূপে ভরা খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা। আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র, জেলা পরিষদ পার্ক, তারেং আলুটিলা বৌদ্ধ বিহার, মায়াবিনী লেক পর্যটকদের বরর্ণ করতে নানান ভাবে সাজানো হয়েছে। এবার ঈদের ছুটির টানা বন্ধে পাহাড়ে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক আগমনের সম্ভাবনা দেখছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
গত দুইবছর ঈদে করোনার কারণে পর্যটকশূন্য থাকায় বড় অংকের লোকসান গুনেছেন ব্যবসায়ীরা। এবার ঈদের ছুটিতে পাহাড়ে পর্যটক সমাগম বাড়লে করোনাকালীন ক্ষতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।
খাগড়াছড়ি আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও হোটেল গাইরিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস অন্তত বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, খাগড়াছড়িতে গত দুই বছর করোনার কারণে তেমন পর্যটক আগমন হয়নি। তবে এবার অবস্থার বদল হয়েছে। এবার পর্যটক সমাগম বাড়বে। এরই মধ্যে জেলার ৩০টি আবাসিক হোটেলে ঈদের বুকিং হয়ে গেছে।
খাগড়াছড়ির রহস্যময় আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্র সুড়ঙ্গ, তৈরাংতৈকালাই (রিছাং ঝরনা), পার্বত্য জেলা পরিষদের হটিকালচার পার্ক, মায়াবিনী লেক, তারেংসহ সকল পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের ভিড় জমবে বলে আশা করেন হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা।
আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের তত্ত্ববধায়ক চন্দ্র কিরণ ত্রিপুরা বলেন, পর্যচকদের কাছে আলুটিলা প্রধান পর্যটন কেন্দ্র। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আলুটিলায় ঝুলন্ত ব্রীজ, লাভ পয়েন্ট, নন্দন পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। ঈদ মৌসুমে প্রতিদিন ২ হাজার পর্যটক আলুটিলা ভ্রমণ করবেন বলে আশা করছেন তিনি।
খাগড়াছড়ি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি কল্যাণমিত্র বড়ুয়া বলেন, ঈদকে সামনে রেখে আমাদের হোটেল সাজানো হয়েছে। এর মধ্যে অতিথি বরণে আমরা সবধরনের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ। হোটেলের কক্ষগুলোতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে। পর্যটকরা আমাদের বললে আমরা বেড়াতে পিকাআপ ও চাঁদের গাড়ি ঠিক করে দিব।
খাগড়াছড়ি শহরের পানখাইয়াপাড়া এলাকার মারমাদের জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট সিস্টেম। সিস্টেম রেস্টুরেন্ট আচিং মারমা জানান, ঈদের বন্ধে প্রতিদিন ১ হাজারের বেশি পর্যটক আমাদের হোটেল খাবার খেতে আসেন। পাহাড়ের ঐতিহ্য পাহাড়ি খাবার আমরা পরিবেশনা করি। এই দিকে ঈদের সময় বাড়তি চাপ সামাল দিতে আমরা রেস্টুরেন্ট সংস্কার করছি।
খাগড়াছড়ি সাজেক সড়কে পর্যটকবাহী পিকাপ চালক বসন্ত ত্রিপুরা ও দীপন ত্রিপুরা জানান, রমজান মাসে কোনো পর্যটক ছিল না। বন্ধ থাকার করণে আমরা কষ্টে সংসার করতে হয়েছে। তবে ঈদের ছুটিতে টানা বন্ধে পর্যটক সমাগম বাড়তে পারে। পর্যটক সমাগম বৃদ্ধি পেলে আমাদের গাড়ির বুকিংও বাড়বে।
খাগড়াছড়ির পার্বত্য পিকআপ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কিশলয় তালুকদার বলেন, এসময় পর্যটকবাহী পিকআপ ও জীপের চাহিদা থাকে বেশি। ঈদেও দিন থেকে টানা তিন দিন আমরা গাড়ি দিতে পারি না। বিভিন্ন উপজেলা থেকে গাড়ি এনে পর্যটদের বেড়ানোর সুযোগ করি। করোনার প্রকোপ কমার পর থেকে পর্যটন ব্যবসা চাঙা হয়েছে। এবার ঈদ মৌসুমে প্রচুর পর্যটক সমাগম হবে। ঈদের বন্ধে প্রতিদিন খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক ২শর বেশি গাড়ি যাতায়াত করবে।
খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলের ব্যবস্থাপক এ কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, গত দুবছর করোনাকালে খাগড়াছড়ির পর্যটন খাতে অন্তত ২শ কোটির টাকা ক্ষতি হয়েছে। এ বছর ভালো আছে। সারাদেশ থেকে পর্যটকেরা ২, ৩ ও ৪ মে পর্যন্ত আমাদের মোটেল পুরো বুকিং আছে। এবার ঈদ মৌসুমে পর্যটক সমাগম ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। ঈদকে সামনে রেখে হোটেল ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি সম্পূর্ণ। পর্যটকদের সেবা দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত।
Leave a Reply