চট্টগ্রামে সোমবার চার ব্যাটসম্যানের ফিফটিতে বাংলাদেশ ৫০ ওভারে তোলে ২৯৭ রানের পুঁজি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪৪.২ ওভারে গুটিয়ে যায় ১৭৭ রানে।
জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর। যে কোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে এই মাঠে সবচেয়ে বড় জয়ও এটি।
শীর্ষ ক্রিকেটারদের ছাড়া খেলতে আসা ওয়েস্ট ইন্ডিজ লড়াই জমাতে পারেনি শেষ ম্যাচেও। তিন ম্যাচের সিরিজে তাদের কোনো ব্যাটসম্যানের নেই ফিফটি, কারও নেই ৪ উইকেট।
আগের দুই ম্যাচে দেড়শর নিচে রান তাড়া করে জয়ী বাংলাদেশ শেষ ম্যাচে সুযোগ পায় আগে ব্যাটিংয়ের। দলের তিন ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে আসে ৬৪ রানের ইনিংস; তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ। সাকিব করেন ৫১। তবে চার জনের ফিফটিকে প্রাপ্তির দিক থেকে আলাদা করা যায় দুই ভাগে।
ম্যাচের আগে অধিনায়ক তামিম বলেছিলেন, বড় ইনিংসের তাড়নার কথা। স্বয়ং তামিম, সাকিব আর নাজমুল হোসেন শান্ত পারেননি সেই চাওয়া পূরণ করতে। তবে পরিস্থিতির বিবেচনায় মুশফিক আর মাহমুদউল্লাহর ইনিংস দুটি দুর্দান্ত।
মুশফিকের ইনিংস বদলে দেয় ম্যাচের গতিচিত্র। ম্যাচ সেরার পুরস্কারও তাই উঠেছে তার হাতে। মাহমুদউল্লার ঝড়ো ইনিংস দলকে নিয়ে যায় তিনশর কাছে।
জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ বড় ধাক্কা খায় প্রথম ওভারেই। লিটন দাসকে শূন্য রানে এলবিডব্লিউ করে দেন আলজারি জোসেফ। তিন ম্যাচে ৩৬ রান, স্টাইলিশ এই ব্যাটসম্যানের জন্য সিরিজটি গেল হতাশার।
শান্তকে তিনে নামানোর পরীক্ষা ফল দেয়নি সিরিজের শেষ ম্যাচেও। তার শুরুটা যদিও ছিল দারুণ। প্রথম তিনটি স্কোরিং শট ছিল চমৎকার তিনটি বাউন্ডারি। কিন্তু ডানা মেলে ভেসে বেড়াতে পারেনি বেশিক্ষণ। ১২ রানে জীবন পেয়েও পারেননি কাজে লাগাতে। কাইল মেয়ার্সের সোজা বল লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন তিনি ৩০ বলে ২০ করে।
৩৮ রানে ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশ আরও বিপদে পড়তে পারত, যদি প্রথম বলেই সাকিবের ফিরতি ক্যাচ নিতে পারতেন মেয়ার্স। জীবন পেয়ে সাকিব আর ঝুঁকি নেননি। তামিমের সঙ্গে তার জুটি এগিয়ে নেয় দলকে।
তৃতীয় উইকেটে ৯৩ রানের জুটি গড়েন তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। ছবি: সুমন বাবু
ইনিংসের দশম ওভারে এই দুজনের ব্যাট থেকে দুটি বাউন্ডারির পর আর টানা ১৫ ওভার বাংলাদেশ পায়নি চার-ছয়। এক-দুই করে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন দুজন।
তামিম ক্যারিয়ারের ৪৯তম ফিফটি স্পর্শ করেন ৭০ বলে। এরপরই দুর্দান্ত এক ইনসাইড আউট শটে ছক্কা মারেন জেসন মোহাম্মেদকে।
অনায়াসে খেলতে খেলতেই বাংলাদেশ অধিনায়ক পা দেন জোসেফের ফাঁদে। নতুন স্পেলে এসে শর্ট মিড উইকেট রেখে তামিমের শরীর তাক করে বল করছিলেন জোসেফ। পুলে একটি বাউন্ডারিও আদায় করে নেন বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান। কিন্তু ওই ওভারেই আবার একই চেষ্টায় ধরা পড়েন সেই শর্ট মিড উইকেটের হাতেই।
৩ চার ও ১ ছক্কায় তামিমের রান ৮০ বলে ৬৪। সাকিবের সঙ্গে জুটি থামে ৯৩ রানে।
সাকিব খুব ছন্দ না পেলেও উইকেট আঁকড়ে রাখেন। নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরার পর প্রথম ফিফটির দেখাও পেয়ে যান। ৭৮ বলে স্পর্শ করেন ওয়ানডেতে তার ৪৮তম ফিফটি।
দলের ইনিংস নতুন গতি পায় মুশফিক উইকেটে যাওয়ার পর। ক্রিজে যাওয়ার পরপরই আকিল হোসেনকে মারেন জোড়া বাউন্ডারি, প্রথমটি সুইচ হিটে, পরেরটি প্রথাগত সুইপে। অনায়াসেই ছুটতে থাকেন তিনি বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে।
সাকিবের ৮১ বলে ৫১ রানের ইনিংস শেষ হয় রেমন রিফারের স্লোয়ারে বোল্ড হয়ে। এটিই শাপেবর হয়ে আসে মাহমুদউল্লাহর জন্য। সিরিজের প্রথম ম্যাচে শেষ দিকে একটু ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি, পরের ম্যাচে নামতেই পারেননি। এবার একটু ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে কাজে লাগান তিনি দারুণভাবে।
মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর জুটিই মূলত দলকে নিয়ে যায় তিনশর কাছে। ৬১ বলে ৭২ রান যোগ করেন দুজন।
৬১ বলে ৭২ রানের জুটি গড়েন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ। দুজনেই করেন ৬৪ রান করে। ছবি: বিসিবি
মুশফিক পঞ্চাশে পা রাখেন ৪৭ বলে। তার ৫৫ বলে ৬৪ রানের ইনিংস থামে ৪৭তম ওভারে। রিফারকে চোখধাঁধানো এক ছক্কা মারার পরের বলেই ক্যাচ দেন কাভারে।
৭ নম্বরের চ্যালেঞ্জে প্রথম সুযোগে ৮ বলে ৭ করে সৌম্য হন রান আউট। তবে মাহমুদউল্লাহ শেষটা করে আসেন দারুণভাবে। ৩টি করে চার ও ছক্কায় অপরাজিত থেকে যান ৪৩ বলে ৬৪ রান করে।
মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর সৌজন্যেই শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশ তুলতে পারে ১০০ রান।
আগের দুই ম্যাচের বাস্তবতায় এই রান তাড়া করা ছিল ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। ২২ গজেও হয়েছে সেটিই।
নতুন বলে আবারও মুস্তাফিজুর রহমান চেপে ধরেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ডানহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য বল ভেতরে ঢোকানো ডেলিভারিতে উন্নতির ছাপ এই ম্যাচেও মেলে ধরেন বাঁহাতি পেসার। দুই ওপেনার কেয়র্ন ওটলি ও সুনিল আমব্রিসকে ফিরিয়ে দেন নিজের প্রথম স্পেলেই।
পরের ব্যাটসম্যানরাও করতে পারেননি বলার মতো কিছু। কোনো জুটি স্পর্শ করতে পারেনি ৪০ রানও। দুটি করে চার ছক্কায় রভম্যান পাওয়েলের ৪৭ রান তাদের সর্বোচ্চ।
আগের দুই ম্যাচের ধারাবাহিকতায় মেহেদী হাসান মিরাজ এ দিনও ছিলেন দুর্দান্ত। ১০ ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে তার শিকার ২ উইকেট, ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তার সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলিং।
হাসান মাহমুদ ও রুবেল হোসেনকে বিশ্রাম দিয়ে এই ম্যাচে মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন ও তাসকিন আহমেদকে মাঠে নামায় বাংলাদেশ। খারাপ করেননি দুজনের কেউ। চোট কাটিয়ে ফেরা সাইফের বোলিংয়ে প্রথম স্পেলে ছিল অস্বস্তির ছাপ। পরে একটু খরুচে হলেও তুলে নেন তিনি ৩ উইকেট। তাসকিন প্রথম স্পেলে ছিলেন বেশ গতিময়। ম্যাচের শেষ উইকেটটি নিয়ে কিছুটা প্রাপ্তিযোগ হয় তারও।
প্রত্যাশিত জয়ের স্বস্তির সঙ্গে একটা অস্বস্তি অবশ্য সঙ্গী বাংলাদেশ দলের। ৪.৫ ওভার বোলিং করে কুঁচকিতে টান লাগায় মাঠ ছাড়েন সাকিব। আপাতত অপেক্ষা তার অবস্থা জানার। সামনেই যে টেস্ট সিরিজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৯৭/৬ (তামিম ৬৪, লিটন ০, শান্ত ২০, সাকিব ৫১, মুশফিক ৬৪, মাহমুদউল্লাহ ৬৪*, সৌম্য ৭, সাইফ ৫*; জোসেফ ১০-০-৪৮-২, হার্ডিং ১০-০-৮৮-০, মেয়ার্স ৭-০-৩৪-১, রিফার ১০-০-৬১-২, আকিল ১০-০-৪৬-০, জেসন ৩-০-১৬-০)। ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৪৪.২ ওভারে ১৭৭ (ওটলি ১, আমব্রিস ১৩, বনার ৩১, মেয়ার্স ১১, জেসন ১৭, পাওয়েল ৪৭, হ্যামিল্টন ৫, রিফার ২৭, জোসেফ ১১, আকিল ০, হার্ডিং ১*; সাইফ ৯-০-৫১-৩, মুস্তাফিজ ৬-০-২৪-২, তাসকিন ৮.২-০-৩২-১, মিরাজ ১০-২-১৮-২, সাকিব ৪.৫-০-১২-০, মাহমুদউল্লাহ ২-০-১১-০, সৌম্য ৩.১-০-১১-১, শান্ত ১-০-৪-০)। ফল: বাংলাদেশ ১২০ রানে জয়ী সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ৩-০তে জয়ী ম্যান অব দা ম্যাচ: মুশফিকুর রহিম। ম্যান অব দা সিরিজ: সাকিব আল |
Leave a Reply