আজ ২৮শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কালীগঞ্জে নারীদের হাতে তৈরি পাটের জুতা যাচ্ছে বিভিন্ন দেশে

শাহ আলম, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ):ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে নারীদের হাতে পাটের তৈরি পরিবেশ সম্মত বিভিন্ন ধরনের জুতা বিশে^র বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হচ্ছে। পাটের জুতার ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে। এই জুতা তৈরি করছে এ্যামাস ফুটওয়ার লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। আর এই প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হয়েছে এলাকার প্রায় ৫’শ জন নারীর। আর মধ্যে ৪শ নারীর অধিকাংশই গৃহিনী। বাড়ির কাজের পাশপাশি তারা হাতে তৈরি করছেন পাটের জুতা। অনেক নারী এখান থেকে আয় করে সংসার চালাচ্ছে। এখানকার উৎপাদিত জুতা ফ্রান্স, প্যারিস, জার্মানসহ বিভিন্ন দেশে ফ্যাশন শোতে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এ্যামাস ফুটওয়ার লিমিডেট এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: ওবাইদুল হক রাসেল জানান, পড়াশোনা শেষ করে তিনি নিজে কিছু করতে চেয়েছিলেন। ঢাকায় প্রথম গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করেন। এরপর ২০১৬ সালের দিকে তিনি এলাকার মানুষের জন্য কিছু করার আগ্রহ নিয়ে এবং দেশের পাট শিল্পকে বিশ্বের তুলে ধরার জন্য আগ্রহ দেখান। এরপর তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের রঘুনাথপুর বাজারের পাশে ৪৪ শতক জমি কিনে পাটের জুতা তৈরির কারখানা তৈরি করেন। দেশ এবং বিদেশ থেকে কিছু মেশিন সংগ্রহ করে কাজ শুরু করেন। এর পর বিভিন্ন পাটের কারখানা থেকে উৎপাদিত পাটের কাচা মাল ক্রয় করে এনে এখানে পাটের জুতা তৈরি শুরু করেন। তার উৎপাদিত পাটের জুতা ফ্রান্স, জার্মানী, ইতালি,স্পেন, চীন, জাপানসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। ২০১৭ সাল থেকে এখানকার উৎপাদিত পাটের জুতা দেশের বাইরে রফতানি হচ্ছে।
তিনি জানান, তার কারখানায় ৮০ জন নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। এছাড়াও এলাকার প্রায় ৪শ নারী এখান থেকে কাজ নিয়ে গিয়ে বাড়িতে কাজ করে। তাদের ফ্রি প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজ দ্ওেয়া হয়। প্রতি জোড়া জুতায় জন্য তারা বিল পেয়ে থাকেন। একজন নারী বাড়ির অন্য কাজের পাশাপাশি হাতে এই জুতা তৈরি করে থাকেন। তারা ৪ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করেন। ওবাইদুল হক রাসে আরো জানান, তার ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত জুতা বিভিন্ন দেশে তিনি ২ থেকে ১৫ ডলার পর্যন্ত বিক্রি করেন। ২ ডলারের জুতা বিদেশে ১৫ থেকে ২০ ডলারে বিক্রি হয়। ইতিমধ্যে তার উৎপাদিত পাটের জুতা দিয়ে প্যারিসে ফ্যাশন শো হয়েছে।
তিনি বলেন, নিজেই এই জুতার মার্কেটিং করেন। নিজেই বায়ারদের সাথে কথা বলেন এবং রফতানি করেন। পাটের জুতার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
এ্যামাস ফুটওয়ার লিমিটেডের ম্যানেজার মাসুদ রানা জানান, এই কারখানায় ৬টি ধাপে একটি জুতা তৈরি করা হয়। সোল্ড তৈরি হয় রাবার দিয়ে, জুতা তৈরি হয় পাট দিয়ে। আর এই কাজগুলো সম্পুর্ণ হাতের মাধ্যমে করা হয়। প্রতিমাসে তাদের কারখানা থেকে ৩০ থেকে ৪০ হাজার জুতা রফতানি করা হচ্ছে।
তিনি জানান, এই জুতার বৈশিষ্ট্য হলো ব্যবহারের পরে ফেলে রাখলে এটি মাটির সাথে মিশে যায়। সোল্ড তৈরি হয় দেশের প্রকৃতিক রাবার থেকে আর, উপরের অংশ তৈরি হয় পাট থেকে। এটি সম্পুর্ন পরিবেশ সম্মত। পাটের উৎপাদিত জুতা দেশে কয়েকটি কারখানা থাকল্ওে খুলনা বিভাগে এটি প্রথম। এখানে কর্মরত নারীরা প্রথমে ফ্রি প্রশিক্ষণ গ্রহন কর্রে। এরপর কারখানা থেকে তারা সোল্ড এবং পাট নিয়ে যায়। এরপর কাজের পাশাপাশি হাতে জুতা সেলাই করেন। একজন নারী প্রতিদিন ১৫ থেকে ২৫ জোড়া জুতা তৈরি করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :