June 24, 2024, 1:42 am

মোংলায় গেলো বেনাপোলের ট্রেন

দীর্ঘ ৭৩ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটলো ১ জুন শনিবার। দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর যশোরের বেনাপোল থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেন যাত্রী নিয়ে পৌঁছালো দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলায়। এদিন সকাল ১০টায় বেনাপোল থেকে ছেড়ে ৪ ঘণ্টার জার্নি শেষে দুপুর ২টার দিকে ৬০০ যাত্রী নিয়ে মোংলা এক্সপ্রেস নামের কমিউটার ট্রেনটি এসে দাঁড়ায় মোংলা প্লাটফর্মে। পথিমধ্যে ট্রেনটি নাভারণ, ঝিকরগাছা, যশোর জংশন, রূপদিয়া, সিঙ্গিয়া, চেঙ্গুটিয়া, নওয়াপাড়া, বেজেরডাঙ্গা, ফুলতলা, আড়ংঘাটা, মোহাম্মদনগর, কাটাখালি, চুলকাটি বাজার, ভাগা দিগরাজ স্টেশনে যাত্রী ওঠানামা করে। সর্বত্রই ছিল মানুষের উৎফুল্ল উপস্থিতি। মোংলায় যাত্রাবিরতি শেষে দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে ট্রেনটি ফের যাত্রী নিয়ে বেনাপোলের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
মোংলায় স্টেশনে ট্রেনটিকে স্বাগত জানান স্থানীয় সংসদ সদস্য বেগম হাবিবুন নাহার। এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্নাসহ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কমিউটার ট্রেনটি মোংলায় এসে পৌঁছালে উৎসবের আমেজে ভাসতে থাকে এই এলাকার মানুষ। অনেকে দিনটি স্মরণ করে রাখতে টিকিট কেটে ট্রেনে চেপে খুলনাসহ বিভিন্ন স্থানের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
এদিকে, এই রেলপথ চালু হওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণসহ দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে জানিয়ে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার ৭৩ বছর পর দেশের রেল নেটওয়ার্কে মোংলা বন্দর যুক্ত হয়েছে। এতে করে খুলনা-মোংলা রেলপথ ঘিরে অর্থনীতিতে নতুন সম্ভবনার দূয়ার খুলবে। ঢাকার সঙ্গে মোংলা বন্দরের যোগাযোগ সহজ হবে। একইসঙ্গে এই বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা স্বল্প সময়ে কম খরচে পণ্য ডেলিভারি নিতে পারবেন। এছাড়া বহুল কাঙ্খিত এই রেলপথ চালু হওয়ায় মোংলা বন্দরের সঙ্গে ভারত, ভূটান ও নেপালের সাথে ব্যবসা বাণিজ্য প্রসারিত হবে।’
মোংলা রেলস্টেশন মাস্টার এস এম মনির আহম্মেদ জানান, গত বছরের ১ নভেম্বর এই রেলপথ বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি উদ্ধোধন করেন। এর ৭ মাস পর শনিবার খুলনা-মোংলা রেলপথে আনুষ্ঠানিক ট্রেন চলাচল শুরু হলো। এই পথে মঙ্গলবার বন্ধ রেখে সপ্তাহে ছয়দিন চলবে মোংলা এক্সপ্রেস নামে একটি কমিউটার ট্রেন।
তিনি জানান, মোংলা-চুলকাঠি ২০ টাকা, মোংলা-কাটাখালি ২০ টাকা, মোংলা-মোহাম্মদনগর ৩৫ টাকা, মোংলা-ফুলতলা ৪৫ টাকা, মোংলা-নওয়াপাড়া ৫৫ টাকা, মোংলা-সিঙ্গিয়া ৬০ টাকা, মোংলা-যশোর ৬৫ টাকা, মোংলা-ঝিকরগাছা ৭৫ টাকা, মোংলা-নাভারণ ৮০ টাকা এবং মোংলা-বেনাপোল ৮৫ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।
খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণের প্রকল্প পরিচালক আরিফুজ্জামান বলেন, মোংলা বন্দরকে দেশের রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত করতে ২০১৬ সালে শুরু হয় খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণের কাজ। ২০১৯ সালে নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ৫ দফা সময় বাড়িয়ে নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০২৩ সালের অক্টোবরে। খুলনার ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথে রয়েছে রূপসা নদীর ওপর ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটারের একটি রেলসেতু, ১০৭টি ছোট বড় কালভার্ট, ৮টি প্লাটফর্ম ও ৯টি আন্ডারপাস।
এই রেলপথ চালু হওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। কম খরচে সহজে যাতায়াত এবং আরামদায়ক ভ্রমণও করতে পারবেন। চিকিৎসাসহ ব্যবসা বাণিজ্যের কাজেও ভারতে যেতে এই রুট সহজ হবে বলে জানান তিনি।
বেনাপোল থেকে মুসলিম উদ্দীন পাপ্পা জানান, গত ১ নভেম্বর খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত নতুন রেললাইনের উদ্বোধন করা হয়েছিল। উদ্বোধনের প্রায় সাত মাস পর এ রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হলো। এই রেলপথের দূরত্ব ১৩৮ দশমিক ৬৪ কিলোমিটার। খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক আরিফুজ্জামান বলেন, খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত রেললাইন ট্রেন চলাচলের জন্য পুরোপুরি উপযোগী রয়েছে। আট স্টেশনে আসবাবপত্রসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য সরঞ্জাম পৌঁছে গেছে।
বেনাপোল রেলওয়ে ম্যানেজার সাইদুজ্জামান বলেন, বেনাপোল থেকে খুলনা-মোংলা রুটে আপাতত পুরনো রেল কোচ চলাচল করবে। ভারত থেকে নতুন কোচ আসলে তা যুক্ত করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :