April 23, 2024, 1:47 pm

ইচ্ছে করলেই উন্নয়ন করা যায় প্রমাণ করেছে আওয়ামী লীগ

অনলাইন ডেস্ক।
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদনেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ এখন আর পিছিয়ে নেই। চাইলেই দেশের উন্নয়ন করা যায়-এটা প্রমাণ করেছে আওয়ামী লীগ। করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদন করে অন্যদেশকে দেওয়ার সক্ষমতাও বাংলাদেশের আছে। তিনি বলেন, আমরা ভ্যাকসিন তৈরি করতে চাই। ভ্যাকসিন তৈরির যে বাধাগুলো আছে, সেগুলো সরিয়ে দিতে হবে, উন্মুক্ত করতে হবে। এটা জনগণের প্রাপ্য, তাদের সম্পদ হিসাবেই দিতে হবে। বিশ্বে কেউ যেন টিকা থেকে দূরে না থাকে, তা দেখতে হবে। আমাদের সুযোগ দিলে আমরা উৎপাদন করব। আমরা বিশ্ববাসীকেও দিতে পারব।

সোমবার জাতীয় সংসদে সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে পুরস্কার চালু করায় ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানাতে সংসদে প্রস্তাব তোলা হয়। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাবেক প্রধান হুইপ আব্দুস শহীদ সাধারণ আলোচনার জন্য প্রস্তাবটি তোলেন। ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর ক্রিয়েটিভ ইকোনমি শীর্ষক পুরস্কার প্রবর্তন করে। প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, টিকা উৎপাদনের ল্যাব তৈরির জন্য জমিও নিয়ে রেখেছি। এভাবে উদ্যোগ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আজ করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আমাদের যে সাফল্য, তা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে-আমি এটাও বলে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর নামে পুরস্কার প্রবর্তন করায় ইউনেস্কোকে দেশের জনগণের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি। এই সময় জাতিসংঘের ইউনেস্কো কর্তৃক জাতির পিতার নামে আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে জাতি হিসাবে আমাদের গৌরবের এবং জনগণের জন্য অত্যন্ত সম্মানের। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছি। সারা বিশ্বে বাংলাদেশ এখন মর্যাদা ও সম্মানের স্থানে উঠে এসেছে।

বঙ্গবন্ধু হত্যা-পরবর্তী কু-পালটা কু, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের ঘটনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের পর আমরা কী দেখেছি? ১৯টা কু হয়েছে। হাজার হাজার সেনাবাহিনীর অফিসার ও সৈনিক, বিমানবাহিনীর অফিসার ও সৈনিক এবং সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। কারাগারে ফেলে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। গুলি-অস্ত্র, দুর্নীতি-এটাই ছিল জননীতি। এর বাইরে একটা দেশকে যে উন্নত করা যায়, সেদিকে কোনো আন্তরিকতাই আমরা দেখিনি। কিন্তু ইচ্ছা থাকলে একটি দেশের যে উন্নয়ন করা যায়, আওয়ামী লীগ তা প্রমাণ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দেশে আসার পর কী দেখেছি? বিজ্ঞান পড়েই না মানুষ। এই অবস্থা! বিজ্ঞানের প্রতি কোনো আগ্রহ নেই। গবেষণা তো ছিলই না। কোনো বিশেষ বরাদ্দও ছিল না। আমরা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে ব্যাপক কাজ শুরু করি। সারা দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলি যাতে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান শিক্ষায় আগ্রহী হয়।

১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কম্পিউটারের ওপর সব ধরনের ট্যাক্স উঠিয়ে দিই, যাতে সবাই এটা শিখতে পারে। এখন সবার হাতে হাতে মোবাইল, প্রযুক্তি। এখন আমরা পিছিয়ে নেই। দেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, তাঁরা বারবার আমাকে ভোট দিয়েছে। সেবা করার সুযোগ দিয়েছে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। এক দশকের ভেতরে বাংলাদেশের পরিবর্তন-সারা বিশ্বে একটা মর্যাদা পেয়েছে।

সংসদনেতা বলেন, ভালো কাজ অনেকের চোখে পড়ে না। ভালো কাজটা চোখে না দেখলে আমাদের কিছু বলার নেই। আমাদের যে সিআরআই আমরা তৈরি করেছি। সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই), এটা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটা গবেষণা প্রতিষ্ঠান। যে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটা ২০০১ সালে অপারেশন ক্লিন হার্টের নামে খালেদা জিয়ার সরকার বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা পুনরায় চালু করি।

তিনি বলেন, এই গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে ইয়াংবাংলা নামে একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়। যুবসমাজকে উৎসাহিত করা, তাদেরকে স্টার্টআপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। তাদের এটাও বলা হয়-শুধু চাকরির পেছনে ঘুরবে কেন, চাকরি দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে। নিজের পায়ে দাঁড়াবে। নিজের ব্যবসা করবে, নিজেরা অন্যকে চাকরি দেবে। এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে আমাদের সরকারের আমলে।

এ সময় স্পিকারকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, আপনি (স্পিকার) জানেন যে, আমার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং শেখ রেহানার (বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে) ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকসহ আমাদের কিছু তরুণ সংসদ সদস্য সবাই মিলেই কিন্তু ইয়াংবাংলা স্টার্টআপ প্রোগ্রাম নিয়েছে। এই প্রোগ্রামের জন্য বিশেষ বরাদ্দও রেখেছি। ছেলেমেয়েরা যদি কেউ উদ্যোগ নিতে চায়, আমরা তাদের পাশে দাঁড়াব। অনলাইনে কেনাবেচা, ই-কমার্স, ই-টেন্ডার চালু হয়েছে। আগামী দিনে আরও হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর মেমোরি অব ওয়ার্ল্ডের প্রামাণ্যদলিলে অন্তর্ভুক্ত করায় জাতিসংঘের অবদানকে স্মরণ করেন। জাতির পিতার নামে এই পুরস্কার প্রবর্তনে জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন ইউনেস্কো এবং তাদের সহযোগী বিভিন্ন সংগঠন, দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধিকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

বঙ্গবন্ধুর নামে আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন, ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানিয়ে সংসদে সর্বসম্মত প্রস্তাব গ্রহণ : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে আন্তর্জাতিক পুরস্কার চালু করায় জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থাকে (ইউনেস্কো) ধন্যবাদ জানিয়েছেন জাতীয় সংসদ। এ বিষয়ে সোমবার জাতীয় সংসদে সর্বসম্মত ধন্যবাদ প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে কার্যপ্রণালি বিধির ১৪৭ ধারায় সাধারণ আলোচনার জন্য প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন আব্দুস শহীদ। তিনি বলেন, সংসদের অভিমত এই যে, জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ইন দ্য ফিল্ড অব ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’ প্রবর্তন করায় জাতীয় সংসদে বিশেষ আলোচনার মাধ্যমে ইউনেস্কোকে বাংলাদেশের সব জনগণের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানানো হোক।

প্রস্তাবের ওপর সংসদনেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আমির হোসেন আমু, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, নুরুল ইসলাম নাহিদ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও ওয়াসিকা আয়শা খান, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা, জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু, ডা. রুস্তম আলী ফরাজী ও পীর ফজলুর রহমান এবং বিএনপির মো. হারুনুর রশীদ।

আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর নামে পুরস্কার প্রবর্তন করায় ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানান। তিনি পুরস্কারপ্রাপ্ত উগান্ডার মোটিভ ক্রিয়েশনের মতো বাংলাদেশের যুবসমাজও এগিয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘উগান্ডা আজ এই পুরস্কার পেয়েছে। একদিন ইনশাল্লাহ বাংলাদেশেরও কোনো না কোনো উদ্যোক্তা এই পুরস্কার পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর সাধারণ আলোচনার সমাপ্তি ঘোষণা করে স্পিকার প্রস্তাবটি ভোটে দেন। উপস্থিত সংসদ সদস্য সমস্বরে প্রস্তাবের পক্ষে হ্যাঁ ভোট দেন। ফলে সর্বসম্মতিতে প্রস্তাবটি পাশ হয়। এরপর স্পিকার মঙ্গলবার বেলা ১১টা পর্যন্ত অধিবেশন মুলতুবি ঘোষণা করেন।

উল্লেখ্য, গত বছর ইউনেস্কো নির্বাহী পরিষদের শরৎকালীন ২১০তম অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্তে বঙ্গবন্ধুর নামে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এই প্রথম জাতিসংঘের কোনো অঙ্গ সংস্থা বঙ্গবন্ধুর নামে আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন করল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :