April 27, 2024, 5:45 am

তাহাদের দৌরাত্ম্য এখনই বন্ধ করিতে হইবে

অনলাইন ডেস্ক।।

ষষ্ঠ ধাপে ২১৮টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইল সোমবার। ইহার পূর্বে পাঁচ দফায় যে নির্বাচন হয়, তাহাতে নির্বাচনের পূর্বে ও পরে বেশকিছু সহিংস ঘটনা ঘটে। ইহা লইয়া দেশব্যাপী সমালোচনার ঢেউ উঠে। গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম ধাপের নির্বাচন। এই নির্বাচনও ছিল সহিংসতাপূর্ণ। ইহাতে ছয় জন নিহতসহ বেশ কয়েক জন আহত হন। ইহার পূর্বের ধাপের নির্বাচনগুলিতে আমরা অধিক মাত্রায় সহিংসতা প্রত্যক্ষ করিয়াছি। তবে তুলনামূলকভাবে ষষ্ঠ ধাপের নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হইয়াছে। কেননা এইবার প্রতিটি নির্বাচনি এলাকাকে কেন্দ্র করিয়া কঠোর নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা হয়। ভোটগ্রহণকালে প্রতিটি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২২ জন করিয়া সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদের একেবারে শেষ প্রান্তে আসিয়া নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মতো এই নির্বাচন যে বহুলাংশে শান্তিপূর্ণ হইয়াছে তাহা অস্বীকার করিবার কোনো উপায় নাই। কথায় বলে ‘শেষ ভালো যার সব ভালো তার’। এই জন্য নির্বাচন কমিশনকে সাধুবাদ জানাইতে হয়; কিন্তু এই কঠোর নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যেও কোনো কোনো স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে সহিংসতার ঘটনা ঘটিয়াছে। কোথাও কোথাও এখনো নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা অব্যাহত রহিয়াছে, যাহা উদ্বেগজনক। বিশেষত এখানে পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়ার কথা না বলিলেই নহে। সেইখানে পরাজিত নৌকা প্রার্থীর সমর্থকদের উপর হামলার অভিযোগ উঠিয়াছে। বিজয়ী বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের ভয়ে অনেকে ঘরবাড়ি ছাড়িয়া পালাইয়া বেড়াইতেছেন। কোথাও কোথাও হিন্দুদের হুমকি দিয়া তাহাদের জিম্মি করিয়া রাখা হইয়াছে। তাহারা বাড়ি হইতে বাহির হইতে পারিতেছেন না। ঘটনাগুলি ঘটিয়াছে মঠবাড়িয়ার বড় মাছুয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করিয়া।

যেইখানে নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তার মধ্যে অধিকাংশ স্থানে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইয়াছে, সেইখানে মঠবাড়িয়া তাহার ব্যতিক্রম হইবে কেন? মঠবাড়িয়ায় সহিংসতার সহিত যেই বা যাহারা জড়িত তাহাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে। সেইখানে থানা পুলিশ, আনসার-বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা রহিয়াছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি রহিয়াছেন স্থানীয় অন্যান্য জনপ্রতিনিধি। তাহারা মঠবাড়িয়ায় নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা দেখিয়া নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করিতে পারেন না। এখানে আসলে কী ঘটিতেছে? রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব সকলখানেই আছে ও থাকিবে। তবে তাহার চাইতেও বড় কথা হইল, এই উপজেলায় রহিয়াছে মাদক কারবারিদের দৌরাত্ম্য। মাদকাসক্তদের যন্ত্রণায় এখানকার নাগরিক অতিষ্ঠ; কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাদক কারবারের হোতাদের কেশাগ্র স্পর্শ করিতে পারিতেছে না কেন? তাহাদের শক্তির উত্স কোথায়? এই কথা সকলেই জানেন যে, স্থানীয় প্রশাসন হইতে শুরু করিয়া রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত তাহারা প্রভাব বিস্তার করিয়া রাখিয়াছে। আমাদের ইহাও অজানা নহে যে, পিরোজপুর জেলার ডিসি, এসপি হইতে শুরু করিয়া বিভাগীয় কমিশনার পর্যন্ত যাহারা দায়িত্ব পালন করিতেছেন, তাহারা ‘গুড অফিসার’ হিসাবে পরিচিত। তাহাদের দক্ষতা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা লইয়া কাহারও মনে কোনো সংশয় নাই। তাহারাও কেন মঠবাড়িয়ার এই তথাকথিত ‘বিদ্রোহীদে’র নিকট পরাজিত হইয়া বসিয়া রহিয়াছেন, তাহার কারণ খুঁজিয়া দেখা দরকার। তাহারা নৌকার সমর্থক ও হিন্দুদের উপর হামলা চালাইবার দুঃসাহস পায় কোথা হইতে?

আমরা যতটুকু জানি, পিরোজপুর জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সততার ব্যাপারেও সাধারণ মানুষের মনে কোনো গুঞ্জন নাই। তাহা হইলে মঠবাড়িয়ার সমস্যা এতদিন ধরিয়া বিরাজ করিতেছে কীভাবে? এইখানকার একশ্রেণির নেতাকর্মীর সীমা লঙ্ঘন আজ চরম মাত্রায় পৌঁছাইয়া গিয়াছে। ইহা আর চলিতে পারে না। তাহাদের দৌরাত্ম্য এখনই বন্ধ করা দরকার। যদি এই অবস্থা অপ্রতিরোধ্য গতিতে চলিতে থাকে, তাহা হইলে ভবিষ্যতে কী পরিণতি দাঁড়াইতে পারে তাহা অনুমান করিতে কাহারও অসুবিধা হয় না। রাজনীতিবিদরা তাহাদের কর্মকাণ্ড দেখিয়া আজ শিহরিত না হইয়া পারিতেছেন না। ইহার পূর্বে তাহারা র‌্যাবকে ব্যবহার করিয়াছে। এখনো যাহারা সরকারি দলের অফিসে হামলা চালাইতেছে, তাহাদের থামাইতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :