April 27, 2024, 8:49 am

বৈশাখকে ঘিরে ব্যস্ততায় মৃৎ শিল্পীরা

তুষার আহাম্মেদ।।

 

পহেলা বৈশাখ মানেই বাঙালীর মনে নতুন আমেজ । বাংলা নতুন বছরের বৈশাখি উৎসবের মেলা – বান্নিকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত সময় যাচ্ছে শ্রীনগর উপজেলার কুমার হাঁসাড়া মৃৎশিল্পীদের । শিশু – সব বাড়ির’র নারী – পুরুষ , মৃৎশিল্পের বয়সী কারিগররা যার যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত । বছরের অধিকাংশ সময় তাদের তেমন না থাকলেও , ফাল্গুন থেকে বৈশাখ – এই তিন মাস তাদের ব্যস্ততায় কাটে । বর্তমানে বেশ কর্মমুখর কুমার বাড়ির’র প্রতিটি বাড়ি । বয়সের গণ্ডি ছাড়িয়ে নারী – পুরুষ আর শিশু – কিশোরীরা ব্যস্ত যার যার কাজ নিয়ে হাতি , ঘোড়া , বাঘ – ভাল্লক , ফল – ফলাদির খেলনা তৈরিতে মনোযোগী সবাই । কাদা – মাটির দলা দিয়ে নির্দিষ্ট ফ্রেমে পুড়ে তৈরি করছেন যার যার শিল্পকর্ম । পরে সেখানে হাতের কারসাজি আর তুলির আঁচড়ে অবিকল রূপায়ণের এক অপূর্ব সমন্বয়ে তৈরি করা হয় কাঙ্ক্ষিত মৃৎশিল্পটি । সংশ্লিষ্টরা জানান , বাংলা নতুন বছরকে কেন্দ্র করে চৈত্র ও বৈশাখ মাসব্যাপী গ্রাম – বাংলার বিভিন্ন এলাকায় বৈশাখী মেলা বা বান্নি হয় । সেখানকার বেচা – বিক্রির একটি অন্যতম প্রধান উপকরণ হলো মাটির তৈরি তৈজসপত্র ও শিশুদের খেলনা । আর সেই মেলা – বান্নির ক্রেতার চাহিদা মেটাতে এ সময়টায় পালপাড়ায় কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায় । তবে তাদের অভিযোগ , কালের আবর্তে প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন কৃত্রিম আঁশের তৈরি সামগ্রীর কারণে দিনে দিনে তাদের তৈরি মৃৎশিল্পের চাহিদা কমে যাচ্ছে । বাজার চাহিদা ভালো না থাকায় গ্রাম – বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পকর্ম প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে । ক্রেতার চাহিদা কমে যাওয়ায় তারাও আর আগের মতো এই শিল্পের পণ্য তৈরি করেন না । শুধু চৈত্র – বৈশাখ মাসে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মেলা – বান্নিতে বিক্রির জন্য কিছু খেলনা সামগ্রী তৈরি করেন । তাদের দাবি , প্লাস্টিক সামগ্রী নিষিদ্ধ এবং আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পটিকে আবারও জাগিয়ে তোলা যাবে । অরুন পাল , মদন পাল , বিনয় পাল , লক্ষণ পাল , সুরন্ড পাল তারা বলেন , ১২ বছর আগেও মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা ছিল প্রচুর । বর্তমানে নিজেসহ এক ছেলে ঠাকুরধন পালকে নিয়ে মাটির কাজ করেন পরিমল পাল । সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি চাকা ঘুরিয়ে কাজ করলেও ভাগ্যের চাকা ঘুরেনি তাঁর । সংসারে নেই সচ্ছলতা । একই অবস্থার কথা জানালেন হীরালাল পাল , মহেন্দ্র কুমার পাল , সুরুজাবালা পালসহ এ পেশার অন্যান্য এলাকার লোকজনও । স্থানীয় লোকজন জানান , এক সময় তাদের এলাকার এই হাঁসাড়া কুমার বাড়ি’র বেশ জমজমাট ছিল । সারা বছরই ব্যস্ত থাকত এখানকার কারিগররা । কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই । তাদের প্রয়োজনীয় কোনো দ্রব্য এখন আর পাওয়া যায় না । তাদের দাবি , সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এই শিল্পটি আবারও চাঙ্গা হলে পাল সম্প্রদায়ের উন্নতির পাশাপাশি দেশের ঐতিহ্যও রক্ষা হবে । মৃৎশিল্প বিক্রেতারা জানান , আগে স্থানীয় কুমারদের তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করতেন । এখন স্থানীয়সহ ঢাকার সাভার , ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর , নরসিংদীর শিবপুর , বেলাব ও রায়পুরা এলাকা থেকে মাটির তৈরি জিনিসপত্র এনে সারা বছর বিক্রি করেন তাঁরা । গবেষক , কলামিস্ট , লেখক সাহেদুল ইসলাম সাংবাদিক দের কে বলেন পহেলা বৈশাখ আমাদের প্রানের উৎসব । আর মৃৎ শিল্প আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত । মৃৎ শিল্পীরা তাদের হাতের ছোঁয়ায় অনেক অভুতপূর্ব ও রকমারি জিনিস তৈরী করেন । মৃৎ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে সমাজের সচেতন সমাজকে অগ্রনী ভূমিকা রাখতে হবে । প্লাষ্টিক পন্যের পাশাপাশি আমাদের এই শত বছরের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে মৃৎ শিল্পকে প্রাধান্য দিতে হবে।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :