বোলারদের দুর্দান্ত নৈপুন্যের পর ওপেনার ফিন অ্যালেন ও ডেভন কনওয়ের দারুন ব্যাটিংয়ে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের ফিরতি পর্বে পাকিস্তানকে হারিয়ে প্রতিশোধ নিলো স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড।
আজ নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ড ৯ উইকেটে হারিয়েছে পাকিস্তানকে। প্রথমে পর্বে পাকিস্তানের কাছে ৬ উইকেটে হেরেছিলো নিউজিল্যান্ড।
প্রথমে ব্যাট করা পাকিস্তানকে ১৩০ রানে আটকে দেয় নিউজিল্যান্ডের বোলাররা। জবাবে উদ্বোধনী জুটিতে ১১৭ রান তুলে নিউজিল্যান্ডের জয়ের পথ সহজ করে দেন দুই ওপেনার অ্যালেন ও কনওয়ে। এই জয়ে ৩ খেলায় সমান ৪ করে পয়েন্ট নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানের। আর ২ খেলায় এখনও জয় পায়নি বাংলাদেশ।
ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভারে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্বান্ত নেন পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম। পেসার টিম সাউদির করা ইনিংসের প্রথম ওভারেই ২টি চার মারেন ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান। পরের দুই ওভারে রিজওয়ান ১টি ও বাবর ২টি চার মারেন। ফলে ৪ ওভার শেষে পাকিস্তানের রান বিনা উইকেটে ৩০।
পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলে পাকিস্তানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গেন অফ-স্পিনার মাইকেল ব্রেসওয়েল। মিড-অনে জেমস নিশামকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন রিজওয়ান। ১৭ বলে ১৬ রান করেন রিজওয়ান।
পাওয়ার-প্লে শেষে পাকিস্তানের স্কোর দঁড়ায় ১ উইকেটে ৪২। তিন নম্বরে নামা শান মাসুদকে নিয়ে অষ্টম ওভারে দলের স্কোর ৫০ পার করেন বাবর। তবে ঐ ওভারের পঞ্চম বলে মাসুদের বিদায় নিশ্চিত করেন স্পিনার মিচেল স্যান্টনার। ১২ বলে ১৪ রান করেন মাসুদ।
মাসুদের বিদায়ে উইকেটে আসেন শাদাব খান। বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। স্যান্টনারের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ৭ বলে ৮ রান করে বিদায় নেন শাদাব।
শাদাবের বিদায়ের কিছুক্ষণ পরই বড়সড় ধাক্কা খায় পাকিস্তান। রান মেশিন রিওজয়ানকে শিকার করা ব্রেসওয়েল এবার বাবরকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান। এতে পাকিস্তানের বড় সংগ্রহের আশা নিভে যায়। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ২৩ বলে ৩টি চারে ২১ রান তুলে আউট হন বাবর। আগের ম্যাচে অপরাজিত ৭৯ রান করে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাকিস্তানকে দুর্দান্ত জয়ের উপহার দিয়েছিলেন বাবর।
বাবরের পর মিডল-অর্ডারে হায়দার আলিকে শিকার করে পাকিস্তানের উপর চাপ বাড়ান নিউজিল্যান্ডের আরেক স্পিনার ইশ সোধি। ৮ রান করেন হায়দার। ফলে ১৪তম ওভারে ৭৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে পাকিস্তান।
এ অবস্থায় নিউজিল্যান্ডের বোলারদের উপর পাল্টা আক্রমন করেন উইকেটে দুই নতুন ব্যাটার আসিফ আলি ও ইফতেখার আহমেদ। ১৫তম ওভারে ১১ ও ১৬তম ওভারে ১৩ রান তুলেন তারা। এসময় আসিফ ৩টি চার ও ইফতেখার ১টি বাউন্ডারি মারেন। এতে ১৬তম ওভারেই ১শ রান পেয়ে যায় পাকিস্তান। তবে পরের দুই ওভারে ১৩ রান তুলতে পারেন আসিফ ও ইফতেখার।
১৯তম ওভারে ইফতেখারের ২টি চারে ১১ রান উঠে। শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে ইফতেখার ও মোহাম্মদ নাওয়াজকে শিকার করেন সাউদি। শেষের চার বলে মাত্র ২ রান নেন সাউদি। ফলে শেষ ওভারে ২ রানে ২ উইকেট নেন সাউদি। ফলে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৩০ রানের মামুলি সংগ্রহ পায় পাকিস্তান। ইনিংসে পাকিস্তানের কোন ব্যাটারই ছক্কা মারতে পারেননি। গত ৭৭ টি-টোয়েন্টিতে এই প্রথম নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কোন ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ছক্কা হয়নি। এছাড়াও এই নিয়ে দ্বিতীয়বার টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের ইনিংসে কোন ছক্কা নেই। প্রথমবার ২০১৪ সালে দুবাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাকিস্তানের ৯৬ রানের ইনিংসে কোন ছক্কা ছিলো না।
বল হাতে নিউজিল্যান্ডের সাউদি ৩১ রানে, স্যান্টনার ২৭ রানে ও ব্রেসওয়েল ১১ রানে ২টি করে উইকেট নেন।
১৩১ রানের টার্গেটে নিউজিল্যান্ডকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার ফিন অ্যালেন ও ডেভন কনওয়ে। পাওয়ার-প্লেতে ৫৭ রান তুলেন তারা। এসময় ৪টি চার ও ৩টি ছক্কা হয়। অ্যালেনের ব্যাটে ছিলো তিনটি ছক্কা।
পাওয়ার-প্লে শেষ হবার পরও রানের চাকা সচল রাখেন অ্যালেন ও কনওয়ে। ১০ম ওভারে ইফতেখারের তৃতীয় বলে ছক্কা মেরে টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন অ্যালেন। ৩১ বলে অর্ধশতকের স্বাদ নিতে ৫টি ছক্কা ও ১টি চার মারেন তিনি।
১১তম ওভারে নিউজিল্যান্ডের রান ১শতে পৌঁছায়। ১৪তম ওভারের তৃতীয় বলে নিউজিল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গেন শাদাব। উইকেট ছেড়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হন অ্যালেন। ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪২ বলে ৬২ রান করেন তিনি। কনওয়ের সাথে ৮১ বলে ১১৭ রানের জুটি গড়েন অ্যালেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে উদ্বোধনী জুটিতে কিউইদের এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান। আগেরটি অবিচ্ছিন্ন ১৭১ রানের। ২০১৬ সালে হ্যামিল্টনে মার্টিন গাপটিল ও কেন উইলিয়ামসন করেছিলেন।
অ্যালেনের বিদায়ের পর নিউজিল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করতে বেগ পেতে হয়নি কনওয়ে ও অধিনায়ক উইলিয়ামসনের। দ্বিতীয় উইকেটে ১৬ বলে অবিচ্ছিন্ন ১৪ রানের জুটি গড়ে ২৩ বল বাকী রেখেই দলকে জয়ের স্বাদ দেন তারা। কনওয়ে ৪৬ বলে ৪৯ ও উইলিয়ামসন ৯ রানে অপরাজিত থাকেন। কনওয়ের ইনিংসে ৫টি চার ছিলো। পাকিস্তানের শাদাব ২৬ রানে ১ উইকেট নেন।
আগামীকাল ফিরতি পর্বে আবারও বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে নিউজিল্যান্ড।
Leave a Reply