April 24, 2024, 7:45 pm

বর্জ্য ব্যবস্থাপণা নিয়ে ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরীর ক্ষোভ

সুচিত্রা রায়,স্টাফ রিপোর্টার:

নদী ও পরিবেশ নিয়ে নানা অভিযোগের ভিত্তিতে সাভার চামড়া শিল্পনগরী পরিদর্শনে এসে বর্জ্য ব্যবস্থাপণা নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করলেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী ।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে সাভার ট্যানারী শিল্প এলাকার পাশ দিয়ে বয়ে চলা ধলেশ্বরী নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। এসময় এই শিল্প এলাকার ল্যব পরিদর্শন করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং আধুনিক একটি ল্যাব গঠনের তাগিদ দেন তিনি।

সোমবার সকালে সাভার চামড়া শিল্পনগরী, ধলেশ্বরী নদীসহ সংযুক্ত খাল-বিল, জলাশয় ও জলাধারের দূষণের বাস্তব অবস্থা সরেজমিন পরিদর্শন করে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, অনেক অভিযোগ আছে এই সাভার চামড়া শিল্পের স্টেকটা নিয়ে প্রায় সময় পত্র-পত্রিকায় আসে নানা মহল থেকে কথা আসে যে এইখানে ধলেশ্বরী নদী তারা দূষণ করছে। এই দূষণের ফলে বংশী নদী এবং বুড়িগঙ্গার সাথেও এখানে এটার সংযোগ আছে। যার ফলে একটা পরিবেশ বিপর্যয়ের কথা বলা হয়। আমরা এটা সরজমিনে দেখতে এসেছি। আমরা যেটা দেখতে পেলাম আমরা খুব একটা আস্বস্ত হতে পারলাম না, তার প্রধান যে কারণ হচ্ছে এইখানে যেসব তথ্য বলা হয়েছে সেই তথ্যর সত্যতা সম্মন্ধে আমার এখন সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ সাধরণত বলা হবে যে ল্যাবরটরি ডাটা, এতে ল্যাবই নাই ধরতে গেলে। বিষয়টাকে আমি সরকারি উচ্চ মহলে বলবো। যাতে এইখানে আধুনিক ল্যাব স্থাপন করা হয়। আরেকটা বিষয় হচ্ছে যে এইখানে যে পরিমাণ চামড়া প্রসেস করা যায়, অভিযোগ আছে তার চেয়ে অনেক বেশি চামড়া আসে এবং ওনারা আমাদেরকে আস্বাস্ত করতে পারেন নাই যে এইখানে অপরিশোধিত পানি, বর্জ্য যে রিলিজ করা হয় না। এই বিষয়ে আমি কিন্তু এখনো আস্বস্ত না। এটার জন্য আরো বেশি তদন্ত করার দরকার আছে, আমরা যেটা করবো প্রিমিনারি একটা আমাদের সরজমিনে আমরা পরিদর্শন করে গেলাম। আমরা আগামী ১০ দিনের মধ্যে যত স্টেক হোল্ডার আছে যারা চামড়া, চামড়া শিল্পের সাথে জড়িত, পরিবেশ সাথে জড়িত তাদেরকে নিয়ে আমরা একটা মিটিং করবো, মিটিং করে আমরা রিকমেন্ডেশন দিবো কারণ আপাতত যেটা আমরা বলে যাচ্ছি ওনাদের উদ্দেশ্যেই বলতেছি যে রেশনিং প্রথা চালু করতে হবে এবং রেশনিং প্রথা করতে যাতে কোনো ভাবেই যেনো পঁচিশ হাজার কিউমিক মিটারের বেশি বর্জ্য না হয় তার জন্য রেশনিং করা যায়। আরেকটা বিষয়, যদি এই ম্যানেজমেন্ট না পারে আমরা রিকমান্ড করবো নতুন ম্যানেজমেন্ট আনা হোক যাতে এই শিল্পটাকে আরো বেশি আধুনিক করা যায়। এখানে যে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য হলে কিন্তু চামড়া শিল্প কয়েকধাপ এগিয়ে যাবে কিন্তু সে বিষয়ে এদের কোনো উদ্যোগ দেখলাম না। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমরা সরকারের কাছে রিকমেন্ডেশন দিবো এরপর আমরা এখন যাচ্ছি লেদারস ইন্ডাস্ট্রি ছাড়াও কিন্তু এই সাভারে অনেক ইন্ডাস্ট্রি আছে যারা কিন্তু দূষণ করে। সাভারের মাটি দূষিত হয়ে গেছে, সাভারের পানি দূষিত হয়ে গেছে, সাভারের বাতাস দূষিত, সাভারে আন্ডার গ্রাউন্ড ওয়াটারের কথা বলা হচ্ছে যে সেইখানেও নাকি ইনজেক্ট করা হয় বর্জ্য। সুতরাং আমি মনে করি কি সাভার একটা অভিশপ্ত জনপদে পরিনত হতে যাচ্ছে, এটা হতে দেয়া যাবে না। বাংলাদেশে সব নদনদী স্বচ্ছ-সলিলা থাকবে দূষণ মুক্ত থাকবে। আমরা একটা ঘোষণা দিয়েছি আমরা কাজ করে যাচ্ছি আগামী বছর ২০২৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের আগে আমরা ঢাকার চারপাশে সকল নদ-নদী আমরা দূষণ মুক্ত করবো। সেই উদ্দেশ্যে আমরা কিন্তু প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন মেইন উদ্দেশ্য হচ্ছে এখন নদীর দূষণ মুক্ত করা।

নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান আরো বলেন, আমি হতাশ। একটা ল্যাবটরি স্থাপন করতে না। ল্যাবটরির ইনচার্জ নেই। সে না থাকলেও তার পরিবর্ততে পরবর্তী লোক নেই। যন্ত্রপাতি কোথায়? যে প্রতিষ্ঠান ভালো সেটাই দেখেছি। সেখানেও আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি। আমরা যা বুঝার বুঝেছি।

এদিকে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের (সিইটিপি) ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ওয়েস্টেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট কোম্পানি। এসময় উপস্থিত থাকা কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাক আহমেদ বলেন, আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে ল্যাবের সমস্যা সমাধান হবে। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার সিইটিপির ২৫ হাজার কিউবিক মিটার তরল বর্জ্য পরিশোধের সক্ষমতা থাকলেও সেখানে ৩২ হাজার কিউবিক মিটার তরল বর্জ্য আসে। পাশাপাশি সিইটিপিতে সক্ষমতার চেয়ে বেশি তরল বর্জ্য পরিশোধের বিষয়টি সমাধানের জন্য ট্যাানারী মালিকসহ বাংলাদেশ ট্যার্নাস এসোসিয়েশনকে নির্দেশনা দিয়েছেন। যাতে অতিরিক্ত পানি ব্যবহার বন্ধ করেন। তবে সিইটিপির পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে।

পরে দুপুরে সাভার উপজেলার হলরুমে উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির সভায় যোগদান করেন তিনি। এসময় বিভিন্ন সমস্যা শুনে সাভারের নদী ও পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন মনজুর আহমেদ চৌধুরী ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের উপপরিচালক জনাব মোঃ আখতারুজ্জামান তালুকদার, উপপরিচালক ড. খ ম কবিরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক জনাব মো: তৌহিদুর রহমানসহ কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাভার নদী রক্ষা কমিটির সদস্যবৃন্দ, সাভার উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলামসহ গণমাধ্যমকর্মীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :